×

জাতীয়

ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করবেন স্বজনরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২০, ১০:০৬ এএম

ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করবেন স্বজনরা

অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ইউনাইটেড হাসপাতাল

রাজধানীর গুলশানের অভিজাত ইউনাইটেড হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবহেলার যে অভিযোগ উঠেছিল, তদন্ত প্রতিবেদনেও তাই প্রমাণিত হয়েছে উল্লেখ করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন নিহতদের স্বজনরা। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তারা হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানা গেছে। এদিকে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু তদন্ত প্রতিবেদন যথেষ্ট নয়। প্রতিবেদনটি সহায়ক হিসেবে কাজ করলেও এ মামলার ক্ষেত্রে আসামিদের অবহেলার অভিযোগগুলো সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণ করতে হবে। তা না হলে অনেকাংশই পার পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, ডিএমপির গুলশান বিভাগের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ইতোমধ্যে আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও অবহেলাজনিত অভিযোগে হওয়া একটি মামলার তদন্ত কাজ অনেকটাই এগিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে কার কার অবহেলায় এই ঘটনা ঘটেছে। দুটি তদন্ত প্রতিবেদনই মামলার ক্ষেত্রে আমলে নেয়া হবে। সর্বোপরি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমার পর আদালতের নির্দেশনার ভিত্তিতেই পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের জন্য হাসপাতাল প্রাঙ্গণে তাঁবু টানিয়ে অস্থায়ী একটি আইসোলেশন ইউনিট করেছিল ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ। গত ২৭ মে রাত পৌনে ১০টার দিকে ওই ইউনিটে আগুন লেগে ভারনন এ্যান্থনি পল (৭৪), মো. মনির হোসেন (৭৫), খোদেজা বেগম (৭০), মো. মাহবুব (৫০) ও রিয়াজুল আলম (৪৫) নামে ৫ জন মারা যান। সে সময় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিস ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি করা হয়। পরে নিহত মুক্তিযোদ্ধা ভারনন এ্যান্থনি পলের জামাতা রোনাল্ড মিকি গোমেজ বাদী হয়ে গত ৩ জুন অবহেলাজনিত ও তাচ্ছিল্যপূর্ণ কাজের অভিযোগ এনে হাসপাতালটির চেয়ারম্যান, এমডি, সিইও, পরিচালক, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, নার্স, সেফটি ও সিকিউরিটির দায়িত্বে থাকা প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এই মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে গত বুধবার ওই হাসপাতালের চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ রাজা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রহমান খান, সিইও মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান এবং পরিচালক ও চিফ ক্লিনিক্যাল গভর্নেন্স ডা. আবু সাঈদ এম এম রহমানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার কথা জানিয়ে ইমিগ্রেশন বিভাগকে চিঠি দেয় ডিএমপির গুলশান বিভাগ। এদিকে রোনাল্ড মিকি গোমেজের দায়েরকৃত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার ইন্সপেক্টর অপারেশন শেখ শাহানুর রহমান কোভিড-১৯ ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাই মামলাটি এখন তদন্ত করছেন ওই থানারই ইন্সপেক্টর তদন্ত আমিনুল ইসলাম। তিনি জানান, তদন্তসংশ্লিষ্ট সব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। এখন পর্যালোচনা চলছে। এছাড়াও আগুনের ঘটনা তদন্তে পুলিশের গঠিত সদস্য কমিটি ১৪ জুন আদালতে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সেখানে অবহেলার কথা উঠে এসেছে। বিষয়গুলো মামলার প্রতিবেদনেও আসবে। আর এ ঘটনায় আগুনে নিহত অন্য পরিবারগুলো মামলা করলেও তার তদন্ত কার্যক্রম ভারনন এ্যান্থনি পলের মামলার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাবে। নিহত রিয়াজুলের ভগ্নিপতি সালাহউদ্দিন গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ৩-৪ দিন আগে উকিল নোটিস পাঠানো হয়েছে। দুয়েক দিনের মধ্যেই তাদের নিযুক্ত আইনজীবীর মামলা করার কথা রয়েছে। ভারনন এ্যান্থনি পলের জামাতা মিকি রোনাল্ড গোমেজ এ প্রতিবেদককে বলেন, অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে মামলা করেছি। তদন্ত প্রতিবেদনেও একই বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এতেই প্রমাণিত হয় এটি অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ড। মামলার পর হাসপাতালের লিগ্যাল এডভাইজার যোগাযোগ করেছিলেন। তাকেও বলেছি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরই গাফিলতি ছিল; আমরা কোনো ক্ষতিপূরণ নয় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। দগ্ধ হয়ে নিহত হওয়া খোদেজা বেগমের ছেলে মো. আলমগীর বলেন, কোভিড-১৯ পরীক্ষা নেগেটিভ এলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার মাকে মূল ভবনে নিতে টালবাহানা করেছে। এর মধ্যেই পুড়ে যায় মারা যায় মা। অবহেলার কারণেই এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, ফায়ার সার্ভিস আসার আগে আগুন নেভানো বা ৫ জন রোগীকে উদ্ধারের কোনো চেষ্টাই করা হয়নি। ইয়াসিন আরাফাত নামে একজন ক্লিনার শুধু তার ফ্লোর পরিষ্কার করার মপ দিয়ে এসির আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছিলেন। আমরা এই ঘটনায় চরম দায়িত্বহীনতা ও অবহেলা দেখছি। এক সপ্তাহ আগে আমরা এই অভিযোগগুলো গুলশান থানায় লিখিতভাবে জমা দিয়েছি। এখন সেই আলোকে হত্যা মামলা দায়েরের কথা ভাবছি। এ ব্যাপারে হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশের সভাপতি এডভোকেট মনজিল মোরসেদ ভোরের কাগজকে বলেন, ইউনাইটেড হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে ৫ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় শুধু তদন্ত প্রতিবেদন যথেষ্ট নয়। প্রতিবেদনটি সহায়ক হিসেবে কাজ করলেও এ মামলার ক্ষেত্রে আসামিদের অবহেলার অভিযোগগুলো সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণ করতে হবে। না হলে অনেকাংশেই তাদের পার পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া সরাসরি হত্যা মামলার ক্ষেত্রে যে উপাদানগুলো সাধারণত থেকে থাকে; এখানে সে ধরনের উপাদান কম হওয়ায় মামলাটি গ্রহণযোগ্যতা হারানোরও সম্ভাবনা থাকবে। তবে বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণ করা গেলে অবহেলাজনিত মৃত্যুর জন্য ক্ষতিপূরণ বা কয়েক বছরের শাস্তি হতে পারে। তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে অবহেলার অভিযোগে হওয়া মামলাগুলো অধিকাংশই আলোর মুখ দেখে না, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App