×

বিনোদন

প্রেক্ষাগৃহই শেষ ভরসা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২০, ১১:২৪ এএম

প্রেক্ষাগৃহই শেষ ভরসা

মুক্তির অপেক্ষায় দিন গুনছে ‘বিশ্বসুন্দরী’

প্রেক্ষাগৃহই শেষ ভরসা

১৩ মার্চ মুক্তির কথা থাকলেও পিছিয়ে যায় ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’

বাংলদেশে ২৬ মার্চ থেকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সরকারি ছুটি ঘোষিত হয়। এ ছুটি কোনো আনন্দভ্রমণ বা অনুষ্ঠানের জন্য নয়। সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাসের লাগামহীন ঘোড়া দাবড়ে বেরিয়ে মার্চের শেষে তাণ্ডব চালাতে শুরু করে এ দেশেও। করোনার হাত থেকে বাঁচতেই সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় সব প্রকার শুটিং কার্যক্রম, লকডাউনের কবলে পড়ে সারাদেশের প্রেক্ষাগৃহগুলো! ফলে মার্চ মাসের শেষ দিকে মুক্তির অপেক্ষায় থাকা সিনেমাগুলো অনিশ্চয়তায় ঘরবন্দি হয়ে যায়।

বিশেষ করে ছোটপর্দার নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীর প্রথম সিনেমা ‘বিশ্ব সুন্দরী’। সান মিউজিক এন্ড মোশন পিকচার্স প্রযোজিত এ সিনেমাটি গত ৮ মার্চ সেন্সরবোর্ড থেকে প্রশংসা সহকারে মার্চের ২৭ তারিখ মুক্তির ছাড়পত্র পেলেও করোনা ভাইরাসের কারণে সিনেমা হলের আলো ছায়ায় আসতে পারেনি চয়নিকা চৌধুরীর প্রথম সন্তান! চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদ ও পরিমনি অভিনীত ‘বিশ্ব সুন্দরী’র ‘তুই কি আমার হবি রে’ গানটি শ্রোতা-দর্শক মহলে জনপ্রিয়তা পেলে সিনেমাটি নিয়ে দর্শকদের ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়। কিন্তু করোনা ভাইরাসের ফলে মুক্তি অনিশ্চয়তায় পড়া সিনেমাটির ভাগ্য এখন কোনদিকে সে বিষয়ে দর্শকদের কৌত‚হল, সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহে কবে আসবে? এদিকে করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা উপেক্ষা করে দীর্ঘ তিন মাস বিরতির পর শুটিং কার্যক্রম শুরু হলেও চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি ও হল মালিক কর্তৃপক্ষ সিনেমা হল খুলে দেয়ার ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত চ‚ড়ান্ত করেনি। হল মালিকদের একপক্ষ চাইছে সিনেমা হল খুলে দেয়া হোক, আর একপক্ষ বলছে এ পরিস্থিতি কাটলেই খোলা হোক সিনেমা হল। কিন্তু সিনেমার নির্মাতারা কী চান? এ পরিস্থিতির ভেতরই তার সিনেমাটি হলে আসুক? প্রশ্নের উত্তর জানতে যোগাযোগ হলো চয়নিকা চৌধুরীর সঙ্গে। জবাবে তিনি বলেন, সিনেমা হলগুলো এখনো খোলেনি। তাছাড়া সিনেমা হলগুলো খুলে দিলেই যে দর্শকরা সিনেমা দেখার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়বে তা কিন্তু নয়। নিয়ম করে শুটিং করা হচ্ছে কিন্তু নিয়ম করে সিনেমা হল খোলা হলে ঠিক কতটুকু নিয়ম মানা হবে এবং মানলেও দর্শক কতটা পাওয়া যাবে? মানুষের মনে করোনা নিয়ে যে ভয়টা গেঁথে গেছে তা সহজেই ছাড়বে না। তবুও রবীন্দ্রনাথের কথার মতো, ‘মনেরে আজ কহ যে/ভালোমন্দ যাহাই আসুক/সত্যরে লও সহজে’। সহজভাবে সিনেমা মুক্তি দেয়ার আপাতত কোনো পরিকল্পনা নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে, সিনেমা হলগুলো খুললে এবং দর্শকের মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থা তৈরি হলেই সিনেমা হলে আসবে ‘বিশ্ব সুন্দরী’।

এদিকে ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রিতে আলোচিত সিনেমা ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’। নির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের প্রথম সিনেমা। দর্শক মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এ সিনেমাটি মুক্তির কথা ছিল গত মার্চের ১৩ তারিখ। যেহেতু মার্চ মাসেই বাংলাদেশে করোনা এক রকম হামলা করে বসেছিল তখনই মানুষের নিরাপত্তার কথা ভেবে নির্মাতা সিনেমাটির মুক্তি স্থগিত করেন। ধীরে ধীরে করোনা ভাইরাস এদেশে লাগাম ছাড়া হয়ে যাওয়ায় এই সিনেমাটিও বর্তমানে অনিশ্চয়তার পেন্ডুলামে দুলছে। সিনেমা হল খোলা নিয়ে যেহেতু এ সময়ে একটি আলোচনা শুরু হয়েছে সেহেতু নির্মাতা তার সিনেমা মুক্তি নিয়ে কী ভাবছেন? মাসুদ হাসান উজ্জ্বলকে জিজ্ঞেস করতেই তিনি সোজাসাপ্টাভাবে জানালেন, ‘পরিস্থিতি এখনো অতটা স্বাভাবিক হয়নি। যেসব দেশে সিনেমা হল খুলেছে বা খোলার জন্য প্রস্তুতি চলছে তারা মৃত্যু ও আক্রান্তের হার কমিয়ে তারপরই সিনেমা হল খুলছে। কিন্তু আমরা বর্তমানে যে অবস্থায় রয়েছি সেটা আমাদের জন্য ভয়াবহ। সুতরাং এ সময়ে সিনেমা হল খুলে দর্শকদের সিনেমা হলে ডেকে আনাটা মৃত্যুর মুখোমুখি করা। ফলে সিনেমা হল না খোলাই উচিত। যেহেতু আমি সিনেমা হল খোলার পক্ষে নই তাই সিনেমা মুক্তি দেয়া নিয়ে এখন কিছু ভাবছি না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই না হয় মুক্তি দেয়া যাবে। আর এতটা সময় অপেক্ষা যেহেতু করেছি তখন এত তাড়াহুড়োও নেই।’ নতুন দুই নির্মাতা মানুষকে বিপদে ফেলে তাদের সিনেমা যেমন মুক্তি দিতে চায় না, তেমনই চায় না দর্শক শূন্য হলে সিনেমাকে মুক্তি দিতে। ফলে তারা একটি স্বাভাবিক পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা করছে যে সময়ে দর্শক আগের মতো হৈ হৈ করে সিনেমা দেখবে, আলোচনায় মেতে উঠবে।

[caption id="attachment_225499" align="aligncenter" width="700"] ১৩ মার্চ মুক্তির কথা থাকলেও পিছিয়ে যায় ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’[/caption]

অন্যদিকে দেবাশিষ বিশ্বাস পরিচালিত সিনেমা ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ টু’। আরটিভি প্রযোজিত এ সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়ক বাপ্পি চৌধুরী ও চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস। এই সিনেমাটিও গত মার্চ মাসে মুক্তি দেয়ার কথা ছিল। সেন্সরবোর্ড থেকে ছাড়পত্র পেয়ে সিনেমাটি গত ২০ মার্চ সিনেমা হলে আনার সব প্রস্তুতিও নিয়েছিল নির্মাতা ও প্রযোজনা সংস্থা। কিন্তু করোনার কারণে মানুষ ধীরে ধীরে ঘরবন্দি হতে থাকলে হলগুলো দর্শক শূন্য হতে থাকে। ফলে সিনেমাটি সব কিছু বিবেচনায় মুক্তি পায়নি প্রেক্ষাগৃহে। সিনেমাটিতে প্রথমবার জুটিবদ্ধ হয়ে অভিনয় করেছেন বাপ্পি ও অপু বিশ্বাস। এ নিয়ে দর্শক মহলে যেমন আগ্রহের শেষ নেই, তেমনই দেবাশিষ বিশ্বাসের সিনেমা নিয়ে কথিত আছে- তার সিনেমা একটু অন্য রকম। সে ক্ষেত্রে দর্শক মহলে আলোচনায় ছিল সিনেমাটি। এখন মুক্তি অনিশ্চয়তায় সিনেমাটি কি তাল হারিয়ে ফেলবে? কিংবা যেহেতু আরটিভি সিনেমাটি প্রযোজনা করেছে, তাহলে চ্যানেলেই কি মুক্তি দেয়া হবে? প্রশ্নের জবাবে দেবাশিষ বিশ্বাস বলেন, ‘সিনেমাটির প্রতিটি দৃশ্য নেয়া হয়েছে বড়পর্দার জন্য। সেখানে ছোটপর্দায় মুক্তি দেয়া নিয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই। আরটিভি চাইলেই ভালো প্রচারণা করে সিনেমাটি চ্যানেলে চালাতে পারবে। কিন্তু সিনেমা হলে মুক্তি পাওয়া আর চ্যানেলে প্রচার হওয়া এক বিষয় নয়। তাই তাড়াহুড়ো করে সিনেমা হলের যে বিপুল দর্শক সেটি হারাতে চাই না। অপেক্ষা করছি, স্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হোক; সিনেমা হলেই মুক্তি পাবে ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ টু’ সিনেমা।

উপরোক্ত সিনেমাগুলো ছাড়াও বেশকিছু সিনেমার মুক্তি পায়নি করোনার তাণ্ডবে। পরিচালক এম এ রাহিমের প্রথম নির্মিত সিনেমা ‘শান’। গত ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে সিনামাটির কাজ শুরু হলেও করোনার কারণে এলোমেলো হয়ে যায় সব। সিয়াম আহমেদ ও পূজা চেরী অভিনীত জাজ মাল্টিমিডিয়ার এ সিনেমার সম্পাদনা ও গানের শুটিং বাকি থাকায় আর সেন্সরবোর্ডে জমা দেয়া সম্ভব হয়নি। ফের কবে শুরু হবে সিনেমাটির কাজ আর কবেই বা মুক্তি পাবে? এ প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নির্মাতা বলেন, ‘শান’-এর সম্পাদনা আমরা ভারতে করছিলাম। করোনার ফলে আপাতত সম্পাদনার কাজ বাকি। এছাড়া গানের শুটিংও বাকি রয়েছে। এ সময়ে শুটিং অনুমতি পাওয়া গেলেও আমাদের প্রস্তুতি নিতে খানিকটা সময় লাগছে। ফলে নির্দিষ্ট করে বলতে পারছি না কবে শুটিং শুরু করব। আর মুক্তির বিষয়ে বললে কাজ শেষ করতে পারলেও সিনেমাটি হলে মুক্তি দেয়া নিয়ে এখনই তাড়াহুড়ো করছি না। পরিস্থিতি আমাদের অনুক‚লে নয়। ফলে এ সময়ে মানুষকে বিপদে ফেলে সিনেমা মুক্তি দেয়াটা যেমন অনুচিত তেমনই দর্শক সিনেমাটি দেখতে না আসলে মুক্তি দেয়াটাই বৃথা। তাই সময় নিয়েই ‘শান’ সিনেমা হলে আসবে। এছাড়াও ‘জিন’, ‘বান্ধব’, ‘গোর’, ‘মিশন এক্সট্রিম’, ‘বিদ্রোহী’, ‘মন দেব মন নেব’, ‘আমার মা’, ‘পরাণ’, ‘দিন দ্য ডে’, ‘মিশন এক্সট্রিম টু’, ‘অপারেশন সুন্দরবন’, ‘ইত্তেফাক’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘নদীর বুকে চাঁদ’, ‘সাইকো’, ‘গাঙচিল’, ‘শনিবার বিকেল’, ‘ওস্তাদ’, ‘ক্যাসিনো’, ‘পাপ-পুণ্য’, ‘আগামীকাল’, ‘আদম’, ‘সিক্রেন্ট এজেন্ট’, ‘ডেঞ্জারম্যান’, ‘স্বপ্নবাজি’, ‘ঢাকা ২০৪০’, ‘বিক্ষোভ’, ‘মানুষের বাগান’, ‘পেয়ারার সুবাস’, ‘কমান্ডো’ সিনেমাগুলো মুক্তির প্রহর গুনছে কেবল। করোনার এই তিন মাসে আটকা পড়া সিনেমাগুলো প্রেক্ষাগৃহ ব্যতীত অন্য কোনো মাধ্যমে মুক্তি দেয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। নির্মাতাদের একই সুর ‘প্রেক্ষাগৃহই শেষ ভরসা’। জমজমাট দর্শক, হৈ হৈ উৎসবমুখর পরিবেশ মিস করতে চাচ্ছেন না কেউ। তবে কেউ কেউ হাঁটছেন ভিন্ন পথে। যেমন শাহীন সুমন নির্মিত শাকিব খান অভিনীত ‘বিদ্রোহী’ সিনেমাটি অ্যাপে মুক্তি দেয়ার পরিকল্পনা করছেন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান শাপলা মিডিয়া। শামীম আহমেদ রনী’র ‘বিক্ষোভ’ও হাঁটছে সেই পথে। এখন অপেক্ষার পালা! উৎসুখ করোটির প্রশ্ন, কবে স্বাভাবিক হবে জীবনযাত্রা? কবে সচল হবে সিনেমা হল? আলোছায়ার খেলা দেখে রোমাঞ্চিত হবে সিনেমাপ্রেমীরা? এ সমস্ত প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হবে নতুন সূর্যোদয়ের, নতুন ভোরের। যে ভোরের বাতাসে বুক ভরে নিয়ে বেঁচে উঠবে আটকে থাকা সিনেমাগুলো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App