×

মুক্তচিন্তা

করোনাকালের গতানুগতিক বাজেট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২০, ০৬:০৬ পিএম

অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় দুর্যোগে আপতিত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারকল্পে এ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে দেশে ও বিদেশে। কিন্তু মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত বৈধ আয় ও অবৈধভাবে অর্জিত অর্থকে অর্থনীতিতে আনার জন্য যে ‘টোপ’রূপী সুযোগ দেয়া হয়েছে তা উপরোক্ত কঠোর পদক্ষেপের (জিরো টলারেন্স) দৃষ্টিভঙ্গির পরিপন্থি। এটি প্রকারান্তরে ‘শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে মুক্তি সংগ্রামে বিজয়ী গণপ্রজাতন্ত্রী দেশে’ গণস্বার্থ শোষণের মাধ্যমে অবৈধ অর্জনকে প্রশ্রয় ও প্রযত্ন প্রদানের শামিল।

কোভিড ১৯-এর স্বাস্থ্যঝুঁকি বাংলাদেশকে শেষ পর্যন্ত কোথায় নিয়ে যাবে, তা এখনো অজানা। বিশ্ব অর্থনীতি মন্দায় অর্থনীতি স্বাভাবিক হতে কত দিন লাগবে, তাও বলতে পারছেন না কেউ। এ রকম এক কঠিন সময়ে বাজেট দেয়া মোটেই সহজ নয়। এসব ঝুঁকির কথা উল্লেখ করেই, ‘করোনা ভাইরাসকে সঠিকভাবে মোকাবিলা ও এর অর্থনৈতিক প্রভাব দৃঢ়তার সঙ্গে কাটিয়ে ওঠার স্বার্থে’ গতানুগতিক বাজেট থেকে কিছুটা সরে আসার কথা বলা হয়েছে। এ জন্য উদাহরণও দেয়া হয়েছে ‘স্বাস্থ্য খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার’ দেয়ার কথা। এই খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ঠিকই, তবে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া খাত স্বাস্থ্য খাত নয়। কোভিড ১৯-এর ধাক্কায় সরকারের আয় ও বেসরকারি বিনিয়োগে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যেও চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধন এসেছে সামান্য। বলা হয়েছে ‘রাজস্ব আয় এবার কম হবে মাত্র ২৯ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা’। আর এর ওপর ভিত্তি করেই নতুন ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য বড় আয়-বড় ব্যয়ের বিশাল (এযাবৎকালের বড়) এক বাজেটের প্রস্তাব করা হয়েছে। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যও ঊর্ধ্বমুখী, ৮ দশমিক ২ শতাংশ। জিডিপির প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন প্রত্যাশাতেই থাকতে দেয়া ভালো। বাজেটের এই উচ্চারিত উচ্চকিত লক্ষ্য পূরণ হবে যদি শক্তিশালী করোনা ভাইরাস অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে অতি দ্রুত দুর্বল হয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। একই সঙ্গে আরো কিছু ঘটনা দ্রুত ঘটতে হবে- ১. বিশ্বমন্দা দ্রুত কেটে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতে বাংলাদেশের পোশাকের চাহিদা বাড়বে, ২. প্রবাসী শ্রমিকদের ফিরিয়ে নেবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো, ৩. দেশের মধ্যে সাধারণ মানুষের হাতে নগদ অর্থ থাকবে, ৪. বাড়বে চাহিদা, ৫. কেউ চাকরি হারাবেন না, কারো বেতনও কমবে না। সর্বোপরি ৬. বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ জিডিপির ১২ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২৫ দশমিক ৩ শতাংশ হবে। অথচ বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ১ শতাংশ বাড়াতে ৫ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে যে অর্থনীতিতে, যখন সেই অর্থনীতিতে করোনা ভাইরাস বেসরকারি খাতনির্ভর বেসরকারি বিনিয়োগ এক অর্থবছরেই জিডিপির ২৪ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কমে ১২ দশমিক ৭ শতাংশ নেমে যাওয়ার মতো ক্ষতি ইতোমধ্যে সাধন করেছে। ভবিষ্যতের কথা ভবিষ্যতে। অর্থনীতির ‘উত্তরণের’ জন্য বেশ কিছু প্রস্তাব ও নানা ধরনের পরিকল্পনার কথা আছে বাজেটে। অর্থনীতির সামনে যত ধরনের ঝুঁকি ও আশঙ্কা রয়েছে এবং বাংলাদেশ কী করতে চেয়েছে এবং কী করা যায়নি এসব সাহসী স্বীকৃতি আছে এবারের বাজেটে। শুল্ক ও করে ছাড় দেয়া হয়েছে স্থানীয় শিল্পকে, দীর্ঘ পাঁচ বছর পর ছাড় মিলেছে ব্যক্তিশ্রেণির আয়করেও। উদ্যোক্তাদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে করপোরেট করের হার কমানোর ঘোষণাও আছে। আবার সিগারেট, গাড়ি ও মুঠোফোনে কথা বলার ওপর কর বাড়ানো হয়েছে। এই তিন খাতেই কর বা শুল্ক আদায় অনেকটা সহজ, সহজ উৎসে কর আদায়, এসব সহজ পথে হাঁটা গতানুগতিকভাবে এবারের বাজেটেও দেখা যায়। যদিও ধ্রুপদ ধারণায় বাজেট হচ্ছে জনগণ তথা অর্থনীতির কাছে সরকারের দায় এবং সরকারের সঙ্গে জনগণের দায়িত্ববোধের সমঝোতার সংসদে পাস হওয়া একটি আইনগত দলিল। বাজেটে সম্পদের বণ্টন বৈষম্য নিরসনের, আয় উপার্জনে সমতায়নের দ্বারা একটি ন্যায়-নীতিনির্ভর জনকল্যাণমুখী সামষ্টিক অর্থনীতি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণের কৌশলপত্র-প্রতিশ্রুতিও থাকে। এবারের বাজেট বানানোর সময়টা করোনাকালের হওয়ায় এবারের বাজেটে সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং বাস্তবায়ন কৌশল গণআলোচনা-পর্যালোচনার সুযোগ ছিল না বললেই চলে। তবে মিডিয়া ও চিন্তা চৌবাচ্চাসহ অনেক চিন্তাশীল সংস্থা, সংগঠন, সমিতি যতটা সম্ভব ভার্চুয়াল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার আয়োজন করেছে। সরকার সেসব বিচার-বিবেচনায় কতটুকু এনেছে তা খুব একটা বোঝার উপায় নেই প্রস্তাবিত বাজেটটিতে। সরকারসহ সবাই এটা অনুধাবন করেছে বলে প্রতীয়মান হয় যে এবারে করোনাকালে চলতি এবং আগামী বছরের বাজেটটি এ পর্যায়ে গতানুগতিক, উন্নয়ন অভিমুখীকে উচ্চাভিলাষীকরণের পরিবর্তে ঘাটতিপ্রবণ হবে। এটি অবশ্যই ‘অচল অর্থনীতিকে সচল রাখার, বেকার ও ক্ষুধা রোখার, করোনায় ক্ষতি পুনরুদ্ধার ও পুনর্বাসন, করোনায় সৃষ্ট মন্দা মোকাবিলা এবং সম্ভাব্য সুযোগের (কৃষি, আইটি, দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার খাতে অধিক মনোযোগ ও দক্ষ জনবল সৃষ্টিসহ বিদেশ ফেরত বিদেশি বিনিয়োগ ঘরে আনা) সদ্ব্যবহার’ হতে হচ্ছে বা হবে। বৈশ্বিক পর্যায়ে করোনার প্রাদুর্ভাব এখনো যেভাবে গেড়ে বসে আছে তাতে বিশ্ব ও জাতীয় অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি এবং এর হিসাব-নিকাশের ভিত্তি এখনো বারবার পরিবর্তনীয় অবস্থায়, সেহেতু এ রকম একটা টলটলায়মান ও অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে স্থির প্রাজ্ঞ বছরব্যাপী বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট প্রস্তাব পেশ ও পাস বাস্তবসম্মত ছিল বলে প্রতীয়মান হয়নি। ইন্দোনেশিয়া গত তিন মাসে তাদের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট চারবার পরিবর্তনের মাধ্যমে বাস্তবায়নানুগ করেছে। অবস্থাদৃষ্টে অনুধাবিত হয়েছিল যে এবারের চলমান এবং সামনের করোনা যুদ্ধকালের জন্য বাজেটটি সাময়িক ‘আপৎকালীন বাজেট’ আকারে এবং যুদ্ধশেষে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পূর্ণাঙ্গ বাজেট সংশোধনের সুযোগ রাখাই সমীচীন হবে। আমাদের দেশে একবার বাজেট ফর্মালি পাস হলে তা সংশোধনের সাংবিধানিক প্রথা হলো ওই অর্থবছর শেষ হওয়ার মাসে সংশোধিত বাজেট হিসেবে পেশ ও পাসের। এবারে করোনার কারণে বিষয়টি বাস্তবতার নিরিখে এখনো বিবেচনা প্রয়োজন। জিডিপি প্রবৃদ্ধির ধারা ঊর্ধ্বগামী রাখা বা থাকার সুবাদে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের পথ সুগম রাখতে বাজেটের আকার বেড়েছে বিগত বেশ কয়েক বছর। বাড়তি সেই ব্যয়ের অর্থায়ন অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় দ্বারা পূরণ সম্ভব করতে পর্যাপ্ত উপায় উপলক্ষ তৈরির চেষ্টা থাকলেও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় মূলত এবং মুখ্যত কঠিন শর্তের ঋণনির্ভরই হয়ে পড়ছিল অর্থনীতি। লক্ষণীয় জিডিপির প্রচারিত প্রবৃদ্ধি সংশ্লিষ্ট সব খাতে এখন করোনাকালে বাস্তবে সমিল পাওয়া যেমন কঠিন হচ্ছে, তেমনি অর্থনীতিতে আয় বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়ে ক্ষমতার বলয় বিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে সমবণ্টন ব্যবস্থাপনাও ক্ষমতার অপব্যবহারের বলয়ে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর রাজস্ব জোগানদাতা ব্যাংকিং সেক্টর বারবার পুনঃঅর্থায়ন, সুদ মওকুফ, পুনঃতফসিলের মাধ্যমে, লুট ও পাচারের পথ প্রশ্রয় পাওয়ায়, তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দুর্বলতায় বেশ দুর্বল এখন। জিডিপির অব্যাহত প্রবৃদ্ধিতে স্বয়ম্ভর হয়ে মধ্যম আয়ের পথে হাঁটা একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য রাজস্ব আয়ই যে মহার্ঘ, ক্রমান্বয়ে সফলতার সঙ্গে অভ্যন্তরীণ সম্পদ দিয়েই উন্নয়ন-অনুন্নয়ন ব্যয় নির্বাহের আকিঞ্চন আকাক্সক্ষা পূরণ হওয়ার কথা ছিল বা আছে। আরো ছিল এজন্য যে, রাজস্ব আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের বাজেট বাস্তবায়ন সক্ষমতা বৃদ্ধির পারস্পরিক সম্পর্ক জড়িত। অথচ একদিকে ট্যাক্স জিডিপি রেশিও বাড়ানো এখনো যেমন মুখ্য চ্যালেঞ্জ, সক্ষম সব করদাতাকে প্রদেয় করের আওতায় আনা, রাজস্ব আহরণ ও ব্যয় ব্যবস্থাপনা খাতে আবশ্যকীয় সংস্কার সংস্থাপনে ও কার্যকারিতায় দীর্ঘসূত্রতা এই পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করেছে। করোনাকালে, করোনা মোকাবিলার সময় তা প্রকট হয়ে উঠছে। এখন করোনাকালে রাজস্ব আয় বাড়ানোর সুযোগ যেমন সীমিত এবং অপরদিকে শুধু চলমান মেগা প্রকল্পগুলো ব্যয় সাশ্রয়ী হয়ে সমাপ্তকরণের আবশ্যকতায় (বিলম্বে হলে ব্যয় আরো বাড়বে) এবং অচল অর্থনীতি সচলকরণে স্টিমুলাস প্যাকেজ অর্থায়ন এবং বেকার ও ক্ষুধা রুখতে সামাজিক নিরাপত্তা বলয় বাড়ানো ও কাজসহ খাদ্য কর্মসূচি বাস্তবায়নে যে বাড়তি অর্থের প্রয়োজন হবে তার সামষ্টিক অর্থনেতিক ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশ অর্থনীতির জন্য এই মুহূর্তের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, দাঁড়াবে। এখানে অপশন দুটি- হয় অর্থনীতিকে আরো ঋণনির্ভর করা অথবা ইতোমধ্যে অবৈধভাবে অর্জিত অর্থের দ্বারা সৃজিত বৈষম্য ও বিশৃঙ্খলা দূরীকরণে কঠোর রাজনৈতিক-অর্থনীতি পদক্ষেপের মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগ প্রবাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ চাহিদা সৃষ্টি ও সরবরাহ সঞ্চালনের মাধ্যমে রাজস্ব আয় বাড়ানো। শেষোক্ত অপশনটি করোনা মোকাবিলা ও টেকসই উন্নয়নের স্বার্থেই প্রয়োজন। করোনা বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে যে পরিবর্তন সূচনা করতে চলেছে তাতে বাংলাদেশকে ‘একলা ও নিজের মতো চল’ পরিস্থিতিতে অবগাহন করতেই হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বহির্মুখীনতা (এক্সপোর্ট, রেমিট্যান্স, ওডিএ ও এফডিআই নির্ভরশীলতা) থেকে অন্তর্মুখীন ও স্বনির্ভরতার পথে হাঁটতে হবে। সেখানে সমাজ ও অর্থনীতিতে সম্পদ বণ্টন বৈষম্য ব্যবস্থাপনার ঊর্ধ্বমুখীনতা প্রকারান্তরে বাধার সৃষ্টিই করবে। এশিয়ার মধ্যে সহজে ধনী হওয়ার মতো শীর্ষ সুযোগের দেশে, সুবিধাভোগীরা প্রকারান্তরে আরো সম্পদ কুক্ষিগত করার প্রয়াস পাবে, যদি তাদের ভালো রাখতে, আড়াল করতে প্রণোদনা দেয়ার সুযোগ তৈরি অব্যাহত রাখা হয় এবং তাদের অর্থ উদ্ধার ও অর্থনীতিতে ফেরত আনার কঠোর পদক্ষেপে না যাওয়া হয়। অবৈধভাবে অর্জিত অর্থকে করের আওতায় আনার জরুরিয়তাও রয়েছে। এর একটা শুমার ও সংস্কারের প্রত্যাশা ছিল বাজেটে। অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় দুর্যোগে আপতিত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারকল্পে এ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে দেশে ও বিদেশে। কিন্তু মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত বৈধ আয় ও অবৈধভাবে অর্জিত অর্থকে অর্থনীতিতে আনার জন্য যে ‘টোপ’রূপী সুযোগ দেয়া হয়েছে তা উপরোক্ত কঠোর পদক্ষেপের (জিরো টলারেন্স) দৃষ্টিভঙ্গির পরিপন্থি। এটি প্রকারান্তরে ‘শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে মুক্তি সংগ্রামে বিজয়ী গণপ্রজাতন্ত্রী দেশে’ গণস্বার্থ শোষণের মাধ্যমে অবৈধ অর্জনকে প্রশ্রয় ও প্রযত্ন প্রদানের শামিল।

ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ : সরকারের সাবেক সচিব, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান।

[email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App