×

জাতীয়

নগদ সহায়তার তালিকা নিয়ে ‘তালগোল’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২০, ১১:৩০ এএম

সারাদেশের ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবারকে নগদ আড়াই হাজার করে টাকা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু ৫০ লাখ পরিবারের তালিকা করতে গিয়ে ‘তালগোল’ পাকিয়ে ফেলেছে মাঠ প্রশাসন। তাদের ‘খামখেয়ালি’তে বেশির ভাগ উপকারভোগী এখন পর্যন্ত ওই সহায়তা পাননি। কবে মিলবে এই সহায়তা- এই তথ্যটি জানতে গরিব মানুষ প্রতিদিনই দেশজুড়ে বিভিন্ন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিসে হাজিরা দিচ্ছেন। কিন্তু কোনো উত্তর মিলছে না। ফলে সঠিক উপকারভোগীদের ‘দুঃখের নিশি’ আরো দীর্ঘ হচ্ছে। প্রসঙ্গত, গত ১৪ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ পরিবারে আড়াই হাজার করে টাকা সরাসরি নগদ অর্থ সহায়তা দেয়ার কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। উপকারভোগীদের তালিকায় রয়েছেন- রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, নির্মাণ শ্রমিক, কৃষিশ্রমিক, দোকানের কর্মচারী, ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত বিভিন্ন ব্যবসায় কর্মরত শ্রমিক, পোলট্রি খামারের শ্রমিক, বাস-ট্রাকের পরিবহন শ্রমিক ও হকারসহ করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে দেয়া লকডাউন বা শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে বরগুনা, শরিয়তপুর, সুনামগঞ্জ এবং লালমনিরহাটের উপকারভোগী জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। কিন্তু ওই কর্মসূচি উদ্বোধনের এক মাস পার হলেও সব উপকারভোগী নগদ সহায়তা পাননি। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ৫০ লাখ উপকারভোগীর তালিকা করতে গিয়ে প্রথমেই নানা অসঙ্গতি ধরা পরে। সঠিক তথ্য না থাকায় তালিকা থেকে বাদ যায় ১৩ লাখ উপকারভোগীর নাম। পরে আবার নতুন তালিকা করা হয়। সেই তালিকায়ও নানা অসঙ্গতি পাওয়া যায়। সেই অসঙ্গতি দূর করতে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ কাজ করছে। এরকম পরিস্থিতিতে গত ১৫ জুন দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক-২ মো. আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার কার্যপত্র থেকে জানা যায়, গত এক মাসে প্রধানমন্ত্রীর নগদ সহায়তা হিসেবে ১৪ লাখ ৯২ হাজার ৬২৬ পরিবারকে আড়াই হাজার করে টাকা পাঠানো হয়েছে। বাকি ৩৫ লাখ পরিবারই এখনো এই সুবিধা পায়নি। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, যেসব উপকারভোগীর তথ্য ঠিকঠাক পাওয়া যাবে তাদেরকে মোবাইলে অর্থবিভাগ দ্রুত টাকা পাঠাবে। এনআইডি নম্বরের অনুক‚লে যেসব মোবাইল নম্বর রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে তা উল্লেখ করে আগামী ২২ জুনের মধ্যে অর্থবিভাগে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য ন্যাশনাল টেলিকম মনিটরিং সেন্টারকে (এনটিএমসি) বলা হয়েছে। একইভাবে বিটিআরসিকে বলা হয়েছে, ২২ জুনের মধ্যে ১৫ লাখ এনআইডির এবং ২৭ জুনের মধ্যে আরো ৭ লাখ এনআইডির তথ্য যাচাই করে অর্থবিভাগে প্রতিবেদন দিতে। এনটিএমসি এবং বিটিআরসির যাচাই করা তথ্যের মধ্যে যেসব উপকারভোগীর তথ্য ঠিকঠাক পাওয়া যাবে তাদের কাছে টাকা পাঠাবে অর্থবিভাগ। ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন। গতকাল বুধবার তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, যেসব উপকারভোগীর মোবাইল নম্বর নেই সেসব উপকারভোগীর ‘এনআইডি’ কার্ডের ভিত্তিতে ব্যাংক হিসাব চালু করা যেতে পারে। অর্থবিভাগ সেই ব্যাংক হিসাবে টাকা পাঠাতে পারে। এছাড়া কোনো উপকারভোগীর ‘এনআইডি’ কার্ডের বিপরীতে একাধিক মোবাইল নম্বর পওয়া গেলে এবং সেগুলো সচল না থাকলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তত্ত¡াবধানে উপকারভোগীকে যে কোনো একটি সিম কিনে দেয়া যেতে পারে। ওই সভায় আইসিটি বিভাগের প্রতিনিধি জানান, দ্বিতীয় ধাপে ৪৩ লাখ উপকারভোগীর তথ্য অর্থবিভাগে পাঠানো হয়েছিল। এরপরই অর্থ বিভাগের যুগ্মসচিব সভায় জানান, আইসিটি বিভাগ থেকে ৪৩ লাখ উপকারভোগীর যে তালিকা পাওয়া গিয়েছিল তা থেকে যাচাই করে ৩৭ লাখ উপকারভোগীর তথ্য সঠিক পাওয়া যায়। ৬ লাখ উপকারভোগীর তথ্য সঠিক না থাকায় বাদ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সঠিক তথ্যসম্বলিত ৩৭ লাখ উপকারভোগীর মধ্যে ‘ইএফটি’র মাধ্যমে প্রায় ৫ লাখ উপকারভোগীকে নগদ টাকা পাঠানো হবে। বাকি ৩২ লাখ উপকারভোগীর মধ্যে ‘স্মার্ট কার্ড’ রয়েছে কিন্তু ‘এনআইডি’ কার্ড নেই এরকম প্রায় ১৩ লাখ উপকারভোগীর তালিকা যাচাইয়ের জন্য ন্যাশনাল টেলিকম মনিটরিং সেন্টারে (এনটিএমসি) পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, উপকারভোগীদের তথ্য যাচাই বাছাইয়ের জন্য বিটিআরসিতে প্রায় ১৯ লাখ তথ্য পাঠানো হয়েছে। কিন্তু বিটিআরসি থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিবেদন না আসায় উপকারভোগীরা এখনো সুবিধা পাননি। এর জবাবে বিটিআরসি’র প্রতিনিধি সভায় জানান, কমিশনের অনুমোদন ছাড়া তাদের পক্ষে এসব তথ্য যাচাই করা সম্ভব নয়। এ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক ও সভার সভাপতি বিটিআরসি’র চেয়ারম্যানের কাছে টেলিফোনে বিষয়টির গুরুত্ব জানানোর পর চেয়ারম্যান জানান, আজ থেকে তথ্য যাচাইয়ের কাজ শুরু হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App