×

মুক্তচিন্তা

২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট : কিছু পর্যালোচনা

Icon

nakib

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২০, ০৮:৫৯ পিএম

২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট : কিছু পর্যালোচনা

ড. নাজনীন আহমেদ

২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট : কিছু পর্যালোচনা
নানাবিধ চ্যালেঞ্জপূর্ণ আগামীর অর্থবছর পার করতে বেশকিছু উচ্চাশা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে সুশাসন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির যে অঙ্গীকার করা হয়েছে, তা যথাযথভাবে পালিত হবে সেই প্রত্যাশা করি এবং তারই মাধ্যমে সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে এ বাজেটের যে মূল প্রত্যাশাগুলো তা পূরণ হবে বলে মনে করি।
কোভিড-১৯ ভাইরাসের প্রভাবে চলমান অর্থনৈতিক স্থবিরতা ও স্বাস্থ্যঝুঁকির প্রেক্ষাপটে ২০২০ অর্থবছরের বাজেটের মূল প্রত্যাশার জায়গা ছিল জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তায় আগামী এক বছরে কি ধরনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে তার ওপর। অল্প কথায় বলতে গেলে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে মূল প্রত্যাশা ছিল, এই বাজেট যেন অর্থনীতির হাল ধরে রাখতে পারে। বিগত বছরগুলোতে যে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত ছিল সেই ধারায় করোনা ভাইরাসের কারণে যে অনিশ্চয়তা স্থবিরতা দেখা দিয়েছে, সেই ক্ষতি যেন আমরা কমাতে পারি। এ বাজেট স্বাভাবিক অর্থবছরের বাজেট নয়। কাজেই অনেক বিষয়ে ধরে নেয়া হয়েছিল সেসব ক্ষেত্রে বাজেট বরাদ্দ গতানুগতিক থাকবে। আর নতুন বিষয়ের অবতারণা হবে মূলত চারটি দিক ঘিরে। ১. জীবনের ক্ষতি যেন কম হয়, ২. জীবিকার ক্ষতি যেন কম হয়, ৩. উন্নয়নের মূল স্তম্ভগুলোর ক্ষতি যেন কম হয় এবং ৪. করোনা-পরবর্তী অর্থনীতি যেন দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি রাখে। দেখা যাক এ বিষয়গুলোর বিবেচনায় এই বাজেট কেমন হলো। বর্তমান প্রবন্ধে সেই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব তার পাশাপাশি বাজেটের দর্শনগত কিছু বিষয়ে পর্যালোচনা থাকবে। জীবনের নিরাপত্তা বা জীবনের ক্ষতি কমানোর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো স্বাস্থ্য খাতে যে বাজেট বরাদ্দ তার পরিমাণ এবং গুণগতমানসহ সেই বাজেটের ব্যবহার। প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য এবং পারিবারিক কল্যাণে ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে যা পূর্ববর্তী বছর এ খাতে বরাদ্দের থেকে প্রায় ১৪ শতাংশ বেশি। অধিকন্তু করোনা ভাইরাসজনিত ক্ষতি এড়াতে আরো ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে নতুন ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী টেকনিশিয়ান নিয়োগদানের ব্যাপারে ঘোষণা আছে, উদ্যোগ শুরু হয়েছে, যা ইতিবাচক। তবে বর্তমান করোনা ঝুঁকির সময়ে সাধারণ মানুষের বড় চাওয়া হলো, বরাদ্দ যা-ই থাক স্বাস্থ্যসেবা যেন নিশ্চিত হয়। সেটা কত বরাদ্দ দিয়ে হবে সেই ব্যাপারের চেয়ে মূল প্রত্যাশা হচ্ছে দেশের সর্বত্র যেন ভাইরাস পরীক্ষার সুযোগ ব্যাপকভাবে বাড়ানো হয়, জরুরি অবস্থায় চিকিৎসাসেবা যেন ঠিকমতো পাওয়া যায়, চিকিৎসকরা যেন উপযুক্ত সুরক্ষা সামগ্রী নিয়মিত পেতে পারেন, করোনা ভাইরাসজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি ছাড়াও অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবায় যেন ঘাটতি না থাকে। এরই মধ্যে আমরা দেখেছি কোভিড-১৯ মোকাবিলার বিভিন্ন সামগ্রীর জন্য অহেতুক অর্থ খরচের প্রস্তাব। এভাবে অপচয় করা হলে কোনো বাজেট দিয়েই সত্যিকারের উপকার হবে না। কাজেই বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের যে বরাদ্দ তা সুশাসনের সঙ্গে ব্যবহার ও দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহারের দিকে মানুষের নজর বেশি জরুরি স্বাস্থ্যঝুঁকি হলে তা মোকাবিলায় কীভাবে উদ্যোগ নেয়া হবে, সে দিকনির্দেশনা থাকলে ভালো হতো। অর্থাৎ স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে যে বরাদ্দ আছে সেটা কোন পরিস্থিতিতে কীভাবে ব্যবহার হতে পারে তার একটা সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা বাজেট বক্তৃতায় থাকা দরকার ছিল। স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি জীবিকার যে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থানে যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে, তা দূর করে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বাজেট কতটা ভূমিকা রাখবে তা একটু খতিয়ে দেখা যেতে পারে। বর্তমান প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষি ও শিল্প খাতের জন্য যেসব উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে এবং তার পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এগুলোর মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে ধরে নেয়া হচ্ছে। এই বাজেটে কৃষি খাতের আধুনিকায়ন, কৃষি নানা পর্যায়ে যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কয়েকটি পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। কৃষি যন্ত্রের আমদানি শুল্ক কমানোর ফলে কৃষির আধুনিকায়ন হলে তা আমাদের অর্থনীতির দিকে তাকায় বিশেষ ভূমিকা রাখবে তাই কৃষি খাতের জন্য এই উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবেই দেখতে চাই। তবে এ থেকে ক্ষুদ্র কৃষকরা উপকৃত হতে হলে আধুনিক কৃষি উপকরণ তাদের কাছে সুলভ করতে হবে, সে ব্যাপারে বাজেটে আরো স্পষ্ট নির্দেশনা থাকলে ভালো হতো। শিল্প খাতের বিভিন্ন রকম প্রণোদনা, বিশেষ করে অণু ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ঘোষিত প্রণোদনা যথাসময়ে সহজশর্তে বাস্তবায়িত হলে তা ব্যবসা-বাণিজ্য ধরে রেখে মানুষের কর্মসংস্থান রাখতে সহায়ক হবে। তবে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য দিকনির্দেশনা থাকলে ভালো হতো। বিগত বছরের মতো নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে বাজেট বরাদ্দ থাকলে তা শিক্ষিত বেকারদের এমনকি প্রবাস থেকে যারা চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরেছেন তাদের অনেকের কর্মসংস্থানে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারত। শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক হ্রাস দেশীয় বাজারনির্ভর শিল্পের বিকাশে ভূমিকা রাখবে। বড় শিল্পের করপোরেট কর কমানো, আমদানি কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক কমানো ইত্যাদি উদ্যোগগুলো এই শিল্পের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান ধরে রাখায় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি। রপ্তানি খাতের বহুমুখীকরণের জন্য তৈরি পোশাক খাতের পাশাপাশি অন্যান্য রপ্তানি খাতে বিশেষ করপোরেট কর সুবিধা ভাবা দরকার। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির করপোরেট কর যেহেতু কমানো হয়েছে, এর পাশাপাশি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির কর হার ২৫ থেকে ২ শতাংশ কমালে তা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে বিভিন্ন শিল্পকে উৎসাহিত করত এবং এতে শিল্পের বিকাশ ঘটে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হতে পারে। প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে সরকার ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করেছে, যা মোট বাজেটের ১৬ দশমিক ৮২ শতাংশ। কিন্তু সামাজিক সুরক্ষা খাতের বরাদ্দের বিস্তারিত বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, নগদ ভাতা, খাদ্য নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানমূলক কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, স্কুল খাদ্য কর্মসূচি, ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তির অর্থসহ নানান কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ ছাড়াও প্রস্তাবিত বাজেটে এমন কিছু বরাদ্দ সামাজিক সুরক্ষা খাতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যা প্রচলিত অর্থে ঠিক দরিদ্র দুস্থ মানুষের জন্য যে কর্মসূচি তার মধ্যে পড়ে না। যদিও আমরা জানি সরকারি অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশনের অর্থ সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির অধীনে বরাদ্দ দেয়া হয়, তবুও করোনার সময়ে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির যে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে তা দরিদ্র দুস্থ মানুষের জন্য সরাসরি সহায়তা হিসেবে যাবে, সেটাই সবার কাম্য। যেমন করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প খাতে দেয়া প্রণোদনার ঋণের সুদ ভর্তুকির ৩ হাজার কোটি টাকা এই সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় ধরা হয়েছে। কিন্তু ক্ষুদ্র মাঝারি উদ্যোক্তাদের সবাই কি সামাজিক সুরক্ষা পাওয়ার উপযুক্ত? করোনার কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মার্চ ও এপ্রিল স্থগিত সুদের আংশিক সুদ মওকুফ বাবদ যে ২ হাজার কোটি টাকা সরকার দিচ্ছে তাও যোগ করা হয়েছে। সঞ্চয়পত্রে সরকার যে সুদ পরিশোধ করে তার মধ্যে ৬ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির অধীনে রাখা হয়েছে। কৃষি ভর্তুকির এক হাজার ৯০০ কোটি টাকা, নিম্ন আয়ের পেশাজীবী কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ঋণের ৩ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল, কর্মসৃজনের জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ও পিকেএসএফ যে ২০০০ কোটি টাকার ঋণ দেবে- সেই বরাদ্দও সামাজিক সুরক্ষার আওতাভুক্ত করা হয়েছে। সঞ্চয়পত্রের যারা বিনিয়োগ করতে পারেন তারা ঠিক সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আসার কতটা উপযুক্ত তা ভেবে দেখার বিষয়। সাধারণ মানুষের কর্মসৃজন এবং জীবিকা রক্ষায় সরকারের সুদে ভর্তুকিসহ অন্য উদ্যোগগুলো প্রশংসনীয়, কিন্তু এগুলোকে ঠিক সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় আনা হলে তা এ বিষয়ে বিভ্রান্তির জন্ম দিতে পারে। সামাজিক সুরক্ষার আওতায় সাধারণত ঋণের বরাদ্দ কিংবা সঞ্চয়পত্রের সুদ অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা নয়। জীবিকার ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যয় বৃদ্ধি এবং মোবাইলের সিম ব্যবহার করে গৃহীত বিভিন্ন সেবার ওপর বাড়ানো হয়েছে তা নেতিবাচক প্রভাব রাখবে কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য অনলাইনের নানারকম কেনাকাটা সেবা এমনকি শিক্ষার জন্য ইন্টারনেটভিত্তিক সার্ভিস ব্যবহার করা হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে ওয়াইফাইয়ের সুবিধা না থাকায় মোবাইলভিত্তিক ইন্টারনেট ব্যবহার ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। এমতাবস্থায় করোনা ভাইরাসের নতুন বাস্তবতায় ইন্টারনেটভিত্তিক নানান রকম সেবা ও তা ঘিরে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য এই কর বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রত্যাহার করা দরকার। গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রমের জন্য ১০০ কোটি টাকার বরাদ্দ ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এর সঙ্গে বিদ্যমান কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রকল্পগুলো অব্যাহত থাকতে হবে। নিম্ন-মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত যারা নতুন করে দারিদ্র্যের মুখোমুখি হচ্ছে, কর্ম হারিয়ে ফেলছে, তাদের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও বাজেট বরাদ্দ দরকার ছিল। নারীদের কর্মসংস্থানের এই বাজেটে সুস্পষ্টভাবে তেমন কিছু নেই তবে প্রতি উপজেলায় ডে কেয়ার শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে তা বাস্তবায়িত হলে নারীর কর্মসংস্থানের সহায়ক হবে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য দেয়া প্রণোদনা প্যাকেজ নারীর জন্য ৫% রাখা হয়েছে অর্থাৎ এক হাজার কোটি টাকা, এই অর্থ সহজশর্তে নারী উদ্যোক্তাদের কাছে পৌঁছালে তা উদ্যোক্তাদের কর্মসংস্থানসহ তাদের সঙ্গে জড়িত অনেক শ্রমিক কারিগরের জীবিকার সুরক্ষা দিবে। তবে প্রসাধন সামগ্রীর ওপর যে কর বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে বিউটি পার্লার ব্যবসার সঙ্গে যেসব নারী উদ্যোক্তা আছেন, তাদের খরচ বাড়বে। করোনার স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে এই সেবা অনেকেই নিচ্ছেন না। সেক্ষেত্রে করোনা পরবর্তী সময়ে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার সময় এই বাড়তি খরচ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বিউটি পার্লারের নারী উদ্যোক্তাদের ওপর। মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা ও দারিদ্র্য দূরীকরণে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রীর দাম কমানোর প্রচেষ্টা আছে এই বাজেটে। বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমবে। তাছাড়া পোল্ট্রি শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানিতে অগ্রিম আয়কর কমানোর সিদ্ধান্ত তা এ খাতের বিকাশে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। প্রস্তাবিত বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা বৃদ্ধিও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে মানুষের অর্থনৈতিক জীবনকে স্বস্তি দিতে। তবে করমুক্ত আয়সীমা ৪ লাখ টাকা করলে ভালো হতো। এ বছর সর্বনিম্ন কর ৫ হাজার টাকা করাকেও ইতিবাচক মনে করি। এর আগে এটি ১০ হাজার ছিল। তবে অতি ধনীদের জন্য সর্বোচ্চ কর ৩০ শতাংশ বাদ দেয়া হয়েছে, এখন সর্বোচ্চ কর ২৫। এটি দরকার ছিল না। এক কঠিন অবস্থার মধ্যে ঘোষিত হয়েছে এই বাজেট অনেক রকম সীমাবদ্ধতার মধ্যেই অর্থমন্ত্রীকে বাজেট দিতে হয়েছে বিশেষ করে যে অনিশ্চিত অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে আমাদের অর্থনীতি তাতে অনেক কিছুই সুনির্দিষ্টভাবে পরিকল্পনা করা সম্ভব নয়। তাই এই বাজেটে সামষ্টিক অর্থনীতির নানান সূচকে অন্যান্য বছরের মতো প্রত্যাশা রাখা সম্ভব নয়। তাই এই বাজেটে প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা হয়তো অর্জন সম্ভব নাও হতে পারে এক্ষেত্রে অনেক অনিশ্চয়তা রয়েছে। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাও অনেক বেশি। এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের কাঠামোগত পরিবর্তন ছাড়া এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। এই অর্থবছরে একেবারে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত অফিসের বিস্তারে মনোযোগ দিতে হবে যাতে করদাতার সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব হয়। রাজস্ব আদায় এবং রাজস্ব ও উন্নয়ন বাজেটের ব্যয় কাঠামোগত পরিবর্তনের মাধ্যমেই কেবল সামষ্টিক অর্থনীতির ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব। এ বছর বাজেট ঘাটতি বৃদ্ধির যে সম্ভাবনা আছে তা খুব একটা দুশ্চিন্তার কারণ নয়, বরং এই সময়ে বিভিন্ন রকম সরকারের মাধ্যমে মানুষের হাতে আয় পৌঁছানো গেলে তা অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে সহায়ক হবে। প্রস্তাবিত বাজেটের মূল দর্শনের দিকে তাকালে দেশে সুশাসন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, দুর্নীতির প্রতি কঠোর মনোভাব ইত্যাদির প্রস্তাব যেভাবে আছে, তারই পাশাপাশি আবার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাড়ানো হয়েছে। ইতোপূর্বে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রেখে খুব একটা লাভ হয়েছে বলে জানা যায়নি। বরং তা সৎ ব্যবসায়ী চাকরিজীবীদের প্রতি এক ধরনের নিরুৎসাহ দেয়। তাই প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা রাখার যে সুযোগ তা এই বাজেটে স্বচ্ছতার যে অঙ্গীকার সেই অঙ্গীকারে কালিমা একে দেয় বৈকি। তাই আমি মনে করি এই বাজেটের মূল দর্শনকে একমুখী রাখতে কালো টাকা সাদা করার এই সুযোগ বন্ধ করা উচিত। আগামী অর্থবছরে অনিশ্চিত এক অবস্থার ভেতর দিয়ে দেশের অর্থনীতি কোন অবস্থায় দাঁড়াবে, তা নির্ভর করবে মূলত স্বাস্থ্য খাতে কাঠামোগত পরিবর্তন কতটা এলো তার ওপরে। স্বাস্থ্য খাতের ঝুঁকি কমানো না গেলে অন্য সব খাতের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সমস্যায় পড়বে। করোনা-পরবর্তী সময়ে এগিয়ে যাওয়াও ব্যাহত হবে। তাই জীবনের ঝুঁকি কমানোর প্রচেষ্টা এবং অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা- এ দুটো প্রক্রিয়া পাশাপাশি চলতে হবে। নানাবিধ চ্যালেঞ্জপূর্ণ আগামীর অর্থবছর পার করতে বেশকিছু উচ্চাশা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে সুশাসন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির যে অঙ্গীকার করা হয়েছে, তা যথাযথভাবে পালিত হবে সেই প্রত্যাশা করি এবং তারই মাধ্যমে সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে এ বাজেটের যে মূল প্রত্যাশাগুলো তা পূরণ হবে বলে মনে করি। কারণ পরবর্তী বিশ্বে দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে পারলে বর্তমানের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। ড. নাজনীন আহমেদ : অর্থনীতিবিদ ও কলাম লেখক; সিনিয়র রিসার্চ ফেলো, বিআইডিএস।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App