×

মুক্তচিন্তা

সত্য এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২০, ০৬:৩৪ পিএম

দুর্নীতি-অনিয়ম যে কোনো খাতেই ক্ষতিকর; কিন্তু স্বাস্থ্যের মতো মৌলিক অধিকারের ইস্যুর ক্ষেত্রে এটি অনেক বেশি স্পর্শকাতর। করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যেও স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি চিত্র আমাদের দেখতে হচ্ছে। এমন ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক। সরকারি ওষুধ থেকে শুরু করে জীবাণুরোধক মাস্ক সরবরাহ নিয়েও চলছে নানা ধরনের অনিয়ম। কোনো প্রতিষ্ঠান মানহীন মাস্ক সরবরাহ করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা, আবার কোনো প্রতিষ্ঠান সংখ্যায় কম দিয়েও বিল উত্তোলন করছে বেশি। চলমান সংকটকালে এমন অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে নামি প্রতিষ্ঠানগুলোও। নানা অব্যবস্থাপনার মধ্যে চিকিৎসা দিতে গিয়ে সারাদেশে আড়াই শতাধিক চিকিৎসক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর দায়ভার কে নেবে? অতি সম্প্রতি ঘটেছে মাস্ককাণ্ড। এন-৯৫ মাস্কের কথা বলে কেনা হয়েছে নিম্নমানের মাস্ক, সেগুলো সরবরাহের পর প্রশ্ন উঠলে মুগদা হাসপাতালসহ কিছু হাসপাতাল থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। ঘটনাটিকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে ‘ভুলবশত’ হিসেবে। বলতে গেলে স্বাস্থ্য খাতে একের পর এক অনিয়মই যেন স্বাভাবিক চিত্রে পরিণত হয়েছে। জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ওই মাস্কের মান নিয়ে অভিযোগ আসে। মুগদা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে সিএমএসডিকে (কেন্দ্রীয় ওষুধাগার) বিষয়টি জানিয়েছিল। খুলনার একটি হাসপাতালও একই অভিযোগ তুলেছিল। কিন্তু কারোর কথায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্ণপাত করেনি। অবশেষে গোয়েন্দা রিপোর্টে বিষয়টির সত্যতা মিলেছে। মাস্কের মান নিয়ে প্রশ্ন ব্যবহারকারীদের। কিন্তু যারা সরবরাহ করেছে এবং সরকারের যে দপ্তর গ্রহণ করেছে উভয়ই এর দায় নিতে অপারগ। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছেন, যেটা সরবরাহ করা হয়েছে সেটা আসল ‘এন-৯৫’ মাস্ক নয়। এগুলো ব্যবহার করে করোনায় আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় আইসোলেশন ওয়ার্ড, আইসিইউ ও ল্যাবরেটরিতে যাওয়া সম্ভব নয়। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, চলমান করোনা মহামারিতে চিকিৎসা উপকরণের দিকে অধিক মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন হলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বেশি ঝোঁক চিকিৎসাবহিভূর্ত খাতে। দেখা যাচ্ছে, চিকিৎসা সরঞ্জামে যত অর্থ খরচ করা হচ্ছে, তার চেয়ে তুলনামূলক বেশি অর্থ ব্যয় হচ্ছে সফটওয়্যার, ওয়েবসাইট, সেমিনার, কনফারেন্স ও পরামর্শক খাতে। এ প্রবণতাও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। স্বাস্থ্যসেবা মানুষের মৌলিক অধিকার। কাজেই এ খাতটির অনিয়ম-দুর্নীতি রোধ না করলে মৌলিক অধিকারের প্রতি অবহেলার মতো প্রশ্নও সামনে আসবে। তাছাড়া এভাবে অনিয়ম-দুর্নীতি চলতে থাকলে আমাদের স্বাস্থ্য খাতের জন্য অশনিসংকেত হিসেবে দেখা দেবে। আমরা মনে করি, স্বাস্থ্য খাতের দিকে বিশেষ নজর দেয়া দরকার। প্রধানমন্ত্রী নিজে উপর্যুপরিভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা নীতি ঘোষণা দিয়ে আসছেন। এন-৯৫ মাস্ক কেলেঙ্কারি নিয়ে করোনাকালেও স্বাস্থ্য খাতের কেনাকাটার দুর্নীতির বিষয়টি সামনে আসে, যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। বিষয়টি তদন্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের কাছে ওই তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয় এক মাসের বেশি সময় আগে। কিন্তু সেই প্রতিবেদনে কী আছে তা জানা যায়নি এখনো। স্বাস্থ্য খাতের কেনাকাটাসহ ঋণ ব্যবহারে অনিয়মের যে অভিযোগ উঠেছে, তা খতিয়ে দেখে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনোভাবেই মাস্ক কেলেঙ্কারির প্রকৃত ঘটনা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App