×

জাতীয়

তরুণদের হাত ধরে কৃষিতে বিপ্লব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২০, ১০:১০ এএম

তরুণদের হাত ধরে কৃষিতে বিপ্লব

যশোরের এমএম কলেজ থেকে অর্থনীতিতে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর করে ওষুধ কোম্পানিতে কিছুদিন চাকরি করার পর এবি ব্যাংকে অফিসার হিসেবে যোগ দেন মো. ইদ্রিস আলী। চাকরি নামক সোনার হরিণের অন্য অনেক লোভনীয় অফারও ছিল তার। কিন্তু উদ্যোক্তা হয়ে অনেক মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার নেশায় শুরু করেন কৃষি কাজ। নিজ এলাকা চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে ৩ বিঘা জমিতে গড়ে তোলেন পেয়ারা বাগান। বর্তমানে নতুন ২ বিঘাসহ ‘সুপার টেন থাই পেয়ারা’ বাগানের বিস্তৃতি দাঁড়িয়েছে ৭ বিঘায়। রয়েছে গরুর খামার, মরিচ, লাউ, কলা, ধনে পাতার কৃষি খামার। ইদ্রিস জানান, গত ৯ মাসে শুধু পেয়ারা বাগান থেকে আয় হয়েছে ১৬ লাখ টাকা।

তারুণ্যের ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশের কৃষি। পরিকল্পিত ও প্রযুক্তিনির্ভর চাষাবাদ দেশের অর্থনীতিতে যেমন ভ‚মিকা রাখছে তেমনি বেকার তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। চাকরির নির্ধারিত জগৎ ছেড়ে নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই রচনা করছেন তারা। তিন শিক্ষিত তরুণ কেরানীগঞ্জের কলাতিয়ায় গড়ে তুলেছেন বিষমুক্ত খামার ‘গ্রিনারি এগ্রো’। চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর দেলোয়ার জাহান মানিকগঞ্জে দেড় একর জায়গায় কয়েকজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তুলেছেন কৃষি খামার ‘প্রাকৃতিক কৃষি’। রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগে স্নাতকোত্তর সোহেল রানা নওগাঁর সাপাহারে গড়ে তুলেছেন সমন্বিত কৃষি খামার ‘রূপগ্রাম এগ্রো ফার্ম’।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর সাত তরুণ সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় গড়ে তুলেছেন এগ্রো ফার্ম। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক রুহুল চৌধুরী, ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের রিজওয়ানসহ ১৪ তরুণ-তরুণী সিলেট শহরে গড়ে তুলেছেন দুগ্ধ খামার ও পোলট্র্রি খামার। রাজধানীর বাড্ডাতে টার্কি খামার করে সাড়া ফেলেছেন প্রকৌশলী শাহীন হাওলাদার ও তরুণ উদ্যোক্তা মিরাজ হোসেন। জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করে ৬০ শতাংশ জমির ওপর টার্কি ফার্ম করেছেন ঝিনাইদহের শৈলক‚পার দেলোয়ার হোসেন। পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ফিলোসফিতে স্নাতকোত্তর মোহাম্মদ আলম হোসেন কৃষিফার্ম করেছেন নিজ বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার অমলপুর গ্রামে। দেশের প্রায় সব এলাকাতেই কৃষির নতুন নতুন খাতে আধুনিক প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী চিন্তা নিয়ে এগিয়ে আসছেন তরুণরা।

এ ব্যাপারে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক ভোরের কাগজকে বলেন, আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিশ্বজুড়ে কৃষি এখন পরিবর্তিত। কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণ, আধুনিককরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য শিক্ষিত তরুণ প্রজন্ম প্রয়োজন। আধুনিক, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারে উন্নত ফলনও একটি বড় বিষয়। তিনি বলেন, কৃষিতে ঋণ ও সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে; শিক্ষিত তরুণরা কর্মসংস্থানের নতুন ক্ষেত্র খুঁজতে গিয়ে কৃষিতে আত্মনিয়োগ করে সফলতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এই অগ্রগতি অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের কৃষি নতুন যুগে প্রবেশ করবে। কৃষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের কথা উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, কৃষকের উৎপাদন যেন অব্যাহত থাকে এ জন্য কৃষি, ফুল, ফল, মৎস্য, পোল্ট্রি, ডেইরি ফার্ম ইত্যাদি সব কর্মকাণ্ডে সহায়তা পাবেন।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ চাল ও মাছ উৎপাদনে চতুর্থ এবং আলু উৎপাদনে সপ্তম স্থানে। খাদ্যশস্য উৎপাদন বেড়েছে ৩০ দশমিক ৪৮ শতাংশ। সবজি চাষের জমি বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে প্রথম, আর উৎপাদন বৃদ্ধির হারে তৃতীয়। ফল উৎপাদনেও বিশ্বের শীর্ষে। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) মৎস্য সম্পদের অবদান ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। দেশে মৎস্য সম্পদ উৎপাদনের পরিমাণ ৪১ লাখ টন। আর এসব সাফল্যের ধারায় তরুণদের অংশগ্রহণ নতুন মাত্রা যোগ করছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। জানতে চাইলে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্টি কালচার বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. জামাল উদ্দীন ভোরের কাগজকে বলেন, কৃষিতে বিস্ময়কর সাফল্যের নজির গড়ছেন শিক্ষিত তরুণরা। কৃষকের ছেলেই কৃষক হবে এমন ধারণা থেকে আমরা বের হতে পেরেছি। সরকারের যুগোপযোগী পরিকল্পনা, পরিশ্রমী কৃষক এবং মেধাবী কৃষিবিজ্ঞানী ও সম্প্রসারণবিদদের যৌথ প্রয়াসে কৃষিতে বিপ্লব ঘটেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, কৃষিকাজে জড়িতদের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী। এছাড়া বাংলাদেশ পল্লী ও কর্মসংস্থান ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) অর্থায়নে কৃষির বিভিন্ন খাতে প্রায় ২২ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষি উদ্যোগকে অর্থায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে নতুন ধরনের ফসল ও পণ্য উৎপাদনে যুক্ত হয়েছেন প্রায় ৩ লাখ উদ্যোক্তা। তাদের গড় বয়স ৩৫। গোলমরিচ, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ, টমেটো, স্ট্রবেরি, মাল্টা, কমলা ও ড্রাগন ফলের মতো নিশ্চিত মুনাফা আছে এমন খাতগুলোতে তরুণরা বিনিয়োগ করছেন। গাইবান্ধার কৃষক ও কৃষি উদ্যোক্তা মো. আবদুল খালেক ভোরের কাগজকে বলেন, কৃষির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত হই ১৯৯৪ সালে স্নাতক পাস করার পর। ‘ক্ষমতায়ন’ নামে আমাদের একটি সংগঠনও রয়েছে। আমি এর একটি শাখার সভাপতি। নবীনদের সফল কৃষক হিসেবে গড়ে তুলতে বীজতলা প্রস্তুত থেকে শুরু করে বাজারজাত করা পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App