×

আন্তর্জাতিক

শান্তিপূর্ণ সমাধান চায় বাংলাদেশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২০, ০৯:৩৬ এএম

শান্তিপূর্ণ সমাধান চায় বাংলাদেশ

প্রতীকী ছবি

ভারত ও চীন উভয়েই বাংলাদেশের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু। নিকটতম প্রতিবেশী ও মহান মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম বন্ধু। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কও গভীর। চীনও বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার। বর্তমান করোনা মহামারিতে বিরোধপূর্ণ লাদাখ সীমান্ত নিয়ে সংঘাতে লিপ্ত রয়েছে ভারত ও চীন। উভয়পক্ষে হতাহতের ঘটনায় উত্তেজনাও ছড়িয়ে পড়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিনষ্টের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে দুই বন্ধুপ্রতীম বৃহৎ দেশের মধ্যে আর সহিংসতা চায় না বাংলাদেশ। বাংলাদেশ আশা করে, দেশ দুটি নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির শান্তিপূর্ণ মীমাংসা করতে সক্ষম হবে। অবশ্য দুদেশের এই সীমান্ত সমস্যা বড় ধরনের কোনো সংঘাতে গড়াবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের দাবি, স্নায়ুযুদ্ধের পাশাপাশি ভারত-চীনের বাণিজ্যিক সম্পর্কও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুদেশই নিজেদের বাণিজ্যিক স্বার্থে যুদ্ধ থেকে বিরত থাকবে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, লাদাখ সীমান্তে ভারত-চীন সংঘর্ষে প্রাণহানির পর থমথমে অবস্থা দুদেশের সীমান্তে। এরই মধ্যে ওই এলাকায় সামরিক মহড়া করেছে বেইজিং। পিপলস লিবারেশন আর্মির পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলের মুখপাত্র ঝ্যাং শুইলিকে উদ্ধৃত করে চীনের সরকারি পত্রিকা পিপলস ডেইলি লিখেছে, ভারতীয় সৈন্যরা তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে আবারও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে বেআইনি কাজ চালাচ্ছিল এবং ইচ্ছে করে প্ররোচনা দেয়, আর চীনা বাহিনীকে আক্রমণ করে। এতে দুপক্ষের মধ্যে ভয়ংকর শারীরিক সংঘাত হয় এবং হতাহত হয়। বিক্ষোভ হয়েছে ভারতের জম্মুসহ বিভিন্ন শহরে। শহীদ সেনাদের রক্ত বৃথা যেতে দেয়া হবে না এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারত শান্তি চায় মন্তব্য করে টিভিতে এক ভাষণে মোদি বলেন, কিন্তু কেউ প্ররোচনা দিলে, যে কোনো পরিস্থিতিতে এর উপযুক্ত জবাব দিতেও তারা প্রস্তুত।

তবে ভারত-চীন সীমান্তে সৃষ্ট সংকট আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব বলে মনে করছে বাংলাদেশ। জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ভোরের কাগজকে বলেন, ভারত-চীন উভয়েই আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। উন্নয়নের জন্য শান্তি ও স্থিতিশীলতা খুব প্রয়োজন। সব ধরনের সমস্যা আলোচনার মাধমে সমাধান সম্ভব। এ জন্য আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানে আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দুই দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি।

এদিকে ভারত-চীন সীমান্ত বিরোধ নতুন কোনো বিষয় নয়; কিন্তু করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যে এই সংকট শুরু হওয়ায় নতুন করে প্রশ্ন ওঠেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন বেশ কিছুদিন ধরেই বিশ্বে নিজেদের প্রভাব বলয় বিস্তারের চেষ্টা করে চলেছে। করোনা ভাইরাস মহামারিতে সারা বিশ্ব যখন ব্যস্ত, তখন বেইজিং এটাকে একটা লক্ষ্য হাসিলের সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করছে। শুধু সীমান্তে চাপ তৈরি নয়, হংকংয়ে সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠায় আরো কঠোর পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে চীন। তাদের দাবি, ২০০৮ সালের বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার পরও সংকটে পড়া দেশগুলোকে ঋণ সাহায্য দিয়ে অনেকটা একইভাবে বেইজিং তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছে। অন্যদিকে লাদাখ সীমান্তের গালোয়ান উপত্যকায় গত কয়েক বছর ধরে ভারত যেভাবে রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামো তৈরি করছে তাতে চীন সত্যিই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে এবং ভারতের এই কর্মকাণ্ড চীন আর মেনে নিতে রাজি নয়।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, সীমান্ত নিয়ে ভারত-চীন যুদ্ধ দীর্ঘদিনের। অরুণাচল নিয়েও অনেক সমস্যা হয়েছে। লাদাখ নিয়ে ভারতের অনেক পরিকল্পনা। এটি চীনের মনে ভয় ধরিয়েছে। দুদেশেই এ ক্ষেত্রে তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গোষ্ঠীকে শক্তি দেখানো, উজ্জীবিত করা এবং অন্যদিকে কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও নিজেদের অস্তিত্ব জানানোর জন্য ৬/৭ বছর ধরে চলে আসা স্নায়ুযুদ্ধকে বড় করে তুলেছে। দুদেশের সংঘাতে আঞ্চলিক কোনো প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন না এই আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক। তার মতে, নিজ দেশের সমর্থকদের উত্তেজনাকে প্রশ্রয় দেয়াই দুই দেশের কাজ। এতে বড় ধরনের কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ ভারত-চীন উভয়েরই ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। নিশ্চয়ই তারা তা নষ্ট করতে চাইবে না।

ভারত-চীন সংঘাত ভয়াবহ রূপ নেবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের দাবি, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে চীন-ভারত উভয় দেশের অর্থনীতি মারাত্মক চাপে পড়েছে। ভারত-চীন কেউই সেখানে উত্তেজনা বৃদ্ধি করতে চাইবে না। চীন ইতোমধ্যে উত্তেজনা না বাড়ানোর প্রচেষ্টা চালাবে বলেছে। জানতে চাইলে ক‚টনীতিবিদ তৌহিদ হাসান ভোরের কাগজকে বলেন, দুই বৃহৎ প্রতিবেশীর সংঘাতে আঞ্চলিক শান্তি বিনষ্ট হবে। তবে আমার মনে হয়, এই সংঘাত সর্বাত্মক রূপ নেবে না। চীন-ভারতের সীমান্ত সংঘাত লেগেই থাকে। এবার একটু বেশিই সিরিয়াস হয়েছে। উল্লেখযোগ্য মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। মহামারিতে বিশ্বযুদ্ধও হয়েছে মন্তব্য করে তৌহিদ হাসান বলেন, স্পেনিশ ফ্লু চলাকালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ হয়েছিল। তখনও বিশ^যুদ্ধ থেমে থাকেনি। করোনা হয়তো তাদের সংঘাত থামাবে না। তারা নিজেদের স্বার্থ চিন্তা করেই সংঘাত পরিহারের সিদ্ধান্ত নেবে।

তবে বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসে দুই পরাক্রমশালী দেশের এ ধরনের আচরণ দায়িত্বহীনতার পরিচয় বলে মন্তব্য করেছে অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, দুদেশেরই আরো অনেক বেশি সংবেদনশীল হওয়া প্রয়োজন ছিল।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App