×

সাহিত্য

ছোটবেলার ঢাকা ফিরে পেয়েছি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২০, ১১:০০ এএম

ছোটবেলার ঢাকা ফিরে পেয়েছি

নিসার হোসেন

বিশেষ সাক্ষাৎকার নিসার হোসেন শিল্পী

নিসার হোসেন। একজন মানবতাবাদী চিত্রশিল্পী ও শিক্ষক। একজন শিল্পী তার পুরো মেধা, শ্রম ও দক্ষতা যখন মানুষের মঙ্গলাকাক্সক্ষায় নিয়োজিত করেন, তাকে আমরা বলতে পারি যথার্থ মানবতাবাদী শিল্পী। নিসার হোসেন এমনই একজন ঋজু প্রতিকৃতির সমসাময়িক শিল্পী। তার সমসাময়িক ভাবনা-গবেষণা ও শিল্পকর্ম তরুণদের সামনে এক অনুকরণীয় শিল্প-ব্যক্তিত্ব। বৈশ্বিকতার নানামুখী জোয়ারে যখন তরুণ শিল্পীরা উদভ্রান্ত হয়ে পাশ্চাত্যের শিল্প হাতড়ে বেড়াচ্ছে, তখন তিনি দেশকে অনুভব করার পরামর্শ দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন তিনি। করোনাকাল কেমন কাটছে ভোরের কাগজের এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আঁকছিও না পড়ছিও না। ব্যক্তিগত কোনো কাজও করছি না। বিধি মেনে বানাচ্ছি পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট বা পিপিই। যা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় চারুশিল্পীরা কিন্তু শুধুমাত্র রং তুলি হাতে যুদ্ধে ছিলেন না। তাদের কেউ অস্ত্র ধরেছেন, কেউ ত্রাণ সংগ্রহের জন্য ছুটে বেরিয়েছেন। এখন আমাদের সেই অবস্থা। আমরা মানুষের পাশে দড়াতে চাই। যার জন্য চিকিৎসকদের পিপিই দেয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের কাজ শুরু করেছি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সঙ্গে শিল্ডের ডিজাইন করলাম। আরেকটা ডিজাইন করলাম বারডেমের সঙ্গে। এ পর্যন্ত নিজের হাতে ১২শ শিল্ড বানিয়েছি এবং সেসব ডিস্ট্রিবিউটও করেছি। এমনকি উপজেলা কমিউনিটি ক্লিনিক লেভেলেও করেছি। সেই কাজটা এখনো চলছে। এর বাইরে পিপিই গাউন ডিজাইন ডেভেলপ করেছি এবং পিপিই বানিয়ে বিএসএমএমইউ হাসপাতালকে সাড়ে তিন হাজার পিস দিয়েছি। আরো সাড়ে তিন হাজার চট্টগ্রাম মেডিকেলকে দিয়েছি।

এছাড়া দিনাজপুর, জয়পুরহাট, নীলফামারী এবং রাজশাহীসহ পঞ্চান্নটা এলাকায় দিয়েছি। আরো তৈরি হচ্ছে। এছাড়া আমরা ত্রাণও দিচ্ছি। ত্রাণের কাজটা শুরু করেছি মূলত শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে চারুকলা পর্যন্ত যারা রাস্তায় ফেরি করে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করত তাদের মধ্যে। এদের আমরা প্রতি দশ দিন পর পর ত্রাণ দিচ্ছি। বাইরেও দিচ্ছি। এছাড়া ঢাকা-১০ আসনের এমপি যিনি ত্রাণ ডিস্ট্রিবিউট করছেন, তাকে আমরা তিন হাজার কেজি চাল ডিস্ট্রিবিউট করার জন্য দিয়েছি। এসব কাজই করছি। করোনা নিয়ে ক্রিয়েটিভ কাজের পরিস্থিতি এখন আর নেই।

করোনার এই সময়টাতে আপনার চেনা পৃথিবীটার কতোটা বদল ঘটেছে বলে মনে করছেন এই প্রশ্নের জবাবে নিসার হোসেন বলেন, চেনা পৃথিবী বলতে আমার পৃথিবীটা বেশ ছোটই। এর বাইরে আমি যাইনি। তবে দেখছি অনেক বেশি পরিবর্তন হয়ে গেছে। অনেকদিন ধরে মানুষের সংস্পর্শ নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা এবং আমার চারুকলার ভেতরেই দেখছি, প্রকৃতি যেন নিজের ইচ্ছেমতোই একেবারে স্বাধীনভাবে বাড়ছে। মানুষ তো বেশি নোংরা করে এবং নষ্ট করে। এখন তো ওসব নেই। একেবারে পরিষ্কার-পচ্ছিছন্ন ও সজীব।

আমি যে এলাকায় থাকি সেখানে প্রচুর শব্দ দূষণ হয়। চারদিকে শহীদ মিনারের কালচারাল পলুশন এবং আনকালচারাল পলুশন দুটোই আছে। এসব থেকে অন্তত কিছুটা রেহাই পাচ্ছি। মনে হচ্ছে, আমরা ছোটবেলায় যে ঢাকা দেখেছি, ঢাকা যেন সেই ছোটবেলারই ঢাকাই হয়ে গেছে। একেবারে ছোটবেলার ঢাকাকে ফিরে পেয়েছি।

আপনার দেখা ছোটবেলার ঢাকা কেমন ছিল? জবাবে তিনি বলেন, ছোটবেলায় ঢাকার মতো পরিকল্পিত শহর আমি খুব কমই দেখেছি। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে শুরু করে সেগুনবাগিচা বেইলি রোড পুরো এলাকাটাই ছিল কাঁটা আর ঝোপঝাড়ে ভরা। ধানমন্ডির পরে লালমাটিয়া তখনো হয়নি। ওই দিকে ডেভেলপমেন্টের কাজ চলছিল। আমি ১৯৬৮ সালের কথা বলছি। লালমাটিয়ার ওইদিকটার পুরো জায়গা মাটি বেরিয়ে লাল হয়ে থাকত। ওই কারণে এর নাম হয়েছে লালমাটিয়া। যেমন শুক্রাবাদটা আগে ছিল না, সোবাহানবাগই ছিল।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দুপাশে দুটো রাস্তা ছিল এবং এর দুপাশে দুটো খাল ছিল। ওই খালেরই একটা অংশ বুড়িগঙ্গায় পড়েছিল। এর কাছে একটা পুল ছিল এর নামই হচ্ছে চানখাঁর পুল। এরকমই ছিল ঢাকা। আজকের যে শংকর বাসস্ট্যান্ডের পরে প্যারালালি পশ্চিম দিকে ধানমন্ডির রাস্তা। এরপর রায়েরবাজারে যাওয়ার রাস্তা। ওই পশ্চিম দিকের রাস্তাটার পরেই মাত্র দুতিনটা বাড়ি ছিল। এরপরে রায়েরবাজার পর্যন্ত ঝিল ছাড়া আর কিছুই ছিল না। যেখানে মানুষ বক শিকারে যেত। আমি ওখানকার একটা বাড়িতে বসে থাকতাম। বাড়িটি ছিল চরমপত্রখ্যাত এম আর মুকুলের বাড়ি। যেখানটায় বসে বসে ঝিল আর বক দেখতাম। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত এমনই পরিবেশ ছিল। এই ঢাকা দেখে সেই ঢাকার কথাই মনে পড়ে গেল।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App