×

অর্থনীতি

এই বাজেটে রাজস্ব আয়ই বড় চ্যালেঞ্জ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ জুন ২০২০, ১০:১০ এএম

এই বাজেটে রাজস্ব আয়ই বড় চ্যালেঞ্জ
২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রাকে খুবই উচ্চবিলাসী আখ্যা দিয়ে তা অর্জনকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। কেননা, আগামী বাজেটে বিলাসী পণ্য ছাড়া ব্যক্তি কর, গার্মেন্টসের উৎসে কর ছাড়াও বিভিন্ন পণ্যে কর ও ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে রাজস্ব আয় স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক কমে যাবে। তাছাড়া করোনা পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, তা এখনো অনিশ্চিত। করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে না এলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুরোপুরি সচল হবে না। যার বিরাট প্রভাব পড়বে রাজস্ব আয়েও। সব মিলিয়ে করোনাকালের বাজেটে এত বড় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব বলেই মনে করছেন তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আদায় করতে হবে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এই আয় আসবে মূলত আয়কর, ভ্যাট এবং আমদানি ও রপ্তানি শুল্ক থেকে। বাকি ৪৮ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় হবে করবহিভর্‚ত বিভিন্ন খাত থেকে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রায় প্রতিটি অর্থবছরই রাজস্ব আয়ের ঘাটতি নিয়ে শেষ হয়। তারপরও পরের বছর লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে দেয়া হয়। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এবার করোনা সৃষ্ট অস্বাভাবিক পরিবেশে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা না বাড়লেও, কাক্সিক্ষত রাজস্ব আদায় খুবই কঠিন হবে। কারণ দেশ-বিদেশে দীর্ঘ লকডাউনে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ায় কর ও ভ্যাট আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাছাড়া বেশ কিছু খাতে কর কমানোর পাশাপাশি শিল্প সুরক্ষায় কিছু ক্ষেত্রে দেয়া হয়েছে ভ্যাট অব্যাহতিও। সব মিলিয়ে কর ছাড়ের ছড়াছড়ির বাজেটে রাজস্ব আয় বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। প্রস্তাবিত বাজেটে পোশাকসহ সব ধরনের পণ্যের রপ্তানি মূল্যের ওপর দশমিক ৫ শতাংশ হারে উৎসে কর কমানো হয়েছে। এই বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য চাল, আটা, আলু, পেঁয়াজ, রসুনের স্থানীয় পর্যায়ে সরবরাহের ক্ষেত্রে উৎসে আয়কর কমানো হয়েছে। পাশাপাশি আমদানি করা চিনি ও রসুনের অগ্রিম আয়কর কমানো হয়েছে। আর ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা আড়াই লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে স্বর্ণ আমদানির ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি পুঁজিবাজরে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির কর হার ২ দশমিক ৫০ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যদিকে বাজেটে রাজস্ব আয় বাড়ানো ও অর্থনীতিকে গতিশীল করার জন্য অপ্রদর্শিত অর্থ অর্থাৎ কালো টাকা সাদা করার সহজশর্তজুড়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এই সুযোগ শর্ত সাপেক্ষে দেয়া ছিল। কিন্তু কার্যকর ফল আসেনি। তবে এবার কালো টাকা বিনিয়োগের খাত বাড়ানো হয়েছে। সরকার এতে মোটা অঙ্কের রাজস্ব পাওয়ার চিন্তা করছে। কাস্টমসেও কিছু পরিবর্তন আসছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অর্থপাচার রোধে ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। জরিমানা নির্ধারিত অর্থের ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া গাড়ি রেজিস্টেশনের কর আগের থেকে বাড়ানো হয়েছে। সেই সঙ্গে তামাকজাত পণ্য, মোবাইলে কথা বলার শুল্ক আগের থেকে ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। সঙ্গে ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থের আবগারি শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাবও করা হয়েছে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে। এর থেকে বড় অঙ্কের রাজস্বের আশা করছে সরকার। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, করোনা মহামারির কারণে ইতোমধ্যেই রাজস্ব আদায়ে বিপর্যয় নেমে এসেছে। চলতি অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ২৫ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে। তবুও বছর শেষে রাজস্ব ঘাটতি প্রায় এক লাখ কোটি টাকার ঘরে পৌঁছাবে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। আর কাটছাট করা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৫০০ কোটি টাকা। এই লক্ষ্যমাত্রা আদায় করতে হলে স্বাভাবিক অর্থনৈতিক অবস্থা চলাকালে যে পরিমাণ রাজস্ব আদায় করা হয়েছে শেষ ২ মাসে তার প্রায় কাছাকাছি ১ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা আদায় করতে হবে। কিন্তু করোনাকালীন সাধারণ ছুটিতে মে মাসে রাজস্ব আদায় ছিল খুবই সামান্য। চলতি জুন মাসেও পরিস্থিতি খুব একটা উন্নত হওয়ার সম্ভাবনা কম। ফলে বিশাল রাজস্ব ঘাটতি নিয়েই শেষ হচ্ছে চলতি অর্থবছর। এ বিষয়ে বিশ^ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, প্রতি বছর উচ্চবিলাসী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। যার কারণে বছর শেষে বড় ধরনের ঘাটতির মুখে পড়তে হয়। অর্থনৈতিক স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড চালু থাকলেও এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন ছিল। আর করোনা মহামারির কারণে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ অসম্ভব হবে। এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, এনবিআরের অংশগ্রহণ ছাড়া এবং বাস্তবভিত্তিক হিসাব-নিকাশ না করে রাজস্ব আদায়ের একটি লক্ষ্য ঠিক করে এনবিআরের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়। এর সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিলই নেই। ফলে এনবিআরও এটি অর্জন করতে পারে না। আবার তাদের জবাবদিহিতার মধ্যেও আনা যায় না। কারণ তাদের বক্তব্য, এই লক্ষ্যমাত্রা তো তারা ঠিক করেনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App