করোনাকালে পারিবারিক সহিংসতা দুঃখজনক
nakib
প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২০, ০৯:১৫ পিএম
করোনা মহামারিতে লকডাউনে দেশে নারী ও শিশুর ওপর সহিংসতা বেড়েছে। শারীরিক, মানসিক, যৌন নির্যাতন ছাড়াও ধর্ষণ ও হত্যা করার মতো ঘটনা ঘটছে। করোনার জন্য ঘরকেই সর্বোচ্চ নিরাপদ স্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও অনেক নারী ও কন্যাশিশুর জন্য ঘরও অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। এমন ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক। বিভিন্ন এনজিও ও মানবাধিকার সংস্থার পাশাপাশি জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও এই সময়ে বিশ্বব্যাপী নারী নির্যাতন উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধির দাবি করা হচ্ছে। জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিষয়ক সংস্থা-ইউএনএফপিএ এবং এভেনার হেলথ, জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় ও অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশে গত তিন মাসের লকডাউনে পারিবারিক সহিংসতা বেড়েছে ২০ শতাংশ। বাংলাদেশেও ৬৫ শতাংশ পরিবারে নারী ও শিশু পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট (স্টেপস) এবং জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যালায়েন্স (গ্যাড অ্যালায়েন্স)। মহিলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ, এপ্রিল ও মে এই তিন মাসে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪৮০ জন নারী ও শিশু। এর মধ্যে ২৬৭ জন নারী এবং ২১৩ জন শিশু। করোনার সময় এখন পুরুষরা ঘরে থাকছেন। মানবাধিকারকর্মীদের মতে, ঘরে আটকে পড়া, কাজ না থাকা, আয় কমে যাওয়া, খাবারের সংকট, ঋণের চাপসহ নানা কারণে পরিবারে বাড়ছে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত। ফলে বাড়ছে পারিবারিক নির্যাতন। লকডাউনের এ সময়ে ঘরে আবদ্ধ অনেক পুরুষই অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে হতাশাগ্রস্ত ও চিন্তিত হয়ে পড়ছেন। ফলে বাড়ছে তাদের মানসিক চাপও। নিজেকে হালকা করার কৌশল হিসেবে কারো কারো সব চাপ ও ক্ষোভ গিয়ে পড়ছে ঘরে থাকা নারী ও শিশুটির ওপর। এভাবেই বাড়ছে নারী ও শিশু নির্যাতনের পরিমাণ। এ ধরনের ঘটনা শিশুর মনোজগতে বিরূপ প্রভাব তৈরি করছে, বাধাগ্রস্ত করছে তার মানসিক বিকাশকেও। সরকার দ্রুততার সঙ্গে করোনা মোকাবিলায় যে পরিকল্পনা গ্রহণ করছে, সেখানে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিধানের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা ও সেগুলো কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা আবশ্যক। বিদ্যমান হেল্পলাইন নম্বরগুলো সবার কাছে ছড়িয়ে দিতে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। হেল্পলাইন নম্বরগুলোকে আরো বেশি সক্রিয় করে তোলা প্রয়োজন। নারী ও শিশু নির্যাতন ও তাদের প্রতি সহিংসতা রোধে বিশ্বের প্রভাবশালী ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া, দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এবং এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।