×

সম্পাদকীয়

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ জরুরি

Icon

nakib

প্রকাশ: ১২ জুন ২০২০, ০৯:৪৩ পিএম

‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমা’ শিরোনামের আগামী বাজেটের সম্ভাব্য আকার ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। এ ব্যয় মেটাতে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৮২ হাজার ১৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর দেশের মোট জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। করোনা ভাইরাসের কারণে সরকার সংশোধন করে নামিয়ে এনেছে ৫ দশমিক ২ শতাংশে। এরই ভিত্তিনির্ভর আগামী অর্থবছর প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২ শতাংশ অর্জন উচ্চাভিলাষী ও অবাস্তব বলছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের ভাষ্য, করোনা পরিস্থিতিতে চলতি অর্থবছরের বাজেটের প্রায় অধিকাংশ সূচকের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে বড় ধরনের সংশয় রয়েছে। আমরা মনে করি, বৃহৎ বাজেট আমাদের অর্থনীতির কলেবর বৃদ্ধি, জাতীয় ব্যয় বৃদ্ধিরই প্রতিফলন। বাজেটে নির্ধারিত ব্যয়ের অঙ্ক যত বড় হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং উন্নয়ন প্রকল্প যথাযথভাবে বাস্তবায়নের সক্ষমতা অর্জন ততই বড় চ্যালেঞ্জ। অর্থমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসকে সঠিকভাবে মোকাবিলা ও এর অর্থনৈতিক প্রভাব দৃঢ়তার সঙ্গে কাটিয়ে ওঠার স্বার্থে আমরা গতানুগতিক বাজেট থেকে এবার কিছুটা সরে এসেছি। যে কারণে এবার বাজেটে অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতকে সর্বাপেক্ষা অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে এবং করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে এ খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ, প্রণোদনা ও ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কৃষি হচ্ছে দ্বিতীয় অগ্রাধিকার খাত। প্রস্তাবিত ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকার মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দুটি বিভাগের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে (পরিচালন খাতে ১২ হাজার ৮৩০ কোটি এবং উন্নয়ন হাতে ১০ হাজার ৫৪ কোটিসহ) ২২ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা এবং স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগে (পরিচালন খাতে তিন হাজার ৯১৭ কোটি এবং উন্নয়ন খাতে দুই হাজার ৪৪৬ কোটিসহ) ছয় হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরটি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ও বর্তমান সরকারের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর কারণ বর্তমান মহাজোট সরকার তাদের ঘোষিত উন্নয়ন রূপকল্প বাস্তবায়নের একটা বিশেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ অর্থবছরে সরকারের বেশকিছু মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে বা শুরু করতে হবে বা শুরু করা কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বাজেটে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুসহ মেগা প্রকল্পগুলোতে। সাতটি মেগা প্রকল্প সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ ফাস্টট্র্যাকভুক্ত সাতটি মেগা প্রকল্পকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে। বাজেটে মোট সাতটি মেগা প্রকল্পে ৩৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাজেটে মেগা প্রকল্পের মধ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে। গত কয়েক বছরে আমাদের দুটি খাতে অর্জন ছিল। একটি অর্থনৈতিক অন্যটি শিক্ষা। কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবে এ দুটি খাতই বড় ধরনের হোঁচট খেয়েছে। বাজেটের অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের বিষয়টিতে জোর দেয়া হয়েছে। বাজেটে শিক্ষাসহ মানবসম্পদ সংশ্লিষ্ট খাতগুলোতে বরাদ্দের হার সন্তোষজনক পর্যায়ের নয়। করোনার কারণে দেশের ব্যবসা স্থবির। অর্থনীতির চাকা স্তিমিত হয়ে পড়েছে। আমদানির পাশাপাশি রপ্তানি আয়ও আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। এতে কর রাজস্ব আয় কমছে। করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘ হওয়ায় আগামী অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আয়ও কমার পূর্বাভাস দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা বড় এ বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। বিশালাকার এই বাজেটকে বলা হচ্ছে উচ্চাভিলাষী বাজেট। তবে বাজেট উচ্চাভিলাষী কিনা সেটা নির্ভর করে বাস্তবায়ন সক্ষমতার ওপর। বাজেট উচ্চাভিলাষী হবে না যদি এই বাজেট বাস্তবায়নের জন্য উপযুক্ত কর্মসূচি, পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টা থাকে। আমরা আশা করব সরকার তার প্রতিশ্রুতি পূরণের বাজেট বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App