×

অর্থনীতি

দু’বছরের ব্যবধানে কুষ্টিয়ায় এবার চালের দাম বেশি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২০, ০১:৩২ পিএম

দু’বছরের ব্যবধানে কুষ্টিয়ায় এবার চালের দাম বেশি

ফাইল ছবি

কুষ্টিয়ায় চালের দাম বেড়েই চলেছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরে সব ধরনের চালের দাম কেজি প্রতি সর্বনিম্ন ৮ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ঈদুল ফিতরের আগে দাম কিছুটা কমলেও ঈদের পর থেকে কয়েক দফায় বেড়েছে চালের দাম। দাম বাড়ার এ প্রবণতা এখনও অব্যাহত রয়েছে।

খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছর জুনে যে চালের কেজি ছিল ৩২ থেকে ৩৩ টাকা সেই চাল এ বছরে একই সময়ে ৪৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত দুই বছরের মধ্যে এবারই চালের দাম সব থেকে বেশি

চিকন থেকে মোটা ও মাঝারি সব ধরনের চালের দাম বেড়ে গেছে। ধানের বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চালের দাম। মিল মালিকরা বলছেন, ধানের দামের সঙ্গে সমন্বয় করে চালের দাম বাড়ছে।

চাল ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, আমন মৌসুমের আগ পর্যন্ত চালের বাজারে দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। করোনা পরিস্থিতির কারণে বাইরে থেকে সহজেই চাল আমদানি করা যাবে না মনে করে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী, ফড়িয়া ও আড়তদাররা ধান-চাল মজুত করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মিল মালিক, কৃষক ও খাদ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রমজানের মধ্যে সারা দেশে পুরোদমে বোরো ধান কাটা শুরু হয়। নতুন ধান মিলগুলোতে আসায় চালের দাম ধীরে ধীরে কমতে থাকে। ঈদের আগ পর্যন্ত মিনিকেট, কাজললতা, বাসমতি, আঠাস ও মোটা জাতের চাল কেজিতে মিল গেটে ৩ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত কমে যায়। তবে ঈদের পরের চিত্র একেবারেই ভিন্ন।

চালকল মালিক সমিতির নেতা দাদা রাইস মিলের অন্যতম স্বত্বাধিকারী জয়নাল আবেদিন প্রধান বলেন, ঈদের আগে কুষ্টিয়ার মিলগুলো পুরোপুরি চালু হলেও নওগাঁ, দিনাজপুরসহ অন্যান্য জেলার মিলগুলো পুরো দমে উৎপাদনে ছিল না। ঈদের পর সব জেলার মিলগুলো পুরোদমে উৎপাদনে গেছে। প্রচুর ধান কিনছে মিল মালিকরা। ছাঁটাই ও বিপণন কার্যক্রম চলছে জোর গতিতে। ঈদের আগে ধানের যে দাম ছিল তার তুলনায় এখন দাম অনেক বেশি।

তিনি জানান, সব জাতের ধান মণ প্রতি ২৫০ টাকা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে আঠাশ, কাজললতা ও মিনিকেট (সরু) জাতের ধানের বাজার এখন অনেক বেশি। যে ধান গত বছর এই সময়ে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা মণ ছিল এখন তা হাজারে ঠেকেছে। পাশাপাশি সরু ধান গত বছর এই সময়ে ৮০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হলেও এখন ১ হাজার ১০০ টাকার বেশি বিক্রি হচ্ছে। ধানের দাম আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পৌর বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান জানান, ঈদের আগের তুলনায় এখন বাজার চড়া। এবার প্রচুর ধান ও চাল কিনে মজুত করেছেন ব্যবসায়ীরা। যাতে সময় বুঝে তা বাজারে ছেড়ে অধিক মুনাফা অর্জন করা যায়। মিনিকেট চাল ঈদের আগে প্রতি কেজি ৪৫ টাকা ছিল তা এখন ৫০ টাকা, আঠাস ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৬ টাকা, কাজললতাও একই দামে বিক্রি হচ্ছে।

খাজানগর মোকামের মিলারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এবার চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি। যার প্রভাব ইতোমধ্যে বাজারে পড়েছে। চালের বাজার শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকবে সর্বত্রই এ নিয়ে আলোচনা চলছে।

গত বছর জুনে খাজানগর চালের মোকামে সরু চালের দাম মিলগেটে ছিল ৪০ থেকে ৪২ টাকা। আঠাশ ও কাজললতা চালের কেজি ছিল ৩২ থেকে ৩৩ টাকা তা এখন ৪৪ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর মোটা পারিজা জাতের চালের দাম ছিল ২০ থেকে ২২ টাকার মধ্যে তা এখন ৩৭ থেকে ৩৮ টাকা মিলগেটেই বিক্রি হচ্ছে।

মিলাররা জানান, খোলা বাজারে ধান ও চালের বাজার বেশি হওয়ায় এ বছর বোরো ধান সংগ্রহ অভিযান অনেকটা থমকে গেছে। সরকারি গোডাউনে কৃষক ও মিলররা ধান-চাল দিতে পারছেন না। মোটা চালের দাম সরকার ৩৬ টাকা নির্ধারণ করলেও তা এখন বাইরে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৪ টাকা লোকসানে কোনো মিলার চাল দিতে চাইছে না। বাইরে বেশি দাম পাওয়ায় নানা ঝামেলার কারণে কৃষকরা গোডাউনে ধান দিতে চাচ্ছেন না। জেলায় এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ধান সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। ৩৪ হাজার টনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এ পর্যন্ত মাত্র ১ হাজার টন চাল সংগ্রহ হয়েছে।

চালের দাম বাড়ার বিষয়ে বাংলাদেশ অটো রাইস মিলস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি দেশের শীর্ষ চাল ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ বলেন, সিন্ডিকেট করে কোনো মিলার চাইলেও দাম বাড়াতে পারে না। এখন প্রতিযোগিতার সময়। ধানের বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চালের বাজার বাড়ছে। দেশে ঘূর্ণিঝড় আমফানে ১৫ ভাগ ধান নষ্ট হলেও বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে অভ্যন্তরীণ বাজারে ধান ও চালের সংকট হবে না। তবে দামের হেরফের হবে। কৃষকরা ধানের ভালো দাম পাচ্ছেন। দাম আরও বাড়তে পারে। ধানের দাম বাড়লে সামনে চালের দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App