×

জাতীয়

অভিযোগ গঠন ও বিচারে সময় রক্ষা হচ্ছে না

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২০, ১০:০৪ এএম

অভিযোগ গঠন ও বিচারে সময় রক্ষা হচ্ছে না

প্রতীকীি চবি

মানবপাচার আইন অনুযায়ী ৩ মাসের মধ্যে অভিযোগ গঠন আর ৬ মাসেই বিচার কার্যক্রম শেষ করার কথা। এখন পর্যন্ত এ-সংক্রান্ত আইনে ৬ হাজার ১৩৪টি মামলা হয়েছে, নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ২৩৩টি মামলা। গত কয়েক বছরে মানবপাচার অভিযোগের ৮ হাজার আসামি থাকলেও তাদের উল্লেখযোগ্য অংশের শাস্তি হয়নি। এছাড়া আইনে অপরাধ জামিন অযোগ্য হলেও আসামিরা জামিন পেয়ে আবারো পাচারে যুক্ত হচ্ছে। ফলে মানবপাচারের ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

২০১৫ সালে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকা থেকে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় পাচারের হিড়িক পড়ে। নৌকাডুবিতে লাশ ভাসতে থাকে বঙ্গোপসাগরে, গণকবর ও কঙ্কাল পাওয়া যায় থাইল্যান্ডের বনে-জঙ্গলে। বাংলাদেশ থেকে মানবপাচারের ইস্যুটি তখন আন্তর্জাতিক মিডিয়ার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করে। দালাল চক্রের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হতে থাকে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে। প্রশাসন যৌথ অভিযানে নেমে অনেক পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু কিছুদিন পরই থমকে যায় মামলার কার্যক্রম। এ সুযোগে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাদের বেশির ভাগই জামিনে ছাড়া পেয়েই আত্মগোপনে চলে যায়। কয়েক মাস পর আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে এসে আবারো মানবপাচারে জড়িয়ে পড়ে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ব্রুনাইয়ে মানবপাচারের অভিযোগে ঢাকার শাহবাগ, মতিঝিল, বাড্ডা, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের মধুপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে মামলা করেন ভুক্তভোগীরা। চক্রের সদস্যদের মধ্যে আবদুর রহিম ওরফে রহিম বস, ইসমাইল সরদার ও শাহিন মাতবর নামে ৩ জনকে গত মার্চ মাসের শুরুতে গ্রেপ্তার করেছিল সিআইডি। চক্রটির বিরুদ্ধে ৩ হাজারের বেশি নিরীহ মানুষকে ব্রুনাইয়ে পাচারের অভিযোগ করা হয়। এ ৩ জনসহ ৭ জনের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছিল। সিআইডি এ মামলা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্তে নামে। একপর্যায়ে উঠে আসে মানবপাচারের অভিযোগে পাসপোর্ট বাতিল হওয়া আরেক দালাল মেহেদি হাসান বিজনের নাম। তবে বিজনকে আর ধরতে পারেননি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। কিছুদিন যেতে না যেতেই থমকে যায় অভিযান কার্যক্রম। মানবপাচারের মাধ্যমে বিপুল অর্থবৈভবের মালিক বনে যাওয়া বিজন এখন বাতিল হওয়া পাসপোর্ট ফিরে পেতে তৎপর। ফের ব্রুনাইয়ে যাওয়ার জন্য তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে নানা মাধ্যমে যোগাযোগ করছেন বলে জানা গেছে।

সম্প্রতি লিবিয়ার মিজদা শহরে মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যরা ২৬ বাংলাদেশিসহ ৩০ জন অভিবাসীকে গুলি করে হত্যার পর মানবপাচার ইস্যুটি ফের সামনে আসে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভুক্তভোগীরা মামলা করার পর ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে দালালচক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে থাকে। লিবিয়ায় মানবপাচারের বিষয়টি নতুন নয়। মূলত লিবিয়া বা তিউনিসিয়াকে রুট হিসেবে ব্যবহার করে নৌকা বা ট্রলারে দালালচক্র ইতালিসহ ইউরোপের দেশগুলোতে পাচার করে থাকে। ঝুঁকিপূর্ণ এ যাত্রায় ভ‚মধ্যসাগরে মাঝে মধ্যেই অভিবাসীদের সলিল সমাধির খবর আসে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়। ২০১৯ সালের মে মাসে লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে ভ‚মধ্যসাগরে তিউনিসিয়ার জলসীমানায় ৭৫ জন অভিবাসীবাহী নৌকা তলিয়ে যায়। তাৎক্ষণিক ৬০ জনের মৃত্যু ঘটে। তার মধ্যে ৩৯ জনই ছিলেন বাংলাদেশি। ভুক্তভোগীদের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তখন র‌্যাব বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজন দালালকে গ্রেপ্তার করে। র‌্যাবের তদন্তে বেরিয়ে আসে দেশের অভ্যন্তরে ১০-১৫টি শক্তিশালী চক্র গড়ে উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার কথা বলা হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে। কিন্তু কিছুদিন পর থেকেই নিস্তেজ হয়ে পড়ে অভিযান।

২০১২ সালের ‘মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে’ সঙ্ঘবদ্ধভাবে মানবপাচারের জন্য মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও সর্বনিম্ন ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং অন্যূন ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান আছে। মানবপাচার প্রতিরোধ দমন আইনে বিচারের জন্য বিশেষ আদালত বা ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান করার ৮ বছর পর চলতি বছরের গত ৯ মার্চ ৭ বিভাগে ৭টি ট্রাইব্যুনাল গঠনের আদেশ হয়। একই সঙ্গে বিচারকও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মামলায় গতি আনতে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিলেও এখনো ট্রাইব্যুনালের কাজ শুরু হয়নি। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হবে বলে আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম বলেন, মানবপাচার মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এ অপরাধের বিচার না হলে অপরাধীরা আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠে। মূল পাচারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হলে অপরাধ কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, এ আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে যারা মানবপাচার করছে তাদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। এটি করা গেলে কমে আসবে মানবপাচার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App