প্রস্তাবিত বাজেটে বিজিএমইএর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১ জুন ২০২০, ০৮:৪৮ পিএম
যখন সমগ্র বিশ্ব কোভিড-১৯ এর মহামারিতে টালমাটাল, জনজীবন পর্যন্ত বিপর্যস্ত, ঠিক সেরকম এক অভুতপূর্ব সংকটের মধ্যে থেকে মাননীয় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিজের দ্বিতীয় এবং দেশের ৪৯তম বাজেট ঘোষণা করলেন। ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যত পথপরিক্রমা’ শীর্ষক বাজেটের লক্ষনীয় বিষয় হলো মাননীয় অর্থমন্ত্রী করোনার বাস্তবতার আলোকে গতানুগতিকতার বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। এই সাহসী পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে আন্তরিক অভিনন্দন।
আমরা কৃতজ্ঞ যে, বাজেট প্রস্তাবনায় তৈরি পোশাক শিল্পখাতে রপ্তানির বিপরীতে যে নগদ সহায়তাগুালো চালু আছে সেগুলো অব্যাহত রাখার এবং পাশাপাশি অতিরিক্ত ১% বিশেষ নগদ সহায়তাও অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। গতবছর পোশাক শিল্পের আবেদনের প্রেক্ষিতে উৎসে কর কমিয়ে ০.২৫% হারে পুনঃনির্ধারন করা হয়েছিলো। শিল্পের এই কঠিন সময়ে উৎসে কর ০.২৫% হারে আরও ৫ বছর অব্যাহত রাখতে মাননীয় অর্থমন্ত্রীর প্রতি বিজিএমইএ বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছে। বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই, বাজেট প্রস্তাবনায় আর্টিফিশিয়াল ফাইবার উৎপাদনকে কর হ্রাসের জন্য।
যদিও রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের চাহিদার কারনে গত কয়েক দশকে আমাদের পশ্চাদসংযোগ শিল্পখাতটি উল্লেখযোগ্যভাবে বিকশিত হয়েছে, তথাপি প্রাথমিক বস্ত্রখাত উৎপাদনের ক্ষেত্রে ম্যানমেড ফাইবার, পলিয়েস্টার, ভেজিটেবল ফাইবার ও এ্যানিমেল ফাইবার উৎপাদনে না যেয়ে কটন ফাইবার (প্রাকৃতিক তন্তু) উৎপাদনের মধ্যেই সীমাবন্ধ থেকেছে। এটা উল্লেখ করা যায় যে, বর্তমানে বিশ্ব বাণিজ্যে কটনভিত্তিক পোশাকের চাহিদা প্রায় ৩৫ শতাংশ এবং যৌগিক বাৎসরিক প্রবৃদ্ধির হার (সিএজিআর) হিসেবে এ হার ২০০৭-২০১৭ সময়ে ০.৫ শতাংশ হারে হ্রাস পেয়েছে।
অন্যদিকে বিশ্ব বাণিজ্যে কৃত্রিম তন্তুুভিত্তিক পোশাকের অংশ প্রায় ৪৫ শতাংশ, যা উল্লেখিত একই সময়ে যৌগিক বাৎসরিক প্রবৃদ্ধির হার (সিএজিআর) হিসেবে ৫ শতাংশ হারে বেড়ে চলেছে। ২০১৭ সালে বিশ^ বাণিজ্যে কৃত্রিম তন্তুুভিত্তিক পোশাকের ব্যবসা ছিলো ১৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে বাংলাদেশের অংশ ছিলো মাত্র ৫ শতাংশ, যেখানে কিনা ভিয়েতনামের অংশ ছিলো ১০ শতাংশ (উৎস পিডব্লিউসি) এর বিপরীতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির ৭৪.১৪ শতাংশ কটনভিত্তিক পণ্য, যা কিনা গত ১০ বছর আগে ৬৮.৬৭ শতাংশ ছিলো। বিজিএমইএ মনে করে, কৃত্রিম তন্তুু উৎপাদনকে কর থেকে অব্যাহতি প্রদানের ফলে এখাতে বিনিয়োগ আরও উৎসাহিত হবে, এবং প্রকারন্তরে এটি আমাদেরকে রপ্তানি বহুমুখীকরণ এবং উচ্চ মুল্যের পণ্যে যেতে সহায়তা করবে।
বর্তমানে রপÍানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পখাতে কর্পোরেট করহার গ্রীন কারখানার জন্য ১০% এবং গ্রীন কারখানা ব্যতিত অন্যান্য কারখানার জন্য ১২% হারে বিদ্যমান রয়েছে। বাজেট প্রস্তাবনায় এই হার আগামী দু বছরের জন্য অব্যাহত রাখার ঘোষনা দেয়া হয়েছে। এই ঘোষণা প্রদানের জন্য শিল্পের পক্ষ থেকে মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
বাজেটে সুতার উপর করহার হ্রাস, পিপিই ও মাস্ক উৎপাদনকে ভ্যাট প্রদান থেকে অব্যাহতি প্রদান, তুলা আমদানির উপর শুন্য শতাংশ শুল্কহার অব্যাহত রাখা এবং জঋওউ ঞধম, ওহফঁংঃৎরধষ জধপশরহম ঝুংঃবস, ঈঁঃঃরহম ঞধনষব আমদানীতে রেয়াাতি সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। এগুলো শিল্পকে সহায়তা করবে বলে বিজিএমইএ মনে করে।
রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পে স্থানীয় পর্যায়ে সংগৃহীত পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে ভ্যাট প্রদান ও রিটার্ন দাখিল হতে অব্যাহতি দেয়ার প্রস্তাবটি সুবিবেচনা করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। সেই সাথে বর্তমানে নগদ সহায়তার বিপরীতে যে ৫% আয়কর কর্তনের বিধান রয়েছে তা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহারের অনুরোধ জানাচ্ছি।
রপ্তানীমূখী তৈরি পোশাক শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানীর ক্ষেত্রে বিজিএমইএ হতে জারিকৃত প্রত্যয়নপত্রের মাধ্যমে পন্য খালাস করা হতো কিন্তু বর্তমান বাজেট প্রস্তাবে বিভাগীয় মূসক কর্মকর্তার দপ্তর হতে প্রত্যয়ন পত্র নিয়ে পন্য খালাসের এস.আর.ও করা হয়েছে, যা আমদানী প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করবে এবং রপ্তানী ও বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। আমরা পূর্বের পদ্ধতিতে অর্থাৎ বিজিএমইএ হতে জারীকৃত প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে পন্য খালাস করার জন্য সংশ্লিষ্ট এস.আর.ও সংশোধন করার অনুরোধ করছি।
অগ্নি নির্বাপক উপকরন আমদানির ক্ষেত্রে বিজিএমইএ ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিয়োজিত ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মের যৌথ প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে পন্য খালাস করা হতো। কিন্তু বর্তমান বাজেট প্রস্তাবে বিজিএমইএ’র পাশাপাশি বিভাগীয় মূসক কর্মকর্তার দপ্তর হতে প্রত্যয়ন পত্র নিয়ে পন্য খালাস করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট এস.আর.ও সংশোধন করে পূর্বের ন্যয় শুধুমাত্র বিজিএমইএ’র প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে পন্য খালাস করা আবশ্যক।
বর্তমানে আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে প্রবেশ করেছি। এ পর্যায়ে থ্রি ডি স্যাম্পলিং, প্রোটোটাইপিং, ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা জরুরী। তবে এই মুহুর্তে আমাদের প্রয়োজন আমাজন কিংবা আলীবাবা’র মত একটি ভার্চুয়াল মার্কেটপ্লেস তৈরি করা, যার মাধ্যমে আমরা নিজেদের পন্য তথা ব্র্যান্ড বাজারজাত করতে পারবো, সেই সাথে কোভিড মহামারীর ফলে বাতিলকৃত রপ্তানী আদেশগুলো এই মার্কেট প্লেসের মাধ্যমে রপ্তানীর সুযোগ তৈরি হতে পারে। সর্বোপরি কোভিড পরবর্তী বিশ্ববাজারে ভোক্তা পর্যায়ে অনলাইন ভিত্তিক বিপনন ব্যবস্থা অধিক গুরুত্ব পাবে, যার জন্য এখন থেকে আমাদের প্রস্তুতি নেয়া উচিত। প্রস্তাবিত বাজেটে কৃত্রিম বুুদ্ধিমত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারের প্রদত্ত সহায়তা অত্যন্ত সময়োপযোগী, আমরা এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই এবং এর মাধ্যমে ভার্চুয়াল মার্কেটপ্লেস তৈরির বিষয়টি এগিয়ে নেয়া সহজ হবে বলে মনে করি।
পোশাক শিল্পের সংকট চলাকালে আমাদের কৃষিখাত ভালো করছে, এটা অবশ্যই জাতির জন্য আশাব্যঞ্জক। বিশেষ করে আমাদের শ্রমিক ভাই বোনদের খাদ্য সংস্থানে এটি সরাসরি প্রভাব রাখছে।
আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ যে, চরম অনিশ্চয়তার সময়ে সরকার শিল্পের সংকটগুলো অনুধাবন করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ ও গতিশীল নেতৃত্বে মাননীয় অর্থমন্ত্রী শিল্পের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য অব্যাহত সহযোগিতা যুুগিয়ে চলেছেন। কোভিড পরবর্তী অর্থনীতি বিনির্মান নিশ্চিতভাবেই আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে। সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে এই চ্যালেঞ্জে শিল্প নিশ্চিতভাবে বিজয়ী হবে, এ ব্যাপারে আমাদের শতভাগ আস্থা রয়েছে।