×

অর্থনীতি

জীবন-জীবিকার সমন্বয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ জুন ২০২০, ০৯:৫৩ এএম

জীবন-জীবিকার সমন্বয়
একদিকে মহামারি করোনা, অন্যদিকে বিশ্বজুড়ে চরম অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা। জীবন-জীবিকার টানাপড়েনের মাঝেই ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বিশাল বাজেট ঘোষণা করেছে শেখ হাসিনার সরকার। ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমা’ শিরোনামের বাজেটে করোনা সংকট মোকাবিলা করে স্বপ্ন দেখানো হয়েছে জীবন-জীবিকার সমন্বয়ে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের। বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, এবারের বাজেটেও অগ্রাধিকার পেয়েছে সুশাসন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, নারী উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তাসহ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন। প্রস্তাবিত বাজেটকে করোনা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জসহ সার্বিক উন্নয়নের নিয়ামক হিসেবেই দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে বাজেট নিয়ে অর্থনীতিবিদরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া দিলেও প্রস্তাবিত বাজেট কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের দিকে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়াকে নির্দেশ করছে বলে মনে করছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা। ‘উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ’ স্লোগানে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামী লীগ। নতুন করে জনগণকে স্বপ্ন দেখানো হয়েছে উন্নয়ন, সুশাসন, দারিদ্র্য দূরীকরণ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, আমার গ্রাম আমার শহর, পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রো রেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের। সদ্য প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে বরাদ্দসহ এই আকার দাঁড়াবে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬১১ কোটি ৯ লাখ টাকায়। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৭০ হাজার ৫০১ কোটি ৭২ লাখ টাকা আসবে। এছাড়া স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৪৬৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা। বাজেটকে প্রতিশ্রুতি পূরণের বাজেট হিসেবেই দেখছে আওয়ামী লীগ। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ভোরের কাগজকে বলেন, নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণের পাশাপাশি করোনাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। করোনার জন্য থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। বর্তমান বৈশ্বিক মহামারি যেন বাংলাদেশকে কাবু করতে না পারে সেজন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জীবন ও জীবিকার সমন্বয়ে সময়োপযোগী বাজেট করা হয়েছে। এদিকে করোনা ভাইরাসে দুই মাসের লকডাউনে সবেচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। প্রায় তিন কোটি মানুষের রুটি-রুজিতে আঘাত হেনেছে করোনা। তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য স্বল্প সুদে ঋণ দিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই হাজার কোটি টাকা। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া করোনা মহামারির কারণে সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্যপ্রবণ ১০০টি উপজেলায় সব দরিদ্র প্রবীণ ব্যক্তিকে বয়স্ক ভাতার আওতায় আনা হবে। এতে ৫ লাখ নতুন উপকারভোগী যোগ হবে। এই উপজেলাগুলোর সব বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারীকে ভাতার আওতায় আনা হবে। এতে নতুন যোগ হবে সাড়ে ৩ লাখ উপকারভোগী। এছাড়া নতুন করে ২ লাখ ৫৫ হাজার নতুনসহ মোট ১৮ লাখ অসচ্ছল প্রতিবন্ধীকে ভাতা দেয়া হবে। শিক্ষা খাতে ৬৬ হাজার ৪০১ কোটি টাকা, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ৬৪ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা এবং কৃষি খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২৯ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য খাতে মোট ৪১ হাজার ২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে আরো ১ হাজার ২৯টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হবে। অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সমাজ উন্নয়ন জাতির উন্নয়নের পূর্বশর্তগুলোকে বাজেটে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে মন্তব্য করে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ ভোরের কাগজকে বলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে বাজেট। সংবিধানে উল্লিখিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের বিষয়টি ১৯৯৬ সালে প্রথমে বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করেন শেখ হাসিনা। ধীরে ধীরে এর আকার বাড়ছে। জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করার পাশাপাশি ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন। তার কন্যা শেখ হাসিনা পিতার দ্বিতীয় স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করছেন। বাজেটেও এটি প্রতিফলিত হয়েছে। বাজেটে দৃষ্টি শুধু উপরতলার দিকেই নয়, দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা মানুষের উন্নয়নের দিকটিও ভাবা হয়েছে। বাজেটকে গতানুগতিক, আমলাতান্ত্রিক, অগ্রহণযোগ্য মন্তব্য করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ভোরের কাগজকে বলেন, করোনা মহাবিপর্যয়কালে পীড়িত মানুষকে বাঁচানোর জন্য স্বাস্থ্য খাতের প্রাধান্য পাওয়ার জনআকাক্সক্ষা উপেক্ষিত হয়েছে। লুটেরা ধনিকদের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়েছে। করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যেও মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় এটি অবাস্তব মন্তব্য করে অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, এ ধরনের প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক সংস্কার করা হয়নি। এছাড়া করোনার কারণে বিশ্ব অর্থনীতি বিপর্যস্ত। বিশ্বব্যাংকের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, অনেক দেশে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হতে পারে। সেখানে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি যদি ২ শতাংশও অর্জন হয়, সেটি হবে অনেক বেশি। তবে এই প্রবৃদ্ধিকেও স্বাভাবিক মনে করে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, করোনার কারণে এবার স্বাস্থ্য, জীবন রক্ষা ও অর্থনীতির গতি ধরে রাখাটাই বড় কথা। আর বাজেটে ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যটি একটি স্বাভাবিক বিষয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App