×

মুক্তচিন্তা

বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে অপ্রতুল বরাদ্দ

Icon

nakib

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২০, ০৮:৩১ পিএম

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশই স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে কম ব্যয় করে। এ খাতে প্রস্তাবিত বরাদ্দ মাত্র ৫ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে ২৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। আর করোনা সংকটের সময় জরুরি ব্যয় হিসাবে ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অথচ এ অর্থ ব্যয়ের সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেই। স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন ব্যয় ৫ দশমিক ৮ শতাংশ স্থিতিশীল রয়ে গেছে, যদিও পরিচালন ব্যয় গত অর্থবছরের ৪ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ হয়েছে। এবারো জিডিপির মাত্র শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যদিও এবারই জরুরি ছিল অন্তত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশমতো জিডিপির ৪ শতাংশ বা তার ওপরে বরাদ্দ রাখা। কোভিড মহামারির এই সংকটকালে আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রকৃত রূপ উন্মোচিত হয়েছে। সংক্রমণের শুরুর দিকে আমাদের দায়িত্বশীলরা বলেছেন করোনা নিয়ন্ত্রণে তাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। কিন্তু সংক্রমণের শততম দিনে এসেও আমরা আমাদের চিরাচরিত ভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থাই দেখতে পাচ্ছি। যদিও কাগজে-কলমে আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা সর্বজনীন কিন্তু বাস্তবতা সেখানে ভিন্ন। সেই শুরু থেকেই বিশেষজ্ঞরা একটি শক্তিশালী সর্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা কার্যকর করে তোলার দাবি জানিয়ে আসছেন। একটি শক্তিশালী সর্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রথম শর্তই হলো স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো। এখন আমাদের স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ একেবারেই অপ্রতুল। সরকার নিজেই তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছে না। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় লেখা রয়েছে যে স্বাস্থ্য খাতে সরকারি বরাদ্দ জিডিপির ২ শতাংশ হতে হবে। কিন্তু মহামারির এই সংকটকালে এসেও আমরা দেখতে পেলাম জিডিপির মাত্র শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে যা অনেক উন্নয়নশীল দেশের চেয়েও অনেক কম। যেমন শ্রীলঙ্কায় স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশ, ভিয়েতনামে ২ দশমিক ৫৫, থাইল্যান্ডে প্রায় ২ দশমিক ৭ শতাংশ। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে যারা করোনা নিয়ন্ত্রণে ভালো অবস্থানে রয়েছে, যেমন শ্রীলঙ্কা ও ভিয়েতনাম, তাদের স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ আমাদের তুলনায় তিন-চার গুণ বেশি। আর উন্নত দেশগুলোর কথা তো বলাই বাহুল্য; তাদের স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ জিডিপির ৬ থেকে ৮ শতাংশ পর্যন্ত। শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম বা কেরালার মডেল হলো একটা কার্যকর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কাঠামো যেখানে প্রতিটি এলাকা ও কর্মস্থলভিত্তিক স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবার পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। বাংলাদেশে এরকম স্বাস্থ্য কাঠামো প্রবর্তন করতে হলে নতুন করে বিনিয়োগের কথা ভাবতে হবে সরকারকে। সরকারি চিকিৎসাসেবার মান উন্নত না হওয়ার কারণে আমাদের মধ্যবিত্তরা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যায় না। সরকারি চিকিৎসাসেবায় আস্থা ফেরাতে যথেষ্ট বিনিয়োগের বিকল্প নেই। তাছাড়া পর্যাপ্ত দক্ষ জনবলের জন্য নতুন চিকিৎসক, নার্স ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দিতে হবে। তাই শক্তিশালী চিকিৎসাব্যবস্থা কার্যকর করতে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু আমাদের সবচেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয় হলো স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ আছে। বিশেষত চিকিৎসা সরঞ্জামাদি ক্রয়ের ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এমন ব্যাপক দুর্নীতি চলতে থাকলে বরাদ্দ বাড়ালে তার সুফল জনগণ পাবে না; স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতিবাজেরাই আরো বেশি লাভবান হবে। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ বি এম আবদুল্লাহ সম্প্রতি বলেছেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি বন্ধ না হলে বাজেট বাড়িয়ে লাভ নেই।’ তাই শুধু বরাদ্দ বাড়ালেই চলবে না, বরাদ্দকৃত অর্থের সদ্ব্যবহার ও দুর্নীতি রোধে শক্তিশালী ও স্থায়ী রেগুলেটরি কমিশনের বিকল্প নেই; এর লক্ষ্য হবে সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রকৃত বাজারমূল্য অনুসরণ করা হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা। করোনার ফলে সৃষ্ট মহামারি নিয়ন্ত্রণ ও শক্তিশালী সর্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা কার্যকর করতে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি দুর্নীতিরোধ করতে না পারলে পরিস্থিতি আরো ভয়ঙ্কর হবে। লেখক : কবি ও গবেষক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App