×

অর্থনীতি

শিশুশ্রম বন্ধের সময় এখনই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ জুন ২০২০, ০৮:৫১ পিএম

কাজ না করলে খামু কি? ১১ বছরের রায়হান বলেছিল, যখন তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম কেন সে স্কুলে না গিয়ে লেগুনাতে কাজ করছে। আট-নয় বছর বয়স থেকেই রায়হান লেগুনাতে হেলপার হিসেবে কাজ করছে। প্রতিদিন সকাল ৫-৬টা থেকে রাত ১০-১১ টা পর্যন্ত কাজ করে ১৫০ টাকা আয় করে। সেই টাকা দিয়ে তাদের সংসার চলে।

কোনো রকম স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই করোনাকালীন সে একইভাবে কাজ করছে। কেন মাস্ক ব্যবহার করছে না, জানতে চাইলে রায়হান বলে, ‘খাওনের টাকা নাই মাস্ক কিনমু কি দিয়া? রায়হানের স্বপ্ন ছিল স্কুল শিক্ষিক হওয়ার কিন্তু এখন সে শুধু বেঁচে থাকতে চায়। সেই সঙ্গে তিন বেলা খেতে পারলে সে খুশি। রায়হানের সঙ্গে আামাদের কথা হয়েছিল ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায়।

করোনা মহামারির আগে আমাদের দেশে প্রায় ১৩ লাখ শিশু বিভিন্ন ঝুঁকিপূণ কাজে নিয়োজিত ছিল। সেসব শিশু এখন কোথায় আছে, কী করছে, আমরা কি জানি? মহামারির এই সময়ে আমরা সবাই কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তবে সুবিধাবঞ্চিত পরিবার আর তাদের শিশুরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বেশি। ওইসব শিশুর মধ্যে কর্মরত শিশু, রাস্তায় বসবাসকারী শিশু, বিয়ের ঝুঁকিতে থাকা শিশুর জন্য এই পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ করে তুলছে।

দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের আয় বন্ধ হয়েছে। আমরা সবাই কবে এই করোনা থেকে মুক্তি পাবো জানি না। কবে আবার এই পরিবারগুলো নিয়মিত আয়ের পথ চালু করতে পারবে সেটাও নিশ্চিত নয়। এম পরিস্থিতিতে রায়হানের মতো অনেক শিশু স্বাস্থ্যবিধি না মেনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত। যা সবার জন্য পরিস্থিতিকে আরও খারাপ, আরো ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে।

করোনাপূর্ব সময়ে বাংলাদেশ সরকার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। দেশে শিশুশিক্ষা পরিস্থিতির হার ভালো ছিল। দেশ ক্রমশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। করোনা পরিস্থিতিতে ১৮ মার্চ থেকে দেশব্যাপী সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। যদিও দূর শিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে অনেক শিশু এই কার্যক্রমের আওতায় আসতে পারেনি।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে শিশুরা বাড়িতে অবস্থান করছে। গেল কয়েক মাসে বহু গবেষণা হয়েছে শিশু পরিস্থিতি জানার জন্য। সেসব গবেষণার ফলাফল বলছে, করোনার প্রভাবে অনেক শিশু শিক্ষায় ফিরে যেতে নাও পারে। বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারের শিশুরা। পরিবারগুলো জীবিকার জন্য, বেঁচে থাকার জন্য তাদের শিশুদের স্কুলে পাঠানোর পরিবর্তে কাজে পাঠাতে পারে।

বাংলাদেশ সরকারের একটি লক্ষ্যমাত্রা আছে। ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে শিশুশ্রম নির্মূল করা। সেই লক্ষে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছিল। তবে করোনা মহামারি কারণে সেসব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তাই এখনই যদি সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ নেয়া না হয় তাহলে দেশে শিশুশ্রমিকের হার বেড়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম নিরসনের যে লক্ষ বাংলাদেশ সরকারের আছে তা অর্জন করা সম্ভব নাও হতে পারে।

করোনা পরবর্তি সময়ে দেশে ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম নিরসনে সবার সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। প্রথমে শিশুশ্রমের ওপর একটি জাতীয় ডাটাবেইজ তৈরি করা জরুরি। সেই ডাটাবেইজ সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও কার্যক্রমের ফলাফল নির্ধারণে সহযোগিতা করবে।

[caption id="attachment_225411" align="aligncenter" width="700"] শিশুশ্রম[/caption]

করোনাকালীন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত প্রায় ১৩ লাখ শিশুর পরিবারের জন্য নগদ অর্থ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। এই উদ্যোগে জাতিসংঘের সংস্থাসমূহ, আন্তজার্তিক সংস্থাসমূহ, প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান, সমাজের ধনী ব্যক্তি ও সরকার এক সঙ্গে কাজ করতে পারে। করোনা পরবর্তী সব শিশু যাতে স্কুলে যায় সেজন্য দরিদ্র পরিবারকে প্রণোদনার ব্যবস্থা করা জরুরি।

নিশ্চয়ই আমরা কেউ চাই না, বেঁচে থাকার জন্য আমাদের শিশুরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করুক। রায়হানের স্বপ্ন পূরণের দায়িত্ব আমার, আপনার এবং আমাদের সকলের। ১২ জুন বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস। আমরা শিশুশ্রম প্রতিরোধে কাজ করছি। আপনাকেও প্রয়োজন।

সাবিরা নুপুর: উন্নয়নকর্মী সরকার ফয়সাল তানভীর: আইন বিভাগের শিক্ষার্থী, ডেফোডিল ইউনিভার্সিটি

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App