×

জাতীয়

চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন ৩ কারণে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২০, ১০:৩১ এএম

চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন ৩ কারণে
অদৃশ্য প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামনের সারির যোদ্ধা হলেন চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা। অসম এই যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন ৪৪ জন চিকিৎসক। এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৪৩৭ জন স্বাস্থ্যকর্মী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে চিকিৎসক ১ হাজার ৭২, নার্স ৯৩৮ জন এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী ১ হাজার ৪২৭ জন। চিকিৎসা দিতে গিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশে শতকরা ২ দশমিক ৫ জন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছে। বাংলাদেশে এই হার প্রায় সাড়ে ৪। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দিকে কোনো ধরনের ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই) ছাড়াই রোগী দেখেছেন চিকিৎসকরা। এরপর যখন পিপিই নিশ্চিত করার দাবি উঠে তখন সরবরাহ করা হয় নিম্নমানের পিপিই। অনেক ক্ষেত্রে পিপিইর পূর্ণাঙ্গ একটি সেট দেয়া হয়নি। বিষয়টি গণমাধ্যমে উঠে আসলে স্বাস্থ্যকর্মীদের দাবির বিষয়টি আরো জোরালো হয়। উঠে আসে এ নিয়ে স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির বিষয়টি। কিন্তু ততদিনে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে। জানা যায়, এত চিকিৎসকের আক্রান্ত ও মৃত্যুর কারণ নির্ধারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়। মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করে আইইডিসিআর। এখনো অনেকের তথ্য সংগ্রহ বাকি বলে ভোরের কাগজকে জানান প্রতিষ্ঠানের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এস এম আলমগীর। তবে সংশ্লিষ্টরা এর কারণ হিসেবে বলছেন, অপর্যাপ্ত এবং নিম্নমানের পিপিই সরবরাহ। এছাড়া চিকিৎসকদের পিপিই ব্যবহারের অনভিজ্ঞতায়ও (সঠিকভাবে পরা ও না খোলা) অনেক চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। \একই তথ্য উঠে এসেছে নাগরিক সংগঠন বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ করোনা ভাইরাস মহামারিতে সম্মুখসারির স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর করা গবেষণায়ও। স্বাস্থ্যকর্মীদের সাক্ষাৎকারভিত্তিক এই গবেষণায় বলা হয়েছে ২৬ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা দানকারী মে মাস পর্যন্ত পিপিই পাননি। এছাড়া স্বাস্থ্যকর্মীদের পিপিই ব্যবহারের প্রশিক্ষণও ছিল না। ২৪ শতাংশ উত্তরদাতা জানান, তারা তখন পর্যন্ত পিপিই পাননি। এদের মধ্যে ২৩ দশমিক ১ শতাংশ এমবিবিএস চিকিৎসক, ৫০ শতাংশ নার্স ও মিডওয়াইফ এবং ১২ দশমিক ৫ শতাংশ প্যারামেডিকস। তবে সংস্থাটি জানায়, এপ্রিল মাসের জরিপের চেয়ে পিপিই বিতরণে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল দাবি করেন, নিম্নমানের পিপিই সরবরাহ করা এবং সময়মতো প্রয়োজনীয় চোখ রক্ষাকারী চশমা না দেয়ায় এত সংখ্যক চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন। পিপিই ব্যবহারে চিকিৎসকদের অনভিজ্ঞতার বিষয়টি মানতে রাজি নন ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী। তিনি জানান, চিকিৎসকরা খুব ভালো করে পিপিইর ব্যবহার জানেন। কিন্তু সাধারণ কাপড় কিংবা ছাতার কাপড় দিয়ে বানানো পিপিই দেয়া হয়েছে চিকিৎসকদের। এসব দিয়ে করোনা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব নয়। চিকিৎসকরা অরক্ষিত অবস্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা দিয়েছেন। বিএমএর সাবেক সভাপতি ও জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক ডা. রশীদ ই মাহবুব মনে করেন, চিকিৎসকরা এভাবে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর খবর খুবই দুঃখজনক। করোনা সমস্যা যদি দীর্ঘমেয়াদি হয় আর এই অবস্থা চলতে থাকে তাহলে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বিপর্যয় নেমে আসবে। চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হওয়ার সঠিক কারণ বের করে তাদের সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এদিকে, এক ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস এন্ড রেস্পন্সিবিলিটিজ (এফডিএসআর) এ রকম সময়ে মানুষের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে ও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও কর্মক্ষেত্রকে নিরাপদ করতে ১০ দফা দাবি তুলে ধরে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মানসম্মত পিপিই প্রদান, কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকসহ সব স্বাস্থ্যকর্মীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘চিকিৎসকসহ সব স্বাস্থ্যকর্মী সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত চিকিৎসকদের প্রণোদনা অর্থ দ্রুত প্রদান নিশ্চিত করা। এদিকে করোনাযুদ্ধে মেধাবী চিকিৎসকদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শ কমিটি। কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, একের পর এক অধ্যাপক, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং তরুণ চিকিৎসকরা জাতিকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন। তবু চিকিৎসক যোদ্ধারা অমিত সাহসী বীরদের মতো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। বিপুল সংখ্যক চিকিৎসকসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী, পেশাজীবী এবং দেশের লক্ষাধিক মানুষ কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে জীবনের সঙ্গে লড়াই করছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App