×

সারাদেশ

চট্টগ্রামে আইসিইউর জন্য হাহাকার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ জুন ২০২০, ১০:৪৮ এএম

চট্টগ্রামে আইসিইউর জন্য হাহাকার
চট্টগ্রামে আইসিইউর জন্য যখন হাহাকার চলছে, তখন করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের গুদামে পড়ে আছে ৮টি আইসিইউ শয্যা। আইসিইউ সাপোর্ট না পেয়ে প্রতিদিনই চট্টগ্রামে মারা যাচ্ছেন করোনা আক্রান্ত ও শ্বাসকষ্টসহ জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীরা। জেনারেল হাসপাতালের ৮টি আইসিইউ শয্যা মামলার কারণে দীর্ঘদিন গুদামে পড়ে আছে। এসব আইসিইউ চালু করা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ বলছে, ওই ৮টি আইসিইউ ব্যবহার করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মৌখিক অনুমতি থাকলেও এখনো কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা করতে না পারায় তা স্থাপন করা যাচ্ছে না। চালু থাকা ১০টি আইসিইউ শয্যা নিয়ে করোনা আক্রান্ত মুমূর্ষ রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে এসব আইসিইউ। ফলে আইসিইউ সাপোর্টবিহীন সংকটাপন্ন রোগীদের মৃতের সারিও দীর্ঘ হচ্ছে। গত ২৯ এপ্রিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আবু রায়হান মিয়াকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ যন্ত্রাংশ ব্যবহারে সরকারের অনুমতির বিষয়টি জানানো হলে হাসপাতালে অলস পড়ে থাকা ৮টি আইসিইউ ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়। তারপরও এখনো আলোর মুখ দেখেনি সেই ৮টি আইসিইউ শয্যা। করোনা আক্রান্তের চিকিৎসায় তাই ১০টি আইসিইউ নিয়ে সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল। এই ১০টি আইসিইউ পরিচালিত হয় অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে। এই অক্সিজেন সিলিন্ডারও অপ্রতুল। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ ও আইসোলেশন ওয়ার্ডে ২০০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রস্তুত থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ৭৮টি। প্রসঙ্গত ২০১৪-১৫ সালে জেনারেল হাসপাতালের জন্য অন্যান্য যন্ত্রপাতির সঙ্গে এই ৮ শয্যা কেনা হয়েছিল। কিন্তু কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগে মামলা হওয়ায় এসব শয্যা স্থাপন করা যায়নি। করোনা মোকাবিলায় চট্টগ্রামে আইসিইউ শয্যা নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন হওয়ার পর ওই ৮ শয্যার কথা উঠে আসে। পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ৮টি শয্যা দ্রুততম সময়ে বসানোর বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়। গুদামে পড়ে থাকা ভেন্টিলেটরসহ ৮ আইসিইউ শয্যা স্থাপন বিষয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (দায়িত্বপ্রাপ্ত) ডা. মো. শফিকুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বরেন, মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি পেলেও পড়ে থাকা ৮টি আইসিইউ চালু করতে হলে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাই নিশ্চিত করতে হবে এবং যন্ত্রপাতিগুলো ঠিক আছে কিনা তা দেখতে হবে। ৮ বছর আগের ভেন্টিলেটরগুলো কতটুকু সচল তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, আইসিইউ সরবরাহকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গুদামে পড়ে থাকা আইসিইউ চালুর বিষয়ে কোনো চিঠি পায়নি বলে জানিয়েছে। দীর্ঘদিন পড়ে থাকা ভেন্টিলেটরগুলো পরীক্ষা করে দেখাও হয়নি। সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাইয়ের কাজও এখনো হয়নি। সবকিছু মিলিয়ে কবে নাগাদ এই আইসিইউগুলো চালু করা যাবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। একইরকম সংশয়ের কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মোস্তফা খালেদ আহমেদ। তিনি জানান, ‘৮টি ভেন্টিলেটর দীর্ঘ ৮ বছর গুদামে পড়ে ছিল। যন্ত্রাংশগুলো সচল আছে কিনা তা নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। আগে পরীক্ষা করে দেখতে হবে ভেন্টিলেটরগুলো ভালো আছে কিনা, এরপর শয্যা স্থাপনের বিষয়টি দেখা হবে।’ আইসিইউর অভাবে গত ২৬ মে চোখের সামনে বাবার করুণ মৃত্যু দেখতে হয়েছে আহমেদ সোহান নামে এক ব্যবসায়ীকে। তিনি জানান, ২২ মে বাবাকে করোনা আক্রান্ত হিসেবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ার পরের দিন তাকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। তিনি বলেন, তার বাবা শহিদুল হক শুধু আইসিইউর অভাবে শ্বাসকষ্টের যন্ত্রণায় ছটফট করে মারা গেছেন। গত ২২ মে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের পরিচালক মোরশেদুল আলম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তিনি এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল আলম মাসুদের বড় ভাই। রাতে মুমূর্ষ অবস্থায় তাকে আইসিইউতে নিয়ে এলে ওয়ার্ডে কোনো শয্যা খালি ছিল না। এমন অবস্থায় বড় ভাই মোরশেদুল আলমকে নিজের আইসিইউ সিটে জায়গা করে দিয়েও বাঁচাতে পারেননি অপেক্ষাকৃত কম অসুস্থ ছোট ভাই রাশেদুল আলম। চট্টগ্রামে আইসিইউ না পেয়ে গত ১০ জুন ভোরে শ্বাসকষ্টে ফাতেমা আক্তার মুক্তা (৩০) নামের এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যু হয়। ওই নারীকে প্রথমে চট্টগ্রামের মা ও শিশু হাসপাতলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা না পেলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে অক্সিজেন সাপোর্ট পেলেও আইসিইউ না পাওয়ায় তিনি মারা যান। এদিকে গতকাল ভোরে আইসিইউর অভাবে মারা গেছেন নগর বিএনপির সহসভাপতি মো. কামাল উদ্দিন। নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন জানান, নগরের পার্কভিউ, ম্যাক্স, মেট্রোপলিটন হাসপাতালে করোনা সন্দেহে ভর্তি নেয়নি তাকে। তার অক্সিজেন ও আইসিইউ সাপোর্ট লাগত। কিন্তু সব হাসপাতালে আইসিইউর খোঁজ করা হলেও কোথাও মেলেনি। মূলত আইসিইউর অভাবে তিনি মারা যান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App