×

পুরনো খবর

৬২ ভাগ মানুষ উচ্চ ঝুঁকিতে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২০, ০৯:৪১ এএম

বাংলাদেশে ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, হৃদরোগ, কিডনি, উচ্চ রক্তচাপ ও শ্বাসতন্ত্রের জটিল রোগে আক্রান্ত ৬২ ভাগ মানুষ

কোভিড-১৯ সংক্রমণের শুরু থেকেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন যারা দীর্ঘদিন যাবত দীর্ঘমেয়াদি অসংক্রামক রোগে (এনসিডি) ভুগছেন তারা এই ভাইরাসে আক্রান্তের উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন। এই অসংক্রামক রোগের মধ্যে রয়েছে ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, হৃদরোগ, কিডনি, উচ্চ রক্তচাপ, অ্যাজমাসহ শ্বাসতন্ত্রের জটিল রোগ (সিওপিডি)। এছাড়া ধূমপায়ীদেরও এই ভাইরাসে সংক্রমণের ঝুঁকি আছে। আর তাই এই ছয়টি রোগ আক্রান্ত এবং ধূমপান ও তামাক সেবনের মতো অভ্যাসে যারা অভ্যস্ত তাদের বাড়তি সতর্কতা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। দেখা গেছে, ওইসব ব্যক্তিদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হারও বেশি।

ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথে সোমবার প্রকাশিত এক নিবন্ধনে বলা হয়, বিশ্বের প্রায় ১৭০ কোটি বা এক-পঞ্চমাংশ (২০ ভাগ) মানুষের অন্তত একটি দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যা আছে- যা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাদের গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দিতে পারে। ওই গবেষণায় ১৮৮টি দেশের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে গবেষকরা ধারণা পেয়েছেন, বিশ্বে সত্তরোর্ধ্ব জনসংখ্যার ৬৬ শতাংশ ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা ফুসফুসের রোগের মতো কোনো না কোনো দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগছেন। তারা নতুন করোনা ভাইরাসের সংস্পর্শে এলে অনেক বেশি ঝুঁকিতে থাকবেন। অন্যদিকে কাজ করতে সক্ষম এমন বয়সিদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি রোগ আছে ২৩ শতাংশের। আর ২০ বছরের কম বয়সিদের ক্ষেত্রে তা ৫ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, করোনা সংক্রমণে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ৩০৫ জনের। মৃতদের অধিকাংশই দীর্ঘমেয়াদি কোনো জটিল রোগে ভুগছিলেন। বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগের প্রকোপ অনেক বেশি। ২০১৯ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের ৬২ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত। তবে দেশে কিডনি রোগ, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সারে কত মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এর হালনাগাদ কোনো তথ্য নেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এনসিডি নিয়ন্ত্রণ বিভাগের ২০১৮ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়ার হার ২৮ দশমিক ৪ শতাংশ, উচ্চ রক্তচাপ ২৬ দশমিক ২, ক্যান্সারে আক্রান্ত ১১, সিওপিডি ১০ এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্তের হার ৮ দশমিক ৪ শতাংশ।

বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির (বাডাস) এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। কিডনি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে প্রায় ২ কোটি মানুষ কোনো না কোনো ধরনের কিডনি রোগে ভুগছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বরাত দিয়ে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ক্যান্সার রোগী আছে প্রায় ১৫ লাখ। বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন, মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ ভাগ মানুষ শ্বাসতন্ত্রের জটিল রোগে ভোগেন। ঠিক তথ্য না থাকলেও বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন, জনসংখ্যার ২০ শতাংশ হৃদরোগের সমস্যায় ভুগছে। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের বলছে, দেশে এখন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে ২৫ শতাংশ মানুষ। আর দেশের ৩ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ ধূমপানসহ তামাকপণ্য ব্যবহার করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার (অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক ভোরের কাগজকে বলেন, যারা ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, হার্টের সমস্যাসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। ফলে তারা কোনো ভাইরাস বা জীবাণুু দ্বারা দ্রুতই সংক্রমিত হন। সাধারণ মানুষের তুলনায় তাদের মধ্যে মৃত্যুর ঝুঁকিও অনেকে বেশি।

কিছু দিন আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়, করোনায় ধূমপায়ীদের মৃত্যুঝুঁকি ১৪ গুণ বেশি। কারণ ধূমপানের কারণে শ্বাসতন্ত্রের নানা সংক্রমণ এবং শ্বাসজনিত রোগ তীব্র হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App