×

সম্পাদকীয়

কমিটির সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়ন করুন

Icon

nakib

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২০, ০৯:৪০ পিএম

বর্ষা মৌসুম শুরু হয়েছে। এই সময় প্রায় প্রতি বছর পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে থাকে। পাহাড় ধস রোধে নেই টেকসই ব্যবস্থাপনা বা পরিকল্পনা। পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানসহ চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু এড়াতে প্রতি বছর বর্ষার শুরুতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি নেয়া হলেও তা কোনো কাজেই আসছে না। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাহাড়ে লক্ষাধিক মানুষের বসবাস উদ্বেগজনক। ২০১৭ সালে পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানসহ চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে অন্তত ১৩০ জন নিহত হয়েছিলেন। এর আগে ২০০৭ সালে মারা গিয়েছিলেন ১২৭ জন। দুঃখজনক হলো, বিয়োগান্তক এসব ঘটনা আমরা হয়তো ভুলে গেছি। স্বাভাবিকভাইে প্রশ্ন আসবে- এর প্রতিকারে কী করতে পেরেছি আমরা? প্রশাসনের তরফে দৃশ্যমান যে তৎপরতা তা বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ের ঢালু এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিয়ে নেয়ার চেষ্টা সীমাবদ্ধ। এর কিছু সুফল অবশ্যই পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু যা করা যায়নি বা যাচ্ছে না তা হলো- এসব প্রাণহানির ঘটনায় কাউকে দায়ী করা, ঝুঁকি নিয়ে যে দরিদ্র লোকরা ওই রকম পাহাড়ের ঢালুতে বাস করছে তাদের নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা করা। আর সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা পাহাড় ধস ঠেকানোর ব্যবস্থা গ্রহণে। শুধু প্রাকৃতিক কারণেই পাহাড় ধসে পড়ছে তা কিন্তু নয়। নিয়ন্ত্রণহীন পাহাড় কাটা, পাহাড়ে স্থাপনা নির্মাণসহ আরো কিছু অপরিণামদর্শী মনুষ্য তৎপরতার পরিণামে ধসে পড়ছে পাহাড়। বর্ষায় প্রাণহানি ছাড়াও পরিবেশ-প্রকৃতিতে এর ভয়ঙ্কর বিরূপ প্রভাব নিয়ে কারো কোনো চিন্তা আছে বলে মনে হচ্ছে না। নির্বিচারে পাহাড় কেটে অসংখ্য ঘরবাড়ি তৈরি করা হয়েছে। পাহাড় কেটে চলছে প্লট ও ফ্ল্যাট বিক্রির রমরমা বাণিজ্য। এমনকি সরকারি উদ্যোগেও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের নামে পাহাড় কাটার অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘকাল ধরে পাহাড় কাটা, স্থাপনা নির্মাণ, পাহাড়ের গায়ে বেড়ে ওঠা গাছপালা উজাড়ের ফলে পাহাড়ের অবশিষ্ট মাটি আলগা হয়ে যায়। যার ফলে বৃষ্টি হলে পাহাড়ের গা বেয়ে তীব্র বেগে নেমে আসা ঢল আলগা মাটি ধুয়ে নিয়ে নিচে নামতে থাকে। পাহাড় হয়ে পড়ে দুর্বল, জীর্ণশীর্ণ। ঘটে পাহাড় ধস। মারা যায় পাহাড়ের ঢালে বস্তিতে বাস করা নিম্ন আয়ের হতদরিদ্র, ছিন্নমূল মানুষ। শুধু বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ের ঢালের বসতি উচ্ছেদের ব্যবস্থা করলেই সমস্যার সমাধান হবে না, পাহাড় ধস ঠেকানোরও উদ্যোগ নিতে হবে। বন্ধ করতে হবে পাহাড় কাটা, পাহাড়ের বৃক্ষ উজাড়, উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ। ২০০৭ সালের মর্মান্তিক পাহাড় ধসের ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি পাহাড় ধসের ২৮টি কারণ নির্ধারণ করে ৩৬ দফা সুপারিশ প্রণয়ন করেছিল, যা আজো বাস্তবায়িত হয়নি। ঘূর্ণিঝড় বা বৃষ্টিপাতজনিত কারণে পূর্বের মতো আরো একটি বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা একেবারেই অমূলক নয়। এ অবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সেখান থেকে সরিয়ে পুনর্বাসনের বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া উচিত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App