×

জাতীয়

চার শীর্ষ কর্মকর্তার দেশত্যাগ নিষেধ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২০, ০২:১৯ পিএম

চার শীর্ষ কর্মকর্তার দেশত্যাগ নিষেধ

ফাইল ছবি

ইউনাইটেডে অগ্নিকাণ্ড

রাজধানী গুলশানে অভিজাত বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপালের শীর্ষ ৪ কর্মকর্তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ওই ৪ জন হলেন- ইউনাইটেড হাসপাতাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ রাজা, ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) ফরিদুর রহমান খান, চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান ও ডিরেক্টর ও চিফ (ক্লিনিক্যাল গভর্নেন্স) ডা. আবু সাঈদ এম এম রহমান। অগ্নিকাণ্ডে নিহত হওয়ার ঘটনায় অবহেলাজনিত ও তাচ্ছিল্যপূর্ণ কাজের অভিযোগের মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বুধবার (১৭ মার্চ ) এসব তথ্য জানিয়েছেন গুলশান বিভাগের উপকমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী।

এর আগে ইউনাইটেড হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত মুক্তিযোদ্ধা ভারনন এ্যান্থনি পলের (৭৪) জামাতা রোনাল্ড মিকি গোমেজ গত ৩ জুন বাদী হয়ে অবহেলাজনিত ও তাচ্ছিলপূর্ণ কাজের অভিযোগে হাসপাতালটির চেয়ারম্যান, এমডি, সিইও, পরিচালক, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, নার্স, সেফটি ও সিকিউরিটির দায়িত্বে থাকা প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন।

এ বিষয়ে গুলশান বিভাগের উপকশিনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের তদন্ত কমিটি তদন্ত শেষে গত ১৪ জুন তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, হাসপাতালের করোনা ইউনিট দহনযোগ্য উপকরণ দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল। আগুন সুরক্ষার কোনো যথাযথ ব্যবস্থা ছিল না ও ঘটনার সময় রোগীদের উদ্ধারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো কার্যক্রমও দেখা যায়নি। সুতরাং তদন্তকারী কর্মকর্তা তার মামলার তদন্তে এই বিষয়গুলোকে গুরুত্ব সহকারে নেবেন। এক্ষেত্রে তিনি দেখবেন কার কত দায়িত্ব ছিল ও কারা তাদের দায়িত্বকে কতটা অবহেলা করেছে। তাই মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্তরা যেন দেশ ছেড়ে যেতে না পারে তাই দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার কথা জানিয়ে ইমিগ্রেশন বিভাগকে চিঠি দেয়া হয়েছে। তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করা সম্ভব হবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত প্রতিবেদনেও ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করা হয়েছে। গত ১০ জুন তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হুসেন বলেছিলেন, হাসপাতালটির বাইরে স্থাপিত অস্থায়ী করোনা ভাইরাস ইউনিটে একটি ত্রুটিযুক্ত পুরনো শীততাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (এসি) বসানো হয়েছিল ও সেই এসির বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে আগুন লেগেছিল। অস্থায়ীভাবে নির্মিত করোনা ভাইরাস ইউনিট অবকাঠামোতে ব্যবহৃত উপকরণগুলোও অত্যন্ত দহনযোগ্য ছিল। যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা তাদের জীবন বাঁচাতে পালাতে পেরেছিলেন। তবে তাদের মধ্যে যদি কেউ সঙ্গে সঙ্গে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রটি ব্যবহারের চেষ্টা করতেন তবে এত বড় দুর্ঘটনা রোধ করা যেত।

এদিকে ভারনন এ্যান্থনি পলের জামাতা রোনাল্ড মিকি গোমেজ তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) শেখ শাহানুর রহমান কোভিড-১৯ ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাই মামলাটি এখন তদন্ত করছেন ওই থানারই ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, তদন্তের প্রয়োজনে যা করা দরকার তাই করা হচ্ছে। রোগীর স্বজনদের সঙ্গে একাধিকবার কথা হয়েছে। আইসোলেশন সেন্টারটি পুড়ে গেছে। আমরা আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের কাজ করছি। অবহেলাজনিত সব বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। নিহত ভারনন এ্যান্থনি পলের ছেলে এন্দ্রো ডোমেনিক পল অবহেলাকে দায়ী করে হাসপাতালের সংশ্লিষ্টদের বিচার দাবি করেন। তিনি জানান, আগুন নেভাতে কেউ এগিয়ে আসেনি। সম্পূর্ণ অবহেলার কারণেই তার বাবাসহ ৫ জন মারা যান।

প্রসঙ্গত, ইউনাইটেড হাসপাতালে আগুন লাগার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগেও কয়েকবার আগুন লাগাসহ বিভিন্ন সময়ে নানা কেলেঙ্কারির ঘটনা এখানে ঘটেছে। আইসিইউর বিল দিতে না পারায় রোগীর মৃতদেহ আটকে রাখা, ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু ইত্যাদি নানা অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালটির বিরুদ্ধে। ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের প্রখ্যাত অভিনেতা নায়ক মান্না মারা যাওয়ার পর তার স্ত্রী এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ এনে মামলা করেছিলেন।

গত পহেলা মে কম্বোডিয়ায় বিশ্বব্যাংকের স্বাস্থ্য পরামর্শক হিসেবে কর্মরত ডক্টর জিয়াউদ্দিন হায়দার তার মায়ের মৃত্যুতে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেন। তবে গত ২৭ মে বুধবারের আগুনে পুড়ে ৫ করোনা রোগীর মৃত্যুর ঘটনা সব কিছুকে ছাপিয়ে যায়। ভয়াবহ আগুনে মাহবুব (৫৭), মনির হোসেন (৭৫), ভেরনন এ্যান্থনি পল (৭৪), খাদেজা বেগম (৭০) ও রিয়াজুল আলম লিটন (৪৫) পুড়ে ভস্ম হন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App