×

জাতীয়

স্বাস্থ্যে বরাদ্দ বাড়লেও শক্ত হবে না ভিত্তি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ জুন ২০২০, ০৯:৫৭ এএম

স্বাস্থ্যে বরাদ্দ বাড়লেও শক্ত হবে না ভিত্তি
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই দেশের নাজুক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চিত্রটি সামনে আসে। স্পষ্ট হয় এই খাতে দীর্ঘদিনের অবহেলার বিষয়টিও। এরপর থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় এই খাতটি। মুখ থুবড়ে পড়া এই খাতকে শক্ত ভিত্তিতে দাঁড় করাতে দাবি ওঠে বরাদ্দ বাড়ানোর। সেই সঙ্গে দুর্নীতি ও অপচয় বন্ধেরও। নাজুক অবস্থা কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকেও বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। সেই প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত হয় সদ্য ঘোষিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে। অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য মোট ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে যা ছিল ২৫ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। উল্লেখ্য, কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ মোকাবিলায় গৃহীত কার্যক্রমগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় নিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ খাতের জন্য এ বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া আরো ১৩টি মন্ত্রণালয়/বিভাগ স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। সব মিলিয়ে আগামী অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে মোট বরাদ্দ ৪১ হাজার ২৭ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে, যা জিডিপির ১ দশমিক ৩ শতাংশ এবং মোট বাজেট বরাদ্দের ৭ দশমিক ২ শতাংশ। কিন্তু স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বিশিষ্টজনেরা বলছেন, এই বরাদ্দ দিয়ে অবস্থার হয়তো সাময়িক উন্নতি হবে কিন্তু ভঙ্গুর স্বাস্থ্য খাতকে শক্ত ভিত্তিতে দাঁড় করানো সম্ভব নয়। তবে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় যে কোনো জরুরি চাহিদা মেটানোর জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দের বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ ভোরের কাগজকে বলেন, বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে যে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে তা এক শতাংশেরও কম, যা দিয়ে বর্তমান স্বাস্থ্য খাতের নাজুক অবস্থার খুব একটা উন্নতি হবে না। আবার এটিও ঠিক যে, বাজেট বাড়লেও যে এই সমস্যার সমাধান হবে তাও নয়। স্বাস্থ্য খাতের কোথায় বাজেট খরচ করবে সেই খাতগুলোও যথাযথভাবে চিহ্নিত করা হয়নি। এই প্রয়োজনগুলো চিহ্নিত করে পুরো খাতকেই নতুন করে ঢেলে সাজানো দরকার। আর মাস্টার প্ল্যান নিয়ে এগোতে হবে। বিক্ষিপ্তভাবে বাজেটে বরাদ্দ বাড়লে দুর্নীতি বাড়বে এবং অর্থ লোপাট হবে বলেও মনে করেন তিনি। ঘোষিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা খুব একটা আহামরি নয় বলে মনে করেন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, সরকারকে অনুভব করতে হবে স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ মানে লস নয়। এই বরাদ্দ দিয়ে সাময়িক হয়তো সহায়তা হবে কিন্তু করোনায় ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য খাতকে শক্ত ভিত্তিতে দাঁড় করানো সম্ভব নয়। করোনা পরিস্থিতি আমাদের স্বাস্থ্য খাতের দুর্বলতাগুলোকে সামনে এনেছে। স্বাস্থ্য খাতের ভৌত অবকাঠামোতে আমুল পরিবর্তন আনতে হবে। জনবল, আইসিইউর মতো অতিব প্রয়োজনীয় সুবিধাগুলোও থাকতে হবে। তবে মাস্ক, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় বেশ কিছু পণ্যের দাম কমানো হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক এই অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) মনে করেন, স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দই মূল নয়। খরচ করতে না পারা, দুর্নীতির ছিদ্রগুলো বন্ধ করতে না পারলে বরাদ্দ বাড়িয়েও খুব লাভ হবে না। বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাও জরুরি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App