×

অর্থনীতি

বাজেটের পরিসংখ্যানে আরো মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ জুন ২০২০, ০৮:১৭ পিএম

বাজেটের পরিসংখ্যানে আরো মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন

সাবেক হোসেন চৌধুরী, নাহিম রাজ্জাক ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

বাজেটের পরিসংখ্যানের প্রতি আরেকটু যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সভাপতি ও সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী। অর্থমন্ত্রী এ বাজেটকে জীবন বাঁচানো ও জীবিকা নিশ্চিত করার বাজেট বলে আখ্যা দিয়েছেন। এজন্য তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, প্রতিবছর বাজেটে যে পরিসংখ্যান দেয়া হয় তার প্রতি আমাদের আরো মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি। এবারের বাজেটকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে একদিকে কভিড-১৯ এর আগুন নেভানোর চেষ্টা করা; অন্যদিকে ভবিষ্যতের যে চ্যালেঞ্জগুলো আছে সেগুলো কীভাবে মোকাবেলা করবো সে বিষয়েও পরিকল্পনা করা। শনিবার (২০ জুন) ‘সিপিডি বাজেট সংলাপ ২০২০’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে এসব কথা জানানো হয়। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রতিবেদন তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। অনুষ্ঠানে আরো অংশ নেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ, আইপিইউ সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী, নাইম রাজ্জাক এমপি, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহেমদ, পলিসি রিচার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান হাবিব মনসুর এবং মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের(এমসিসিআই) প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার নিহাদ কবীর প্রমুখ। আলোচনায় সাবের হোসেন চৌধুরী আরো বলেন, প্রতি বছর বাজেটে কত টাকা বরাদ্দ হলো তাই নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু এই বরাদ্দের গুণগত মান নিয়ে ভাবা হয় না। সরকার প্রস্তাবিত বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) একটা লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে ঠিকই। কিন্তু এ জিডিপি অর্জনে সরকারের চেষ্টা সীমাবদ্ধ থাকবে না। আমাদের জিডিপির সুফল প্রান্তিক মানুষের কাছেও পৌঁছে দিতে হবে। এ লক্ষ্য নিয়েই সরকার ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নে মনোযোগী হবে বলে মনে করেন তিনি। আমাদের আয়-ব্যয় ও ভোগে বৈষম্য রয়েছে উল্লেখ করে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, এই বৈষম্য দূরীকরণে বাজেটে সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনাও রয়েছে। কভিড- ১৯ আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে জটিল চ্যালেঞ্জ। অতীতে এমন চ্যালেঞ্জে পড়েছি বলে মনে হয় না। তবে এ থেকে আবার নতুনভাবে আমাদের যাত্রা শুরু করার যে অপরচুনিটিগুলো আসছে, সেগুলো আমরা কীভাবে কাজে লাগাতে পারি তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। সাবের হোসেন চৌধুরী মনে করেন একটা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে গেলে সীমাবদ্ধ আয় থেকে অন্য খাতে কমাতে হবে। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের এই আয়-ব্যয়ের সমন্বয় করেই সামনে এগোতে হবে। তবে সরকারের এখন মূল লক্ষ্যই হচ্ছে মানুষকে বাঁচাতে হবে। অনুষ্ঠানে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সরকার যে বাজেট দিয়েছে, সেখানে মানুষের মনোজগৎকে বিবেচনায় আনা হয়নি। বরং বিশেষ গোষ্ঠীকে সুযোগ দিতেই এ বাজেট দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, করোনা সারাবিশ্বকেই গ্রাস করেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব দেশই নিজেদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনছে। এ কারণে বাংলাদেশকেও ভিন্নভাবে চিন্তা করতে হবে। প্রস্তাবিত বাজেট পরিবর্তনের এখনও সময় আছে জানিয়ে সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এবারের বাজেট যেন রুটিনের ‘হ্যাঁ জয়যুক্ত হয়েছে’ না হয়। বিভিন্ন সংস্থা ও বিশেষজ্ঞরা প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে পরামর্শ মতামত দিচ্ছেন; এগুলো যেন যোগ করা হয়। বাজেটকে বাস্তবসম্মত করার দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর বলেন, বাজেট যেন জনবান্ধবমুখী হয়। সাধারণ মানুষ যেন উপকার পায়। কারণ ইতোমধ্যে দরিদ্রের সংখ্যা বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে চলমান সংকট মোকাবিলায় ব্যাংক, পুঁজিবাজার ও রাজস্ব- এ তিনটি খাতের সংস্কারের প্রস্তাব থাকা দরকার। ড. আহসান হাবিব মনসুর বলেন, এনবিআরের কাঠামোকে সংস্কার করতে বলেছিলাম। কিন্তু তা বাস্তবে করা হয়নি। ফলে রাজস্ব আদায় হয়নি। সামনেও আদায় সম্ভব না। এ কারণে সরকার এখনি ধার-দেনা করে চলছে। এইভাবে চললে আগামী ৬ মাস পর টাকা ছাপিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন দিতে হবে। এটা হবে দুর্ভাগ্যজনক। তবে এ সময় এখনও আসেনি। কিন্তু সময় আসতে বেশি দূরে নয়। নতুন অর্থবছরের (২০২০-২১) প্রস্তাবিত বাজেটের কিছু ভালো এবং কিছু খারাপ দিক রয়েছে বলে উল্লেখ করে সিপিডি। প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যয়ের অগ্রাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলে সিপিডি জানিয়েছে, যে সময় স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সরকারের বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন, সে সময় শেয়ার ও ইক্যুইটিতে বিনিয়োগ বাবদ ২৭ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা, আর কোভিড মোকাবিলায় মাত্র ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এজন্য স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ আরো বাড়িয়ে পুনঃবাজেটের প্রস্তাব দিয়েছে সিপিডি। সংস্থাটি বলছে, অপ্রদর্শিত আয় ১০ শতাংশ কর দিয়ে বৈধ করার সুযোগ দেয়াটা অনৈতিক যা অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিকভাবে কাম্য নয়। মানি লন্ডারিংয়ের ক্ষেত্রে ধরা পড়লে আগে জেল জরিমানার বিধান থাকলেও এবারের বাজেটে ৫০ শতাংশ জরিমানা আদায়ের কথা বলা হয়েছে। এটাও এক ধরনের অব্যাহতি বলে মনে করে সিপিডি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App