×

স্বাস্থ্য

তালিকার অপেক্ষায় সবাই

Icon

nakib

প্রকাশ: ২০ জুন ২০২০, ১২:০৩ পিএম

তালিকার অপেক্ষায় সবাই

করোনা রোগী/ফাইল ছবি।

ঘোষণার এক সপ্তাহ পরও চূড়ান্ত হয়নি রেড জোন আগের তালিকা প্রত্যাহার করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ত্রাণ সংশয়ে লকডাউনে আগ্রহী নন কাউন্সিলররা

করোনার সংক্রমণ যেখানে বেশি সেখানে ‘রেড জোন’ করা হবে- এমন ঘোষণার এক সপ্তাহ পরও কোন কোন এলাকায় কীভাবে এর বাস্তবায়ন হবে সেই রূপরেখা তৈরি হয়নি। এমনকি কয়েক দিন আগে সিটি করপোরেশনে রেড জোনের যে তালিকা পাঠিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সেটিও প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। মোটকথা, কোথায় কোথায় রেড জোন হবে তার তালিকাই এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। অথচ রেড জোন নিয়ে গণমাধ্যমে অনবরত বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন, পৌরসভাসহ স্থানীয় প্রশাসন রেড জোন বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে তালিকা না দেয়ায় তারা কাজ করতে পারছে না। সব মিলিয়ে রেড জোনের তালিকা পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন সবাই। এরকম পরিস্থিতিতে গত দুদিন ধরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাসহ সিটি করপোরেশনের মেয়রদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সূত্র জানিয়েছে, রেড জোনের তালিকা আসার সঙ্গে সঙ্গে যাতে বাস্তবায়ন করা যায় তার কৌশল নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে ওই বৈঠকে।

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম গতকাল শুক্রবার ভোরের কাগজকে বলেছেন, সংক্রমণ যেখানে বেশি সেখানে রেড জোন হবে। কিন্তু কোথায় কোথায় সেই রেড জোন হবে এর তালিকাই আমরা এখন পর্যন্ত পাইনি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিটি করপোরেশনে যে তালিকা পাঠিয়েছিল সেটিও প্রত্যাহার করে নিয়েছে। রেড জোনের নতুন তালিকা এখনো আমাদের কাছে পাঠানো হয়নি। তালিকা না আসলেও আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যখনই তালিকা পাঠাবে তখনই তা বাস্তবায়ন করা হবে বলে তিনি জানান। এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সরকারি বাসভবন থেকে দেয়া ভিডিও বার্তায় বলেছেন, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেশে জোনভিত্তিক লকডাউনের সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর পরই দ্রুত এবং কার্যকরভাবে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে, প্রতিষ্ঠা করতে হবে সুসমন্বয়। যেসব এলাকা লকডাউন করা হবে, সেসব এলাকায় জনসাধারণকে ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলারও আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে তালিকা পাওয়ার পর রেড জোন হিসেবে ঘোষিত এলাকায় লকডাউন বাস্তবায়নের জন্য গত রবিবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে চিঠি দেয়া হয়েছিল কাউন্সিলরদের। আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র বৈঠক করে বলেছিলেন, তালিকা পাওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রেড জোন বাস্তবায়ন হবে। ওইসময় আরো বলা হয়েছিল, রেড জোন ঘোষিত এলাকাকে কঠোরভাবে লকডাউন করতে হবে। এজন্য তারা যেন স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তি, হাউসিং সোসাইটির নেতারা, এনজিও প্রতিনিধি ও প্রশাসনের লোকদের

সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করেন। যাতে সরকারের সিদ্ধান্ত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রেড জোনগুলোতে লকডাউন শুরু করা যায়। কিন্তু এখনো অনেকেই সে সমন্বয় কমিটি গঠন করেননি।

এরকম পরিস্থিতিতে লকডাউন বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পৃক্তরা বলেছেন, যেভাবে জোনভিত্তিক লকডাউনের আওয়াজ উঠেছিল সেটা কার্যত ঝুলে গেছে। কাউন্সিলরদের অনেকেই লকডাউনের জন্য যেসব প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন, সেটা নেননি বা নেয়ার প্রয়োজনও মনে করেননি। কারণ ওয়ার্ডে লকডাউন দিলে প্রয়োজনীয় ত্রাণ সহায়তা দিতে হবে। কিন্তু ত্রাণ পাবেন কিনা- এনিয়ে তারা চিন্তিত। এই কারণেই লকডাউন নিয়ে কাউন্সিলরদের আগ্রহ নেই। এ জন্যই অনেক ওয়ার্ডে লকডাউন বাস্তবায়নের কমিটিও গঠন করেননি কাউন্সিলররা।

এরআগে গত শনিবার রাজধানীর ৪৫টি এলাকাকে রেড জোন ঘোষণার পরও গতকাল পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঢাকার দুই সিটির কোনো এলাকাকে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে দিতে পারেনি, যে ওই এলাকায় লকডাউন বাস্তবায়ন করতে হবে। ফলে রাজধানীর রেড জোনগুলোতে কার্যত লকডাউন কার্যক্রম ঝুলে গেছে বলে মনে করছেন অনেকেই।

গত ১৫ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপন জারি করে জানায়, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হার বেশি, সেসব এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা করে লকডাউন করা হবে। লকডাউন চলাকালে ওই এলাকায় সাধারণ ছুটি থাকবে। দেশের বাকি এলাকার জন্য এখনকার মত স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে গণপরিবহনসহ সব চালু থাকবে।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, যেসব এলাকায় প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ৬০ জন মানুষ কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, সেগুলোকে রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করে লকডাউনের আওতায় আনা হবে। আমরা দেখেছি, দেশে সংক্রমণের বিস্ফোরণ হয়নি এবং প্রতিদিনের মৃত্যুহার এখনো ৫০-এর কাছাকাছিই আছে। সে কারণে আমাদের মনে হয়েছে- আমরা যদি এখন জোনভিত্তিক লকডাউন করতে পারি, তাহলে হয়তো এটি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

তিনি জানান, যেখানে রেড জোন হবে সেই এলাকাকে ব্লক করা হবে। ওই এলাকায় সাধারণ ছুটি থাকবে। রেড জোনে লকডাউন বাস্তবায়ন করবে সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এবং জেলা প্রশাসন। রেড জোনে দেয়া লকডাউন ১৪ থেকে ২১ দিনের জন্য কার্যকর হবে। সেখানে কোভিড-১৯ পরীক্ষার বুথ বসানো হবে। চিকিৎসক ও অ্যাম্বুলেন্স থাকবে। খাবার, ওষুধ ও বাজারের সব ব্যবস্থা পরিপূর্ণভাবে ভেতরেই করা হবে। সবদিক থেকে ওই এলাকাটিকে ঘিরে দেয়া হবে; যাতে মানুষ বাইরে বের হতে না পারে এবং বাইরে থেকে কেউ ঢুকতে না পারে। কোন কোন এলাকা লকডাউন করা হবে সেটি এরইমধ্যেই চূড়ান্ত হয়েছে এবং এ বিষয়ে দ্রুতই একটি সমন্বিত ঘোষণা দেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App