×

সারাদেশ

এখনও বহাল তবিয়তে সেই হিসাবরক্ষক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২০, ০৮:২৭ পিএম

এখনও বহাল তবিয়তে সেই হিসাবরক্ষক

কুড়িগ্রাম হাসপাতাল

কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের হিসাবরক্ষক আশরাফ মজিদের টেন্ডার দুর্নীতি, বদলি বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়টি এখন প্রকাশ্য গোপন। একাধিকবার তার বদলির আদেশ স্থগিত করার ঘটনা নিয়েও আছে নানা রকম গুঞ্জন। কুড়িগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতির বর পুরুষ আশরাফ মজিদের সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের খবর ফলাও করে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও আশরাফ মজিদ কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে আছেন বহাল তবিয়তে।

চলতি বছরের মার্চ মাসে দুর্নীতির এই বড় পুরুষ আশরাফ মজিদকে প্রশাসনিক কারণে বদলি করা  হয় রাজশাহী বিভাগের পুটিয়া উপজেলায়। অথচ সাত কর্ম দিবসের মধ্যে যোগদানের কথা থাকলেও সাড়ে তিন মাসেও সেটা বাস্তবায়ন হয়নি উল্টো মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে বদলি স্থগিত করে এখনও স্ব-পদে বহাল থেকে  নির্বিঘ্নে  দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট বিভাগের একাধিক সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গঠিত কমিটি কর্তৃক ১২ ফেব্রুয়ারির সভায় সুপারিশ ক্রমে আশরাফ মজিদের বদলির নির্দেশনা দেয়া হয়। গত ১ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা-পরিচালকের পক্ষে প্রশাসন পরিচালক ডা. বেলাল হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে প্রশাসনিক বদলির নির্দেশনা দেয়া হয়। আদেশের সাত কর্ম দিবসের মধ্যে তাকে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদান করতে বলা হয়। অন্যথায় অষ্টম কর্ম দিবসে হতে সরাসরি অব্যাহতি পাবেন বলে জানানো হয়। বদলির চিঠি পাওয়ার পর আশরাফ মজিদ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাকিরুল ইসলাম এবং স্থানীয় রাজনৈতিক দলের জনৈক প্রভাবশালী নেতার সহযোগিতায় মোটা অংকের টাকার বিনিয়মে ওই বদলি আদেশ স্থগিত করতে সক্ষম হন। বদলি আদেশ ঠেকানোর পর তিনি গর্ব করে  তার পরিচিতজনদের বলেন টাকা হলে এ দেশে রাতকে দিন আর দিনকে রাত করা কোন ব্যাপারই নয়?

অনুসন্ধান চালিয়ে এবং নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী জানান, কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে দুর্নীতি আর অনিয়মের মাধ্যমে সরকারের অর্থ আত্মসাত করে রাতারাতি কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে গেছেন হিসাব রক্ষক আশরাফ মজিদ। দীর্ঘদিন ধরে একই কর্মস্থলে অবস্থান করার সুযোগে আশরাফ মজিদের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট হাসপাতাল পাড়ায় সক্রিয় রয়েছে । আর এই সিন্ডিকেট চক্রে খোদ হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. জাকিরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী জড়িত রয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাসপাতালের ঔষধ চুরি করে প্রত্যন্ত এলাকায় বিক্রি করা ছাড়াও টেন্ডার জালিয়াতি, আউটসোর্সিং জনবল নিয়োগসহ নানা প্রকার দুর্নীতি আর অনিয়মের মাধ্যমে লক্ষ-লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে তত্বাবধায়ক ডা. জাকিরুল ইসলামের যোগসাজসে হিসাব রক্ষক আশরাফ মজিদ হাসপাতালে পথ্য, ধূপি, স্টেশনারী এবং নন-স্টেশনারি মালামাল সরবরাহের টেন্ডার গোপন করার চেষ্টা করলে স্থানীয় ঠিকাদারদের প্রতিরোধের মুখে তা বাতিল করতে বাধ্য হন কর্তৃপক্ষ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, হাসপাতালে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ২৯ জন ক্লিনার এবং সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগের টেন্ডার গোপনে সম্পন্ন করা হয়। জনশ্রুতি রয়েছে, ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ২০ জন ক্লিনার ও ৯ জন সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগে প্রায় ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে ভাগবাটোয়ারা করে ওই সিন্ডিকেট চক্রটি। আশরাফ মজিদ হাসপাতালের কম্বল, মশারি, চাদর ও বালিশের কভার ধৌতসহ বিভিন্ন টেন্ডার গোপন করে তার পছন্দের ব্যক্তিকে কাজ পাইয়ে দিয়ে নিজেই ঠিকাদারী করে আসছেন। হিসাব রক্ষক পদে থেকে  আশরাফ মজিদ নানা রকম দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে কোটি টাকা ব্যয়ে শহরের বস্তি পাড়ায় জমি ক্রয় করে ৫ তলা বাড়ি তৈরি করেছেন। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে প্রায় ২৩ লাখ টাকা উৎকোচের বিনিময়ে ছেলেকে চাকুরি নিয়ে দিয়েছেন বলে অফিস পাড়ায় গুঞ্জন রয়েছে।

হিসাব রক্ষক আশরাফ মজিদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে দুর্নীতির খবর প্রচারিত হওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনের একাধিক টিম তদন্ত শুরু করে যা এখনো চলমান।

এ ব্যাপারে আশরাফ মজিদের সাথে মোবাইলে একাধিক বার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাকিরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিনের কুড়িগ্রাম সদর হাসপালের এই প্রাকটিস রাতারাতি দূর করা সম্ভব না। ঠিকাদারদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে আমি একটি টেন্ডার বাতিল করেছি। আউটসোর্সিয়ের জনবল নিযোগের টেন্ডারটি নিয়েও নানান জটিলতা দূর কারার প্রচেষ্টা চলছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App