×

মুক্তচিন্তা

চিরসংগ্রামী সংস্কৃতি সারথী কামাল লোহানী’র বিদায়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ জুন ২০২০, ০৭:০১ পিএম

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক ও সুপরিচিত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী চলে গেলেন। গতকাল শনিবার সকালে বেসরকারি একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। কামাল লোহানীর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভোরের কাগজ পরিবারও শোকাহত এবং পরিবার-পরিজনের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। স্বাধীনতা-উত্তরকালের স্বাধীন সাংবাদিকতার একনিষ্ঠ মানুষ কামাল লোহানী। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তীকালের সামরিক শাসন কিংবা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ প্রতিটি সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে তার অংশগ্রহণ ছিল অবধারিত। কয়েকটি পত্রিকার সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সমাজে বিরাজমান অন্যায়, অনিয়ম ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সব সময় সরব ছিলেন, উচ্চকণ্ঠী ছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন পর্যায়ে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়ার পাশাপাশি স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে দেশের প্রগতিশীল আন্দোলনের অগ্রণী সৈনিকের ভ‚মিকা পালন করেছেন। যিনি কালের পরিক্রমায় নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছেন। ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে কামাল ভাইয়ের ভ‚মিকা ছিল অত্যন্ত গৌরবজনক। তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ছিলেন। দেশের প্রথিতযশা সাংবাদিক কামাল লোহানী স্বাধীন বাংলা বেতারের সংবাদ বিভাগের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫ ডিসেম্বর কামাল লোহানী ঢাকা বেতারের প্রধান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এর আগে ১৯৫৩ সালে নুরুল আমিনসহ মুসলিম লীগ নেতাদের পাবনা আগমনের প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলায় পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে কামাল লোহানী ও তার অন্য সহযোদ্ধারা গ্রেপ্তার হন। ১৯৫৫ সালে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দীন আহমদ প্রমুখের সঙ্গে একই জেলকক্ষে বন্দিজীবন কাটান। তখন তিনি বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে আসেন। স্বাধীনতার পরও দেশের সংকটে তার ভ‚মিকা অনন্য। ’৭১-এ মানবতাবিরোধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার থেকেছেন। ধর্মীয় সম্প্রদায় ও জাতিগোষ্ঠীর নিপীড়নের বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার থেকেছেন। সাগর-রুনি, ত্বকী, তনুসহ বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সামনে থেকেছেন। রাজপথে নেমেছেন। মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছেন। মিছিল করেছেন। আন্দোলনে সাহস জুগিয়েছেন। আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি দুহাত ভরে লিখেছেন। তার লেখা প্রকাশিত বইগুলো হচ্ছে- ‘আমাদের সংস্কৃতি ও সংগ্রাম’, ‘আমরা হারবো না’, ‘সত্যি কথা বলতে কি’, ‘লড়াইয়ের গান’, ‘সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও নৃত্যশিল্পের বিস্তার’, ‘মুক্তিযুদ্ধ আমার অহংকার’ উল্লেখযোগ্য। প্রকাশিতব্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘ভাষা আন্দোলনের কথকতা’, ‘সাংবাদিকতার সাতকাহন’, ‘কেউ ভোলে না কেউ ভোলে’। এছাড়া তার ঘটনাবহুল সাংবাদিক জীবন সম্পর্কে তার নিজের কথা লেখ্যরূপে প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ প্রকাশ করেছে ‘অগ্রজের সঙ্গে একদিন’। তিনি বর্তমানে স্মৃতিকথা লেখায় নিজেকে ব্যাপৃত করেছেন। ২০০৭ সালের ২৪ নভেম্বরে তার দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনের নীরব অনুপ্রেরণাদাত্রী স্ত্রী দীপ্তি লোহানীর প্রয়াণে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন কামাল লোহানী। শরীরের বিভিন্ন অসুস্থতাও জেঁকে বসে। এরপরও সভা-সেমিনারে ছুটে যান। প্রতিনিয়ত ভোরের কাগজসহ বেশ কয়েকটি দৈনিকে দেশের নানা সমকালীন ইস্যু নিয়ে লিখেছেন। কামাল লোহানী সাংবাদিক, সংস্কৃতিসেবী এবং দেশপ্রেমিক পুরুষ হিসেবে অনন্য। তার তুলনা কেবল তিনিই। তিনি দেশের সাধারণ জনগণের কথা ভাবতেন এবং তার জীবনের সব কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষের মঙ্গলে নিয়োজিত ছিলেন। এই পূর্ণ মানুষটির প্রতি আমাদের প্রগাঢ় শ্রদ্ধা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App