×

সাহিত্য

মানুষের মৃত্যু মন ভারাক্রান্ত করে রাখে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২০, ১২:১৪ পিএম

মানুষের মৃত্যু মন ভারাক্রান্ত করে রাখে

লুভা নাহিদ চৌধুরী

বিশেষ সাক্ষাৎকার লুভা নাহিদ চৌধুরী স্থপতি ও শিল্পী

লুভা নাহিদ চৌধুরী। একাধারে স্থপতি, সঙ্গীতশিল্পী, কালি ও কলম পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। সবকিছু ছাপিয়ে একজন সমঝদার কর্তাও। বেসরকারি পর্যায়ে দেশের মূলধারার শিল্প-সাহিত্যচর্চার অন্যতম পুরোধা প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক।

স্থাপত্য নিয়ে পড়ালেখা এবং কর্মজীবন শুরু করলেও, পরবর্তীতে চলে এলেন একেবারেই ভিন্ন ধারায়। দায়িত্ব নিলেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের কর্মীবাহিনীর উদ্যমী পরিচালক হিসেবে। উচ্চাঙ্গসংগীতের প্রচার ও প্রসারের উদ্দেশ্যে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ২০১৪ সালে বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয় যাত্রা শুরু করে তার হাত ধরে। ২০১২ সাল থেকে প্রতি বছর নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে আয়োজিত উপমহাদেশের যে সবচেয়ে বড় উচ্চাঙ্গসংগীতারটিও প্রধান আয়োজকও তিনি। যদিও ওই বৃহৎ আয়োজনটি ভেন্যু জটিলতায় চিরতরে বন্ধ হয়ে গেলেও থেমে নেই লুভা নাহিদ চৌধুরীর কর্মযজ্ঞ। কেমন চলছে এই শিল্পী ও শিল্প সমঝদারের করোনাকাল ভোরের কাগজের এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনার এই সময়টায় অফিসের অনেকদিনের জমে থাকা কাজগুলো বাসায় বসে করছি। এর ফাঁকে আনিস স্যারের বইগুলো আবার পড়া শুরু করলাম। তার ‘বিপুলা পৃথিবী’ বইটা এখন পড়ছি। এই পড়ার ভেতর দিকে তাকে আরো জানার চেষ্টা করছি।

সংগীতের চর্চাটাও করছি। তবে, মনোযোগ দিতে পারছি না। দেশে-বিদেশে অনেক কাছের এবং প্রিয় মানুষের মৃত্যু সংবাদ মনটাকে ভারাক্রান্ত করে রাখে সারাক্ষণ। তাই অবসর পেলেও সবকিছুতে মনোযোগ দেয়া যায় না। এর জন্য মনটা ভালো থাকতে হয়। মনে আনন্দ থাকতে হয়। হ্যাঁ, শিল্পের একটা বড় গুণ মনকে শান্তি দিতে পারে, ভেতরে শক্তি জাগরণ করতে পারে। তবে, যদি আপনি সত্যি বিষণ্ণ হয়ে পড়েন, কোনো ক‚লকিনারা না খুঁজে পান। শান্তির জন্য শিল্পের চর্চা তখনই হয়তো করা যায়। এছাড়া যতদিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয়, মানুষের কষ্ট না কমে ততক্ষণ পর্যন্ত একজন সচেতন মানুষ হিসেবে আমি আনন্দ উৎসব করতে পারব না। সম্ভবও নয়।

করোনাকালে চেনা পৃথিবীটার কতটা বদল ঘটেছে জানতে চাইলে জবাবে এই শিল্পী বলেন, করোনার এই সময়টায় আমার একার পৃথিবী নয়, সবারই পৃথিবীর বদল ঘটে গেছে। এর মধ্য দিয়ে এটাই বুঝেছি যে, এই সমস্যা আমাদের কারো একার সমস্যা নয়। আমার সমস্যা আমি সমাধান করব, তার সমস্যা সে সমাধান করবে। এমনটা নয়। সবাইকে সবার সঙ্গে থাকতে হয় এবং হবে। একা নিজেকে সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন করে চলা যায় না। কেউ কেউ হয়তো অর্থ কিংবা প্রাচুর্য দিয়ে নিজের মতো ভালো থাকার চেষ্টা করছেন। আসলে তো জীবন ওভাবে চলে না। এই করোনাকালে এমন উপলব্ধি মানুষের হলো যে একজন মানুষ আরেক জনের সঙ্গেই যুক্ত। এটা কোনোভাবেই আলাদা করা যাবে না। এই উপলব্ধিটা মানুষের এবার বেশি করেই হয়েছে। অন্যান্য সময় আদর্শের জায়গা থেকে আমরা বলি, সবার সঙ্গে চলে না। কিন্তু এই অভিঘাত আদর্শের চেয়েও বেশি।

এর মধ্য দিয়ে অত্যন্ত বাস্তব একটা শিক্ষা পাচ্ছি আমরা। আমি একা অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকলেও যেমন চলবে না আরেকজন অসুস্থ হলেও আমার আশঙ্কা আছে। এই আশঙ্কাটা সবাই মিলেই মোকাবিলা করতে হবে। একা কিছুই করা যাবে না। মোট কথা সবাই ভালো না থাকলেও নিজেরও ভালো থাকা যাবে না।বাংলাদেশ কী ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? এর জবাবে স্থপতি লুভা নাহিদ বলেন, নিশ্চয়ই পারবে। তবে, একটা বড় খেসারত দিতে হবে আমাদের। আর তা সবাইকে মিলেই দিতে হবে। আমরা যতই একে ওকে গালাগালি করছি, এটা করছে না কেন ওটা করছে না কেন।

আমাদের মতো দেশে যারা একটা সুযোগ-সুবিধার মধ্যে আছে তাদের এখন বেশি করেই দেশের জন্য কাজ করতে হবে। এছাড়া তো কোনো উপায় নেই। যেমন ধরুন যারা সেকেন্ডারি কাজগুলো করছে, যেমন কারুশিল্পী, যারা পেইন্টার নয়, যারা ফ্রেম তৈরি করেন, টেইলারিংয়ের কাজ করছে। যারা এ বছর পহেলা বৈশাখ কিংবা ঈদ কোনোটাই করতে পারেনি, ওরা খুব কষ্টে আছে। এরা কি করে বাঁচবে? ওই পর্যায়ে সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দেয়াও সম্ভব নয়। এদের পাশে আমাদেরই দাঁড়াতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App