নতুন করে আরেক বিড়ম্বনা!
nakib
প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২০, ০৮:৪৯ পিএম
করোনাকালে গ্রাহকের জন্য বাড়তি যন্ত্রণা হয়ে এসেছে বাড়তি বিদ্যুতের বিল। কারো কারো বেলায় ১০ থেকে ১৬ গুণ বাড়তি টাকা গ্রাহকদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে ভুতুড়ে বিল। এই যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। মিটারের কাছে না এসেই আন্দাজের ওপর অনেক গ্রাহকের বিলে অতিরিক্ত রিডিং যোগ করা হয়েছে। এমনটা করা বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সরকার ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত তিন মাসের আবাসিক গ্রাহকের বিদ্যুতের বিল নেয়া বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছিল। করোনা সংক্রমণ বিস্তার রোধে গ্রাহকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে সরকার এই সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তিন মাস পর এই ১০-১৬ গুণ বিল আসায় ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা। প্রায় সারাদেশেই গ্রাহকরা এই ভুতুড়ে বিলের শিকার বলে গণমাধ্যমে খবর আসছে। জানা গেছে, বিতরণ সংস্থাগুলো কোনো কোনো গ্রাহকের ক্ষেত্রে ধাপ না দেখে মোট বিদ্যুৎ খরচের ওপর ইউনিটের দাম ধরেছে। এর পাশাপাশি রয়েছে অনুমানভিত্তিক হিসাব। আরইবির ৮০টি সমিতি, ডিপিডিসি, ডেসকোসহ দেশের ছয়টি বিতরণ কোম্পানিরই গ্রাহকদের একাংশ ১০ থেকে ১২ গুণ বেশি বিদ্যুৎ বিল পেয়েছেন। একজন গ্রাহক স্বাভাবিকের চেয়ে ১৬ গুণ বেশি বিলও পেয়েছেন। বিদ্যুৎ বিলে বিলম্ব মাসুলসহ বিল পরিশোধের শেষ তারিখ ১৪ জুন ২০২০ উল্লেখ করা হলেও বিলের অপর অংশে নোটিস করা হয়েছে বিল পরিশোধিত না হইলে, কোনোরূপ পূর্ব নোটিস ব্যতিরেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। এমনিতেই গ্রাহকরা ডিমান্ড চার্জ, মিটার ভাড়া, সার্ভিস চার্জ প্রতি মাসে বিলের সঙ্গে বাড়তি টাকা দিয়ে আসছে। এই সংকটে যদি বিল বাড়তি হয় তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় দাঁড়াবে? এসব অনিয়ম দেখবে কে? আমাদের দেশে অতীতে বিদ্যুৎ খাতে অনিয়ম, হয়রানি ও ভোগান্তির বিরুদ্ধে গণআন্দোলনেরও নজির রয়েছে। এমন কিছু হোক আমরা চাই না। বাড়তি বিলে সাধারণ গ্রাহকদের মাঝে যে অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে তা সত্ত্বেও সমাধানের পথ বের করতে হবে। না হয় এ খাত নিয়ে চরম নৈরাজ্য দেখা দিতে পারে। বিদ্যুৎ আজ আধুনিক জীবনযাপনের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ। বিদ্যুৎ উন্নয়নেরও চালিকাশক্তি। সুতরাং বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধির পর এ খাতে কোনো প্রকার জনভোগান্তি একেবারেই অপ্রত্যাশিত। সরকারকে এ বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। বিদ্যুৎ খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সরকারকে কঠোর হতেই হবে। গত ১০ বছরে ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। কিন্তু সরবরাহ ব্যবস্থা রয়ে গেছে মান্ধাতার আমলে। দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা বিদ্যুতের বিল নিয়ে তেলেসমাতি কাণ্ডের অবসান এবং মানুষ কবে সঠিক বিল পাবে, তার গ্যারান্টি আজ পর্যন্ত নিশ্চিত করা যায়নি। বরং বছরের পর বছর ধরে বিদ্যুৎ বিল বেড়েই চলেছে। গ্রাহক ভোগান্তি কমানোর জন্য নেয়া নানা উদ্যোগ যেন ভেস্তে না যায়, সেদিকে কর্তৃপক্ষ সজাগ দৃষ্টি রাখবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।