×

মুক্তচিন্তা

স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কতটা পর্যাপ্ত?

Icon

nakib

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২০, ০৯:৩৭ পিএম

স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কতটা পর্যাপ্ত?
কালো টাকাকে সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে বাজেটে। অবশ্য এর আগে প্রত্যেক সরকার দুয়েকবার দিয়েছিল। সাড়া মেলেনি। এবার শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়েছে। এতে শেয়ারবাজারের দালালরা অত্যন্ত উৎফুল্ল।
করোনার আক্রান্তে গোটা বিশ্বের সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্তব্ধ। এহেন পরিস্থিতিতে সবার ধারণা ছিল যে আগামী বছরের বাজেট আকারে ছোট এবং করোনাকে গুরুত্ব দেয়া হবে। না, তেমনটি হয়নি। বরঞ্চ চলতি বছরের বাজেটের চেয়ে কিঞ্চিৎ বড় এবং বিশাল ঘাটতি। চলতি বছরে ২০১৯-২০ সালে ৫,২৩,১৯০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষিত হলেও পরে সংশোধিত বাজেটে কমে ৫,০১,৫৭৭ কোটিতে দাঁড়ায়। অথচ ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫,৬৮,০০০ কোটির বাজেট ঘোষিত হয়। সরকারের আয় ৩,৭৮,০০০ কোটি টাকা। ঘাটতি ১,৯০,০০০ কোটি টাকা। এর কারণ বোধহয় দুটি। সরকার প্রতি বছর আগের বছরের চেয়ে বড় বাজেট দেয়, সেই ঐতিহ্য ধরে রাখা। দ্বিতীয় বছর অন্তে বাজেটের কত ভাগ লক্ষ্য অর্জিত হলো এবং এর ব্যর্থতার জন্য কারো দায়বদ্ধতা নেই। এমনকি যারা এসব নিয়ে গবেষণা করেন, তারাও জনগণকে পূর্ণ চিত্র দেন না। ফলে এ নিয়ে তেমন একটা আসে যায় না। বাজেটটা উপস্থাপনের সময় হইচই তারপর তেমন কিছু নেই। তবে এবারের বাজেটে করোনার কারণে স্বাস্থ্য খাত খুব বেশি গুরুত্ব পাবে, এটা প্রায় সবাই ধরে নিয়েছিলেন। কিন্তু গত বছরের চেয়ে সামান্য বেড়েছে। স্বাস্থ্যে রাখা হয়েছে ২৯,২৪৬ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য খাতে এবং করোনার জন্য যে অর্থ বরাদ্দ করেছে, সেটি কতটা পর্যাপ্ত তা বড় কথা নয়, সরকার কথা দিয়েছে আরো দেব। দুশ্চিতার বিষয় হলো যে Kleptocratic views এর আক্রমণে যেন সব টাকা শেষ না হয়ে যায়। সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এর যথাযথ ব্যবহার। প্রধানমন্ত্রী দুস্থদের জন্য অতি দ্রুত চাল বরাদ্দের নির্দেশ দিয়েছিলেন, আর জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি এহেন ভয়াবহ দুর্যোগের ভেতর হাজার হাজার মণ চাল আত্মসাৎ করে বসলেন। তবে আমরা সরকারকে সাধুবাদ জানাই যে দল-মত নির্বিশেষে ৭০-এর অধিক প্রতিনিধির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কোভিড ১৯-এর জন্য অনেক সরঞ্জাম লাগবে। আইসিইউর ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনবোধে অস্থায়ী হাসপাতাল খুলতে হতে পারে। সরকারের দায়িত্ব হবে কঠোর তত্ত্বাবধানে এসব কাজ সম্পন্ন করা। প্রয়োজনবোধে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নেয়া, সব টেন্ডার নেয়া হবে অনলাইনে। নির্বাচন কমিটি থাকবে সেখানেও সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি থাকবে। এই অনলাইনের কথায় আর একটি বিষয় চলে এলো। আগামী বাজেটে মোবাইল এবং ইন্টারনেটের রেট বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি অত্যন্ত অদূরদর্শী এবং কাণ্ডজ্ঞানহীন প্রস্তাব। যেখানে আধুনিক ডিজিটাল প্রস্তাবের ব্যবহার বাড়াতে হবে, সেখানে বিপরীতমুখী পদক্ষেপটা অন্যায়। শিক্ষাদীক্ষায় ইন্টারনেটের ব্যবহার বেশি হওয়া প্রয়োজন। বর্তমানে কোভিডের সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে, তাতে আগামী অক্টোবর মাসের আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাবনা একেবারেই কম। ছেলেমেয়েদের দেশে-বিদেশে অনলাইনে পড়াশোনা করতে হবে। ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোনের ওপর চার্জ বসিয়ে যে অর্থ আসবে, তা অন্যভাবে করা যেতে পারে। তেল দাম কমে আসছে, তাছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের দেশ-বিদেশে উভয় ক্ষেত্রে ভ্রমণ কমেছে, তাতে এখানে সাশ্রয় হতে পারে, আর সড়ক যোগাযোগ থেকে বরাদ্দ কমানো যেতে পারে। সড়ক বিভাগের সব প্রকল্প অনেক বিলম্বে সমাপ্ত হয়। বর্তমানে গাড়ির চাপও কম। তাই সড়ক বিভাগের কিছু প্রকল্পের বিলম্ব ঘটালে কোনো ক্ষতি হবে না। জীবন বাঁচানোর জীবিকার জন্য এটা করা প্রয়োজন। তবে স্বাস্থ্য এবং কৃষি এই দুই মন্ত্রণালয়ের কোনো প্রকল্পই বিলম্ব করতে দেয়া যাবে না। সব ধরনের কৃষিপণ্য উৎপাদন বহাল থাকতে হবে। আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে সতর্ক করা হয়েছে যে শতাব্দীর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর আমাদের স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন সরঞ্জামাদি অতিসত্বর সংগ্রহ করতে হবে, অবশ্য ন্যায্যমূল্যে। আজ মানুষ করোনা আতঙ্কের ফলে না করোনা, না অন্য অসুখের চিকিৎসা পাচ্ছে। চিকিৎসার জন্য রাস্তায় হাসপাতালের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে প্রাণ হারাচ্ছেন, এটি হতে দেয়া যায় না। তাই বর্তমানে সরকারের দুটি মন্ত্রণালয়ের কাজে অতীব গুরুত্ব থাকতে হবে যথা- স্বাস্থ্য ও কৃষি। কালো টাকাকে সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে বাজেটে। অবশ্য এর আগে প্রত্যেক সরকার দুয়েকবার দিয়েছিল। সাড়া মেলেনি। এবার শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়েছে। এতে শেয়ারবাজারের দালালরা অত্যন্ত উৎফুল্ল। আমরাও উৎফুল্ল হব যদি শেয়ারবাজার কালো টাকার আগমনে সয়লাব হয়। তবে একটি প্রশ্ন। বলা হয়েছে যে বিনিয়োগ করতে হলে তিন বছরের জন্য লকইন থাকবে। শেয়ার কিনে কেউ কি তিন বছর বসে থাকবেন, কেননা এই তিন বছরে অনেক পরিবর্তন ঘটতে পারে। আবার লকইন তুলে দিলে আরেক বিপদ। যেমন ১৯৯৬ সালে বিপর্যয় ঘটল। বিএনপির অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান যখন দেখলেন যে প্রচুর বিদেশি অর্থ দিয়ে শেয়ার কেনা হচ্ছে, তখন তিনি লকইন প্রয়োগ করলেন। ইতোমধ্যে ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কিবরিয়া অর্থমন্ত্রী হলেন। তাকে ভুল বুঝিয়ে লকইন উঠানো হলে। তারপর ঘটল মহাবিপর্যয়। মাঝখানে নিরীহ বিনিয়োগকারী সর্বস্বান্ত হলেন। বিশ্বখ্যাত অর্থনৈতিক সাপ্তাহিকী ‘The Economist’ লিখল Slaughter of the Innocent. আগামী বাজেটে সরকার ব্যাংক এবং নন-ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা ধার নেবে। সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা নেয়ার কথা। সঞ্চয়পত্রে একটু সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দিলে ২০ হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করতে বেগ পেতে হবে না। নন-লিস্টেড কোম্পানির দেয় করপোরেট ট্যাক্স শতকরা ২.৫ ভাগ কমানো হয়েছে। লিস্টেড কোম্পানিকে শেয়ারহোল্ডারদের চাপের কারণে এবং BSECএবং DSE-এর বিধান মানার জন্য বার্ষিক সাধারণ সভার আয়োজন করতে হয়। নন-লিস্টেড কোম্পানির বেলায় সতর্ক হওয়া প্রয়োজন জয়েন্ট স্টক কোম্পানির রেজিস্ট্রারের। তবেই না সরকারের করপোরেট কর আদায় হবে। সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ : সাবেক ইপিসিএস ও কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App