×

মুক্তচিন্তা

‘সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট’ নয় ন্যায্য পাওনা প্রয়োজন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২০, ০৬:০০ পিএম

যদি মালিকরা শ্রমিকদের পাশে গিয়ে না দাঁড়ায় তাহলে তারা ঋণের চাপে জর্জরিত হবে, তারা বাধ্য হয়ে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনায় লিপ্ত হবে। আর যারা এসব পারবে না তারা হয়তো এই পৃথিবীর বুক থেকে মুক্তি লাভের পথ খুঁজবে। ‘সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট’ নয় ন্যায্য পাওনাই পারে অনেকগুলো সুন্দর জীবনকে বাঁচাতে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাক খাতের গুরুত্ব অপরিসীম। ষাটের দশকে শুরু হলেও সত্তরের শেষের দিকে এটি রপ্তানিমুখী শিল্প হিসেবে রূপ পায়। আশির দশকের শেষার্ধে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের আয়কে অতিক্রম করে পোশাক শিল্প রপ্তানি আয়ে প্রথম স্থানে চলে আসে। ধীরে ধীরে সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এটি শিল্পের রূপ নেয়। সাধারণ মানুষের জন্য প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় সঙ্গে পোশাক শিল্পের মালিকরা অধিক মুনাফা লাভ করতে থাকে। প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি ছাড়াও এ খাত পরোক্ষভাবেও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। বস্ত্র, সুতা, আনুষঙ্গিক উপকরণ, প্যাকেটজাতকরণের উপকরণ, পরিবহন, ব্যাংকিং, শিপিং এবং ইন্স্যুরেন্স সেবার মাধ্যমে পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশে অন্যতম নির্ভরতার এই খাতটি। করোনা সময়ে শ্রমিক ছাঁটাইজনিত সমস্যায় জর্জরিত আমাদের পোশাক খাত। চলতি জুন মাস থেকেই তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে শ্রমিক ছাঁটাই শুরু হবে বলে জানিয়েছেন তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক। রুবানা হকের এরকম মন্তব্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক সমালোচনা হচ্ছে। করোনা আক্রমণের প্রথমদিকে যখন সরকার সব অফিস-আদালত, ফ্যাক্টরি ছুটি ঘোষণা করল তখন মানুষ পিছুটান থেকে তাদের নিজ নিজ গ্রামের বাড়ি চলে গিয়েছিল। সেই জায়গা থেকে করোনা বংশবিস্তারের সুযোগ পেলেও সেরকম বিস্ফোরক কিছু দেখিনি। কিন্তু তার থেকেও বিস্ফোরক কর্মকাণ্ডটি করেছিলেন রুবানা হক। তিনি পুনরায় সবাইকে কাজে যোগ দেয়ার জন্য বলেছিলেন। বিজিএমইএর প্রেসিডেন্ট রুবানা হক আরো বলেছিলেন, ‘করোনায় কোনো শ্রমিকের কিছু হলে সব দায়িত্ব আমরা নেব।’ একবার বাড়ি যাওয়া আবার বাড়ি থেকে সবাইকে ডেকে কর্মক্ষেত্রে যোগদানের নির্দেশে করোনা খুব ভালো করেই বংশ বিস্তারের সুযোগ পেয়েছে। যার ফলাফল আমরা স্পষ্টভাবে দেখেছি। এই দুর্যোগে সেই স্বল্প আয়ের শ্রমিকদের অর্থনীতি ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে গিয়েছে। এই সময় তাদের ছাঁটাই করা হলে তাদের নতুন কাজ খুঁজে নেয়ার সুযোগও নেই। এসব শ্রমিকরা আমাদের অর্থনীতিতে অবদান রেখে চলেছে। আজ তাদের বিপদের সময় ত্যাগ করা কতটা নির্মম তা হয়তো লিখে বোঝানো যাবে না। করোনা সময় অন্যান্য সময়ের মতো না। প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গা থেকে ছাড় দিলেই কেবল সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকবে। মালিকপক্ষের ক্ষতি হবে তা একবাক্যে চোখ বন্ধ করে বলা যায়। তারা পুরো বেতন না দিক অর্ধেক বেতন দিলেও শ্রমিকরা হয়তো চলতে পারবে। শ্রমিকদের একটা বিরাট অংশ নারী। কেউ হয়তো পরিবার থেকে বিতাড়িত কিংবা, স্বামী কিংবা যে অর্থনৈতিক ছায়া দরকার তা থেকে বিতাড়িত। এমন সময় সেই অসহায়দের দেখবে কে? তারাই তো এক সময় আমাদের গর্বের বস্তু ‘মেইড ইন বাংলাদেশে’ উপহার দিয়েছিলেন আমাদের। মালিকদের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের দুঃখের ভাগিদার হওয়া। যদি মালিকরা শ্রমিকদের পাশে গিয়ে না দাঁড়ায় তাহলে তারা ঋণের চাপে জর্জরিত হবে, তারা বাধ্য হয়ে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনায় লিপ্ত হবে। আর যারা এসব পারবে না তারা হয়তো এই পৃথিবীর বুক থেকে মুক্তি লাভের পথ খুঁজবে। ‘সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট’ নয় ন্যায্য পাওনাই পারে অনেকগুলো সুন্দর জীবনকে বাঁচাতে।

শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App