×

জাতীয়

করোনার মধ্যেই রাজধানীর ২৪ স্থানে বসছে পশুর হাট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২০, ০৯:৪৫ এএম

করোনার মধ্যেই রাজধানীর ২৪ স্থানে বসছে পশুর হাট

প্রতীকী ছবি

জীবনঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই ঈদুল আজহায় কুরবানির জন্য ঢাকার ২৪টি স্থানে পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। এরইমধ্যে হাট ইজারার দরপত্রও আহ্বান করা হয়েছে। এবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) ১০টি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) ১৪টি হাট বসবে। পশুরহাটগুলোতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে থাকবে বিশেষ সতর্কতা। বেচাকেনার ক্ষেত্রে থাকছে নানা বিধি-নিষেধ। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার ওপরও জোর দেয়া হবে এমনটিই বলা হচ্ছে দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, পশুর হাটগুলোতে আগত ক্রেতা-বিক্রেতা এবং বিক্রির জন্য আনা পশুগুলোর স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। তাই স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে গতানুগতিক নিয়ম থেকে বের হয়ে অনলাইনে পশু কেনাবেচার ওপর জোর দেয়া উচিত। তাহলে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা অনেকটাই ঠিক থাকবে।

ডিএনসিসিতে একটি স্থায়ী ও নয়টি অস্থায়ী হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গাবতলীর স্থায়ী হাট বাদে যে নয়টি স্থানে হাট বসানো হবে সেগুলো হলো উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের ১ ও ২ নম্বর ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা, ভাটারা সাইদগর, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের খেলার মাঠ, বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং মাঠ (আফতাবনগর), মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী সড়ক সংলগ্ন পুলিশ লাইনের খালি জায়গা, মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা, উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরের বৃন্দাবন থেকে বিজিএমইএ পর্যন্ত খালি জায়গা, কাওলা শিয়াল ডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা এবং ভাসানটেক রাস্তার খালি জায়গা।

ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক ভোরের কাগজকে বলেন, এবার গাবতলীর স্থায়ী পশুর হাটসহ মোট ১০টি স্থানে কুরবানির পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরইমধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। অনেকেই দরপত্র জমা দিয়েছেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় আরো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে প্রত্যেকটি হাটে বিভিন্ন টিম থাকবে। যারা স্বাস্থ্যবিধি মানা ও সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

এদিকে, গত ৭ জুন ডিএসসিসির পশুর হাটের ইজারা বিষয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা থেকে এবার ডিএসসিসির ১৪টি স্থানে পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত হয়। এরইমধ্যে হাটগুলোর ইজারার জন্য দরপত্রও আহ্বান করা হয়েছে। ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. এমদাদুল হক ভোরের কাগজকে বলেন, ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী ঢাকার মানুষ যেন পবিত্র ঈদুল আজহায় তাদের পছন্দ মতো পশু কুরবানি করতে পারে। সেজন্য আমরা করোনা প্রাদুভাবের মধ্যে এবারো ১৪টি স্থানে অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পশু কেনাবেচার ক্ষেত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েরই স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা বিবেচনা করছি। হাটে যাতে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা যায়, সে ব্যবস্থাও করব।

এবার দক্ষিণে যেসব হাটের ইজারা আহ্বান করা হয়েছে, সেগুলো হলো উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজার সংলগ্ন মৈত্রী সংঘের মাঠ ও আশপাশের খালি জায়গা, ঝিগাতলা-হাজারীবাগ মাঠসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, শ্যামপুর বালুর মাঠসহ আশপাশের খালি জায়গা, মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন আশপাশ এলাকার খালি জায়গা, ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সামসাবাদ মাঠ সংলগ্ন আশপাশ এলাকার খালি জায়গা, কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গা, শনির আখড়া ও দনিয়া মাঠ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধূপখোলা মাঠ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউয়ারটেক মাঠ সংলগ্ন আশপাশ এলাকার খালি জায়গা, আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গা, আফতাবনগর ইস্টার্ন হাউজিং (আফতাবনগর) এবং পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন পশুর হাট। এসব হাটের মধ্যে আফতাবনগর হাটটি উত্তর ও দক্ষিণ উভয় সিটি করপোরেশন যৌথভাবে ইজারা আহ্বান করেছে।

নগরবিদদের মতে, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রাকে করে মানুষ ঢাকায় পশু বিক্রির জন্য নিয়ে আসে। এতে প্রচুর লোকের সমাগম হয়। তাদের খাবার, থাকার ব্যবস্থা এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসার বিষয়টিও দেখভাল করা এবার একটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। সেক্ষেত্রে হাটগুলোতে যাতে মানুষের খুব একটা আসতে না হয়, সেজন্য বিকল্প ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। নগরবিদ আকতার মাহমুদ বলেন, করোনার মধ্যে ঢাকায় পশুর হাট বসানো অবশ্যই স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াবে। কেননা, এই সময়ে দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ ঢাকায় ট্রাকে করে গরু-ছাগল নিয়ে আসেন। অনেক শ্রমিকও আসেন। হাটের প্রস্তুতিতেও অনেকেই কাজ করেন। ক্রেতা-বিক্রেতার একটা বড় সমাগম তৈরি হয়। এক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি কোনোটিই ঠিক থাকবে না। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকেই যাবে। তবে এটি আমাদের ধর্মীয় বিষয়।

তিনি বলেন, ইসলামি বিধি অনুযায়ী, সামর্থবানদের পশু কুরবানি করতেই হবে। তাই করোনার বিষয়টি মাথায় রেখে স্বশরীরের হাটে না গিয়ে অনলাইনে পশু কেনাবেচা করার ওপর জোর দেয়া যেতে পারে। যদিও অন্যান্য বছরও এটা হয়ে থাকে, তবে সেটা সীমিত আকারে। এবার পরিস্থিতি বিবেচনায় পুরো কেনাবেচা অনলাইনে করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে যারা হাটের ইজারা পাচ্ছেন, তারাই এই উদ্যোগটি নিতে পারেন। সিটি করপোরেশন তাদের এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পরামর্শ দিতে পারে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App