×

জাতীয়

রেড জোনের’ বাসিন্দারা উদ্বেগ-অনিশ্চয়তায়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২০, ০৯:৩২ এএম

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির রাশ টানতে সরকার রেড জোন ঘোষণা করলেও এর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, এ নিয়ে জনমনে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সাধারণ মানুষের উদ্বেগ কাটাতে গতকাল মঙ্গলবার সরকার তথ্য বিবরণী প্রকাশ করে বলেছে রেড জোন ঘোষিত এলাকায় ১৩টি নির্দেশনা মানতে হবে। তবু অনেকে নিশ্চিত হতে পারছেন না। এরই মধ্যে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার এবং নরসিংদীর মাধবদী পৌরসভার দুটি ওয়ার্ডকে রেড জোন ঘোষণা করা হয়েছে। রাজধানীর ওয়ারীতে রেড জোন ঘোষণার জন্য সীমানা চিহ্নিতের কাজ চলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোন কোন এলাকা রেড জোনে পড়বে সে তালিকা আগেই জানিয়ে দেয়ায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস একসঙ্গে কিনে নিচ্ছেন নাগরিকরা। রেড জোনে বাস করতে হবে জেনে বহু মানুষ গ্রিন জোনে থাকা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে চলে যাচ্ছেন। অফিসে যাতায়াত সীমিত হওয়ায় অনেকেই গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন। তবে উদ্বেগ ও বিভ্রান্তি কাটাতেরা সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে সরকারও। এরকম পরিস্থিতিতে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, রেড জোন নিয়ে মানুষের উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। যেসব এলাকা রেড জোনে পড়বে সেসব এলাকার মানুষের কষ্ট লাঘবে আমরা সবকিছু সুন্দরভাবে প্রস্তুত করে রেখেছি। রেড জোনে থাকা সংশ্লিষ্ট এলাকাকে ঘিরে রেখে রোগটাকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। আর এত আয়োজন করা হচ্ছে মানুষের কল্যাণের জন্যই। তার মতে, একসঙ্গে সব এলাকা রেড জোন ঘোষিত হবে না। ধাপে ধাপে এলাকাগুলো ঘিরে দেয়া হবে। তার আগে যে এলাকা রেড জোন করা হবে সেই এলাকার ম্যাপিংসহ আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করা হবে। ফরহাদ হোসেন বলেন, মহানগরে মেয়র অথবা তার প্রতিনিধির সভাপতিত্বে, জেলায় জেলা প্রশাসক এবং উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সভাপতিত্বে একটি বিশেষ কমিটি থাকবে। ওই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমতিতে সংশ্লিষ্ট এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা করা হবে। রেড জোন হবে সংশ্লিষ্ট এলাকার ছোট ছোট অংশ নিয়ে। রেড জোন ঘোষণার ৩-৫ দিন পর এর বাস্তবায়ন শুরু হবে। যে এলাকা রেড জোন হবে তা মাইকিং করে আগেভাগেই জানিয়ে দেয়া হবে। ঘোষণার ৩ থেকে ৫ দিন পর রেড জোন বাস্তবায়ন হলে ওই এলাকায় সাধারণ ছুটিও (১৪ থেকে ২১ দিন) কার্যকর হওয়া শুরু হবে। ছুটিতে সবকিছু বন্ধ থাকবে বলেও তিনি জানান। মন্ত্রী বলেন, রেড জোন এলাকার জন্য গঠিত বিশেষ কমিটিই রেড জোনে কি চালু থাকবে আর কি চালু থাকবে না তা নির্ধারণ করবে। রেড জোন এলাকায় মুদি দোকান খোলা রাখার বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, মুদি দোকান খোলা থাকবে কিনা তা নির্ধারণ করবে ওই কমিটি। তবে ওষুধের দোকানসহ জরুরি পরিষেবা চালু থাকবে। পাশাপাশি ঘোষিত রেড জোন এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক টিম থাকবে। ৩৩৩ এবং ৯৯৯ কাজ করবে। পুলিশের মুভমেন্ট অ্যাপস সক্রিয় থাকবে। রেড জোন এলাকা থেকে কেউ বাইরে যেতে পারবে না আবার আসতেও পারবে না। তিনি বলেন, রেড জোন ঘোষণার আগে তা শনাক্ত করে পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নেয়া হবে। কতটুকু জায়গা নিয়ে রেড জোন হবে তা আগেভাগেই মানুষকে জানিয়ে দেয়া হবে। তিনি রাজধানীর মিরপুর এলাকার উদাহরণ দিয়ে বলেন, পুরো মিরপুরজুড়ে করোনার সংক্রমণ রয়েছে। তাই বলে পুরো মিরপুর রেড জোন নয়। মিরপুরের ছোট ছোট এলাকা ভাগ করে রেড জোন কার্যকর করা হবে। আর এসবের ফলে মানুষের মধ্যে স্বস্তি আসবে। ওয়ারীতে রেড জোনের সীমানা চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে : রাজধানীতে করোনা সংক্রমণের অন্যতম ‘হটস্পট’ ওয়ারীতে রেড জোনের সীমানা চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সরকার তথ্য বিবরণী প্রকাশ করে এসব কথা জানানো হলেও কবে থেকে ওয়ারীতে রেড জোন কার্যকর হচ্ছে সেই বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরামর্শক্রমে প্রাথমিকভাবে তিনটি জেলায় গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের রাজাবাজার (পূর্ব রাজাবাজার) এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়ারীতে পরীক্ষামূলকভাবে জোনিং সিস্টেম চালু করা হয়েছে। ঢাকার ওয়ারীতে জোনিং সিস্টেম চালুর জন্য সুনির্দিষ্ট এলাকা চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে। এই পরীক্ষামূলক জোনিং সিস্টেমের অভিজ্ঞতা দেশের অন্যান্য এলাকায় জোনিং সিস্টেম চালু বা পরিবর্তনের বিষয়ে সহায়ক হবে। যেখানে যখন প্রয়োজন তখনই ‘রেড জোন’ ঘোষণা : স্থানীয় পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই যখন যেখানে প্রয়োজন হবে, তখনই সেখানে রেড জোন ঘোষণা দেয়া হবে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় জোনভিত্তিক লকডাউন নিয়ে বিভ্রান্তি নিরসনে মঙ্গলবার এক সরকারি তথ্য বিবরণীতে এ কথা জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, রেড জোন ঘোষণা বা রেড জোন পরিবর্তন একটি চলমান প্রক্রিয়া। স্থানীয় পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই যখন প্রয়োজন তা করা হবে এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তা বাস্তবায়ন করবে। এ বিষয়ে সবার বিভ্রান্তি নিরসন হওয়া প্রয়োজন। কেন্দ্রীয় কারিগরি গ্রæপও অব্যাহতভাবে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে এলাকাভিত্তিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে এবং অধিকতর বাস্তবমুখী সংজ্ঞা ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নির্ধারণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়। সরকার রাজধানীর ৪৫ এলাকাকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। যদিও সব প্রস্তুতি সেরে সেসব এলাকা অবরুদ্ধ করতে আরো সময় লাগবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। নরসিংদীর মাধবদী রেড জোন ঘোষণা : নরসিংদী জেলার মাধবদী পৌরসভার ৪ এবং ৫ নম্বর ওয়ার্ডকে রেড জোন ঘোষণা করেছেন সেখানকার জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন। ওয়ার্ড দুটিকে রেড জোন ঘোষণা করে নরসিংদী জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের মর্মানুযায়ী নরসিংদীর সিভিল সার্জনের অনুরোধে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে মাধবদী পৌরসভার ৪ ও ৫ নং ওয়ার্ডকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা (রেডজোন) হিসেবে ঘোষণা করা হলো। রেড জোনে সেনা টহল জোরদার করা হচ্ছে- আইএসপিআর : কোভিড-১৯ সংক্রমণের মাত্রা অনুসারে সরকার ঘোষিত রেড জোনগুলোতে টহল জোরদার করছে সেনাবাহিনী। গতকাল মঙ্গলবার এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। বার্তায় বলা হয়, রেড জোনসমূহে সরকারি নির্দেশনাবলি যথাযথ পালনের উদ্দেশ্যে সেনা টহল জোরদার করা হচ্ছে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে সশস্ত্র বাহিনী মাঠে রয়েছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ক্রমাগত বাড়তে থাকায় পাড়া-মহল্লা, ওয়ার্ড ও এলাকাভিত্তিক সারাদেশকে রেড (লাল), ইয়েলো (হলুদ) ও গ্রিন (সবুজ) এই তিন জোনে (অঞ্চল) ভাগ করে পর্যায়ক্রমে লকডাউন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশকিছু এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া রেড জোনেও সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে। রেড জোন কিংবা লকডাউন বাস্তবায়নে ৪-৫ দিন চাইলেন মেয়র তাপস : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত এলাকাগুলোতে লকডাউন বাস্তবায়ন করতে আরো চার-পাঁচ দিন লাগবে বলে জানিয়েছেন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি বলেছেন, অতি সংক্রমণের পাড়া-মহল্লা সুনির্দিষ্ট করতেই দুই থেকে তিন দিন লেগে যাবে। তারপর লকডাউন বাস্তবায়ন করতে আরো ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা সময় লাগবে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে জোনিং সিস্টেম বাস্তবায়ন বিষয়ক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা কমিটির এক বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে মেয়র এসব কথা বলেন। তাপস বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে একটি প্রজ্ঞাপন এসেছে। এ নিয়ে কিছু কনফিউশনও সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু আমি মনে করি এখানে কনফিউশনের কোনো অবকাশ নেই। আমাদের যে রেড জোন চিহ্নিত করে দেয়া হবে আমরা সেই রেড জোন এলাকায় লকডাউন বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেব। এই প্রজ্ঞাপন পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতেই আমরা এই সভা ডেকেছি। একটি ব্যবস্থাপনা কমিটিও করে দেয়া হয়েছে। এই কমিটির আওতায় সবাইকে নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি কীভাবে বাস্তবায়ন করব। নির্ধারিত ওয়ার্ড বা পুরো এলাকা অবরুদ্ধ না করে শুধু ‘বেশি আক্রান্ত এলাকায়’ লকডাউন বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান মেয়র। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে যে গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে সে অনুযায়ী কাজ করবেন তারা। তিনি বলেন, আশা করছি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় যে সুনির্দিষ্ট এলাকা সেখানে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় কাউন্সিলর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ এই উদ্যোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে আমরা সেটা বাস্তবায়ন করব। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাইডলাইনে আমরা পেয়েছি যারা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছে তাদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে হবে, যারা আক্রান্ত নয় তাদেরও কোনো স্বাস্থ্যসেবা প্রয়োজন হলে সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। সেখানে অফিস-আদালতসহ অন্যান্য কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকবে। এই এলাকায় যারা আছেন তাদের জন্য খাদ্য সেবা এবং যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে আছেন তাদের বিনামূল্যে খাদ্যসেবা দিতে আমাদের গাইডলাইন দেয়া হয়েছে। এটা একটা ব্যাপক কার্যক্রম। আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। তিনি বলেন, আমি জানি লকডাউনে অনেকেরই কষ্ট হবে, বিপদ হবে, ভবিষ্যতের চিন্তা করে সুন্দর ভবিষ্যতের কথা ভেবে এই ব্যাধি থেকে মুক্ত হতে সবাইকে কষ্ট করতে হবে। কষ্ট সহ্য করার মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App