×

জাতীয়

ঢাকা চেম্বারের তাৎক্ষণিক বাজেট প্রতিক্রিয়া

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২০, ০৬:৫৪ পিএম

২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ঢাকা চেম্বার (ডিসিসিআই)। বৃহস্পতিবার (১১ জুন) বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বাজেট প্রস্তাবনা পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ ফ ম মুস্তফা কামাল।

বিশ্ব অর্থনীতি যখন করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিপর্যস্ত, ঠিক এই কঠিন সময়ে আজকের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্য নিয়ে ঘোষিত জাতীয় বাজেট ২০২০-২১ এ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৮.২% ও মুদ্রাস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৫.৪% নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সময়ে এরূপ প্রোগ্রেসিভ ও উচ্চ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ঘোষিত বাজেট আশাব্যাঞ্জক। কিন্তু এ ধরনের প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে অর্থনীতির সকল ক্ষেত্রে উত্তরণ ঘটতে হবে যা অনেকাংশে কঠিন। তবে বাজেটে বিনিয়োগ বাড়ানো ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে ডিসিসিআই।

এক বিবৃতিতে তারা বলেন-

২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের আয়তন ৫ লক্ষ ৬৮ হাজার কোটি টাকা যা বিগত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ১৩.২৪% বেশি। মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লক্ষ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা যা বিগত বছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৯.৮২% বেশি। তাই এই অতিরিক্ত রাজস্ব আহরণের জন্য করের আওতায় বাড়ানো, অনাদায়ী কর আদায় ও মফস্বল শহরে রাজস্ব আদায় বাড়াতে রাজস্ব বোর্ডের মাঠপর্যায়ে জনবল বাড়ানো প্রয়োজন। বেসরকারি বিনিয়োগের ধারা অব্যাহত রাখতে বিদ্যমান করদাতাদের উপর নতুন করে করবোঝা আরোপ না করে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে।

এছাড়া, রাজস্ব বোর্ড বহির্ভূত রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি পেলেও বিগত অর্থবছরের তুলনায় করবর্হিভূত রাজস্বের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে ৫.৭২%। নতুন বাজেটে ঘাটতির (অনুদানসহ) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা যা মোট জিডিপির ৬%। প্রতিবছর ঘাটতি বাজেট ৫% ধরা হলে এর কমই বাস্তবায়ন হয়। তাই অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলায় এই ঘাটতি সহনশীল ও জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যয় হতে পারে।

২০২০-২১ অর্থবছরে ঘাটতি বাজেট পূরণে ব্যাংকিং খাত থেকে সরকার ঋণ নিবে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা যা বিগত অর্থবছরে সংশোধিত ঘাটতি বাজেটের ঋণের তুলনায় ৩.১০% বেশি।

২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারের পরিচালনা ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লক্ষ ১১ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। অথচ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২ লক্ষ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং বিদ্যুৎ বিভাগে। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষিতে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বিবেচনায় স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ আরও বৃদ্ধি করা উচিত।

ঢাকা চেম্বারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সরকার এ অর্থবছরে ব্যক্তিশ্রেণির আয়করের ন্যূনতম সীমা ৩ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। পাশাপাশি সরকার এবারের বাজেটে আমাদের প্রস্তাব অনুযায়ী সর্বনিম্ন করহার ৫% নির্ধারণ করেছে, যা সত্যি সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো এবং সর্বোচ্চ করহার ২৫% নির্ধারণ করার কারণে করদাতাদের উপর করবোঝা কিছুটা হলেও লাঘব হবে বলে আশা করি।

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুজ্বীবিত করতে সরকার এ অর্থবছরে কর্পোরেট ট্যাক্স হার হ্রাস করেছে যা প্রশংসার দাবিদার। বিশেষত, বেসরকারি খাতের ননলিস্টেড কোম্পানির ২.৫% কর্পোরেট ট্যাক্স হ্রাস করা হয়েছে। তবে কর্পোরেট করের হার বর্তমানে আরও হ্রাস করা প্রয়োজন যাতে করোনা প্রাদুর্ভাব পরবর্তী সময়ে ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে পারে। পাশাপাশি, আমাদের আহŸানে সাড়া দিয়ে জরিমানাবিহীন ভ্যাট ও ট্যাক্স প্রদানের সময়সীমা বৃদ্ধি করার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। পাশাপাশি, বাজেটে নতুন শিল্পে কর অবকাশ সুবিধা যেমন আর্টিফিসিয়াল ফাইবার প্রোডাকশন, ন্যানো টেকনোলজি বেইজড প্রোডাক্ট, আর্টিফিয়াল ইন্টিলিজেন্স, অটোমোবাইল পার্টস, রোবোটিক ডিজাইন অ্যান্ড ম্যানুফেকচারিং, ইলেকট্রিক্যাল ট্রান্সফরমার প্রোডাকশন, এয়ারক্রাফট মেইনটেন্যান্স অ্যান্ড সার্ভিস শিল্পকে কর অবকাশ সুবিধা দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। তবে ব্যক্তি পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের জন্য ৩ কোটি টাকার উপর টার্নওভার হলে ন্যূনতম ০.৫% হারে কর নির্ধারণ করার কারণে ব্যবসায়ীদের এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে করভার বৃদ্ধি পাবে। আমরা তা হ্রাস করার প্রস্তাব করছি। পাশাপাশি, যে পরিমাণ অর্থ আন্ডার বা অভার ইনভয়েসিং করা হবে এবং যে পরিমাণ প্রদর্শিত বিনিয়োগ ভুয়া প্রমাণিত হবে তার উপর ৫০ শতাংশ হারে কর আরোপের প্রস্তাব অর্থ পাচার রোধে ভূমিকা রাখবে যা প্রশংসনীয়।

এ বছর দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল ও উপকরণ আমদানি করার ক্ষেত্রে অগ্রীম করের পরিমাণ ৫% থেকে ৪% নির্ধারণ ও অগ্রিম কর সমন্বয় করার জন্য দুই কর মেয়াদের পরিবর্তে চার কর মেয়াদে সমন্বয় করার সুযোগ দেয়ার জন্য আমরা ধন্যবাদ জানাই। তাছাড়া আমদানি পর্যায়ে অগ্রীম কর হ্রাস করে দেশীয় উৎপাদনমুখী কাঁচামাল সরবরাহ সহজতর করার পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। তবে আমরা মনে করিÑ ভ্যাট আরোপ মূল্য সংযোজন বা মুনাফা অনুপাতে হতে হবে। বিশেষত, ভ্যাট রিটার্ন পদ্ধতি সম্পূর্ণ অনলাইন করা, রিফান্ড পদ্ধতি সহজীকরণ এবং মূল্যসংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইনের ধারা ৬৮ অনুযায়ী ভ্যাট, শুল্ক ও অগ্রীম কর ২ মাসের মধ্যে রিফান্ড করার প্রস্তাব করছি। তাছাড়া, আমরা পরিবহন কর রেয়াত ৮০% পর্যন্ত অনুমোদন ও ইউটিলিটি বিলসমূহ উপকরণ কর রেয়াত অনুমোদন করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

পাশাপাশি, ভ্যাট আইনের ৮৩ এর উপধারা ৪ অনুযায়ী সাধারণ রাজস্ব কর্মকর্তাকে ব্যবসাস্থল অনুমতিহীন পরিদর্শন ও হিসাব পরীক্ষা করতে দিলে হয়রানির আশঙ্কা থেকে যায়। অন্যদিকে আপিল ও ট্রাইবুনালে আবেদনের পূর্বে ১০% এর পরিবর্তে উভয়ক্ষেত্রে ২০% নির্ধারিত অর্থ জামানত হিসেবে দিতে হলে ব্যবসায়ীদের ন্যায় বিচার পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে এবং কর নিরুপণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হিসেবে বিবেচিত হবে। তাই এই সিদ্ধান্তগুলোকে পুনর্বিবেচনা করার আহŸান জানাই।

করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)’র তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ১১ মাস শেষে গত অর্থবছরের তুলনায় রপ্তানি কমে গেছে ১৮%। এ অবস্থায় সরকার শিল্প ও সেবা প্রতিষ্ঠানের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের পরিমাণ বৃদ্ধিসহ রপ্তানিমুখী শিল্পের শ্রমিকদের বেতন ভাতার জন্য শহজ শর্তে ঋণ প্রদানসহ যেসব আর্থিক ও নীতিগত সহায়তা প্রদান করেছে, তার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। পাশাপাশি, রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্প, চামড়া, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাতপণ্য এবং ঔষধ পণ্যসমূহের কাঁচামাল আমদানিতে অগ্রিম আয়কর অব্যাহতি ও অগ্রিম কর প্রত্যাহারের আবেদন জানাচ্ছি। করোনা প্রাদুর্ভাব পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাপী রপ্তানি চাহিদা হ্রাস পেয়েছে। এমতাবস্থায় উৎসে কর ০.২৫% এর পরিবর্তে ০.৫% করার কারণে সকল রপ্তানিমুখী শিল্প চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে। তাই রপ্তানি আয়ের উপর উৎসে কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আহŸান জানাচ্ছি। এ খাতে ১ শতাংশ ক্যাশ ইনসেনটিভ বহাল রাখার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি।

ঢাকা চেম্বার করোনা প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় সিএমএসএমই খাতে সরকার ঘোষিত ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের জন্য সাধুবাদ জানায়। পণ্য রপ্তানি যখন ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে, তখনো এমএসএমই খাত দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখেছে। এসএমই উদ্যোক্তাদের ইউটিলিটি সেবা সমূহের উপর ভ্যাট মার্চ ২০২০ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২০ পর্যন্ত মওকুফ করা হলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের বর্তমান অবস্থায় টিকে থাকা কিছুটা সহজ হবে। পাশাপাশি বিসিক এবং ইপিজেডে অবস্থিত শিল্প প্রতিষ্ঠানের ভাড়া মার্চ ২০২০ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২০ পর্যন্ত মওকুফ করার আহŸান করছি। তাছাড়া, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের বেতন প্রদানের জন্য ২% সুদে শহজ শর্তে ঋণ প্রদান ও দেশীয় বাজারে আমদানি বিকল্প ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের তুলনামূলক সুবিধা নিশ্চিত করতে Protection Measures গ্রহণ করার জন্য আমাদের প্রস্তাবটি পুনর্বিবেচনার প্রস্তাব করছি। তবে সরকার বিলাসবহুল পণ্যের উপর যে শুল্কারোপ করার প্রস্তাব করেছে, তা সময়োপযোগী। তাছাড়া, স্থানীয় পর্যায়ে লোকাল এলসির মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে উৎসে কর ২% প্রস্তাব করা হয়েছে অথচ পূর্বে কোন উৎসে কর ছিল না। এতে করে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে। আমরা তা ২% নিধারণ না করে ১% হারে নির্ধারণ করার আহŸান জানাচ্ছি।

যেহেতু বাজেটের ঘাটতি ব্যয় মেটাতে আর্থিক খাতের উপর নির্ভরতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অর্থনীতিতে করোনা ঝুঁকি মোকাবেলায় ব্যাংকিং খাত ব্যাপকভাবে জড়িত তাই বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও সাবেক বিশিষ্ট ব্যাংকারদের নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী আর্থিক খাত পরামর্শক কমিটি গঠন করার প্রস্তাব করছি যা করোনা দুর্যোগের সময়ে আর্থিক খাত সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য দিকনির্দেশনা প্রদান করবে। প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণপ্রদান প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও খেলাপি ঋণ আদায়ে উদ্যোগ গ্রহণ করে বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার অনুরোধ করছি। পাশাপাশি ব্যাংকিং খাত ব্যতীত বিকল্প অর্থ সংস্থানের জন্য শক্তিশালী পুঁজি বাজার ও বন্ড মার্কেট গঠনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও বিদেশি দাতা সংস্থার নিকট থেকে শহজ শর্তে ঋণ নেওয়ার আহŸান জানাচ্ছি।

বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা জিডিপির ২৫.৩% অর্জনে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। প্রণোদনা প্যাকেজের আওতার বাইরে অন্যান্য ঋণ সহজ শর্তে বেসরকারিখাতে প্রদান ও ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তাদের ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের ঘাটতি পূরণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ করছি।

প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক এসএমই খাতে ঋণপ্রদানে সরকারি ব্যাংকগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আমরা প্রস্তাব করেছিলাম। অর্থমন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা সরকারি ব্যাংকগুলোকে প্রদান করেছে যা প্রশংসনীয়। তাছাড়া, আমরা প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ প্রদান করার শর্ত সহজ, অতীতে প্রদত্ত ঋণের মেয়াদ হ্রাসকরণসহ অনাদায়ী ঋণ আদায় করার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করছি। আশা করছিÑ এ ব্যাপারটি সরকার বিশেষ বিবেচনায় নেবে। পাশাপাশি ঋণ প্রাপ্তি সহজতর করার লক্ষ্যে আমরা ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম চালু করার প্রস্তাব গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করছি। এত করে ঋণ প্রাপ্তির বিষয়টি সহজতর হত।

দেশীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং দেশীয় অপ্রদর্শিত অর্থ বিদেশে পাচার বন্ধে অপ্রদর্শিত অর্থ আবাসন, ব্যাংক আমানত, সঞ্চয়পত্র ও পুঁজিবাজারে সহজ শর্তে বিনিয়োগ করার সুযোগ দেয়ার কারণে বর্তমান করোনা দুর্যোগের সময়ে অর্থনীতিতে কিছু বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। তবে ক্যাশ, ব্যাংক ডিপজিট, ফিন্যান্সিয়াল স্কিম, ইনস্ট্রুমেন্ট, সেভিং ইনস্ট্রুমেন্ট ও সার্টিফিকেট-এ অপ্রদর্শিত অর্থ সহজ শর্তে ব্যয় করার সুযোগ দিলে পুঁজিবাজার ও আবাসনখাতে অপ্রদর্শিত আয় ব্যবহৃত না হয়ে ব্যাংকে সঞ্চয় বাড়বে। তাছাড়া, করোনা দুর্যোগ মোকাবেলায় অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খাত ভিত্তিক প্রটোকল প্রণয়ন, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে ডুয়িং বিজনেস ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান উন্নয়নে অনলাইন প্লাটফর্ম তথা ওয়ান স্টপ সার্ভিস সর্বত্র ব্যবহার করার সুযোগ সৃষ্টির জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করার অনুরোধ জানাচ্ছি।

২০২০-২১ অর্থবছরে এডিপি খাতে ২ লক্ষ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার, সড়ক ও যোগাযোগ এবং বিদ্যুৎ অবকাঠামোখাতে এডিপি বরাদ্দ বৃদ্ধি প্রশংসনীয়। স্বাস্থ্য খাতের অবকাঠামো উন্নয়নে ১০ হাজার ৫৪ কোটি টাকা এডিপি বরাদ্দ করা হয়েছে। আমরা মনে করিÑ এখাতে বরাদ্দ আরও বৃদ্ধি করা উচিত এবং স্বাস্থ্য খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে এডিপি দ্রæত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। এছাড়া পদ্মা সেতু, এমআরটি, মাতারবাড়ি এলএনজি টার্মিনাল ও বে-টার্মিনালসহ ১০ টি ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের মধ্যে যা অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনসাধারণে জীবনযাত্রার সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্ট, সেসব প্রকল্প অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করার অনুরোধ করছি। পাশাপাশি, অন্যান্য বৃহৎ প্রকল্পগুলো ভবিষ্যতে যেন অল্প সময়ে ও কম খরচে দ্রæত বাস্তবায়ন করা যায় তার জন্য রূপরেখা প্রণয়ন করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে আহ্বান করছি।

২০২০-২১ অর্থবছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ২৬ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে যার অধিকাংশই ট্রান্সমিশন এবং ডিস্ট্রিবিউশন খাতে ব্যয় হবে। এতে ট্রান্সমিশন এবং ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক শক্তিশালী হবে এবং মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সহায়ক হবে। তবে জ্বালানী উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করতে Power Purchase Agreement (PPA) অনুযায়ী কোনো Independent Power Producer (IPP) বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলে কোনো পেমেন্ট না দেয়ার প্রস্তাব করছি। যাদের পেমেন্ট দেয়া হবে তাদের স্থানীয় মুদ্রায় পেমেন্ট করার প্রস্তাব করছি। পাশাপাশি, যেসব গ্যাসভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্টের সাথে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে, তাদের চুক্তি পুনর্নবায়ন না করার প্রস্তাব করছি। কারণ আমদানি করা প্রাকৃতিক রূপান্তরিত গ্যাসের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় বেশি হয়, যার অতিরিক্ত বোঝা শেষ পর্যন্ত গ্রাহককেই বহন করতে হয়।

কৃষি খাতে ১৬ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যা সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৩ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা বেশি। এই খাতে ভর্তুকি ৮ হাজার ১ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করা হয়েছে যা প্রশংসাযোগ্য। কৃষি খামার যান্ত্রিকীকরণে ৩ হাজার ১৯৮ কোটি টাকার প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। পাশাপাশি, বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে কৃষি পুন:অর্থায়ন স্কীম এ ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার সিদ্ধান্ত কৃষি খাতের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি কৃষকদের আথিক প্রণোদনা প্রদান ও সরকারিভাবে আর বেশি কৃষিপণ্য সংরক্ষণাগার তৈরি করা প্রয়োজন। কৃষিতে এখনো মোট কর্মসংস্থানের ৪২% জড়িত। তাই কৃষিকে সুরক্ষা দিতে পারলে দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেয়া সম্ভব হবে।

স্বাস্থ্যখাতে করোনার মত মহামারীরোধী অবকাঠামো নির্মাণ ও প্রয়োজনীয় মানবসম্পদের নিয়োগ প্রদান জরুরি। এছাড়া ভবিষ্যৎ মহামারী এবং জনস্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ রাখা অত্যন্ত জরুরী। তাছাড়া, টেলিমেডিসিনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে সহজে চিকিৎসা সেবা প্রদানকে উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা দেয়া প্রয়োজন। এছাড়া, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ধারাবাহিকভাবে স্বাস্থ্যবীমা চালু করা এবং বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা সেবাকে যথাযথ মনিটরিং এর আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন।

২০২০-২১ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ৯৫৫৭৪ কোটি টাকা হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যা বিগত বছরে ছিল ৮১ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে বাংলাদেশে বর্তমানে দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। এই জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ে নিয়ে আসা প্রয়োজন এবং সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীতে অন্তর্ভুক্তকরণে সুশাসন এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি, সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা ও সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা চালুর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। এছাড়া, সীমিত পরিসরে বেকার ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে করোনা সংক্রমণের কারণে বিপর্যস্ত বেকার জনগোষ্ঠী ঘুরে দাঁড়াতে পারে।

গত একদশকে প্রবৃদ্ধি উৎসাহব্যাঞ্জক হওয়া সত্তে¡ও ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের চাপে ছিল বাংলাদেশ। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে বেকারত্বের চাপ প্রবলতর হচ্ছে এবং বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণের কারণে বিশাল সংখ্যক বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিকের চাকরি অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির চেয়ে বিদ্যমান কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখাই বর্তমানে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কৃষি এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প খাতে প্রবাসী শ্রমিক এবং বেকার তরুণদের নতুন উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে ২০০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করার সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী । এছাড়া তরুণ জনগোষ্ঠীকে আপ-স্কিলিং এবং রি-স্কিলিং এর জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন।

করোনা মহামারীর অভিঘাতে পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় নতুন পণ্য বা সেবার বহুমুখীকরণ ও নতুন ব্যবসায়িক প্রক্রিয়া উদ্ভাবনের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি। এ লক্ষ্যে কোম্পানির আয়ের ৫% পর্যন্ত গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে বনিয়োগ করা হলে কর অবকাশ সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

ঢাকা চেম্বার (কোভিড-১৯ মোকাবেলায়) প্রদত্ত প্রস্তাবের অধিকাংশই সরকার অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিয়েছে। বিশেষত আয়কর ও ভ্যাট প্রদানের সময়সীমা বৃদ্ধি, ব্যক্তিশ্রেণির আয়করসীমা বৃদ্ধি, কর্পোরেট করহার হ্রাস, সরকারি তফসিলি ব্যাংক এসএমইখাতে ঋণপ্রদানে সংযুক্ত হওয়া, দেশীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের বাজারে প্রবেশের সুযোগ প্রদানের জন্য আমদানিকৃত কাঁচামালের উপর অগ্রীম কর হ্রাস করা, আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত আয় সহজ শর্তে বিনিয়োগ করার সুযোগ প্রদান এবং স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় বৃদ্ধিসহ অন্যান্য সুপারিশ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেছে। তাছাড়া, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি সময়োপযোগী ।

তবে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঘোষিত সরকারি সহায়তা সহজতর উপায়ে ব্যবসায়ীদের ঋণ প্রদান করা গেলে সম্ভাব্য মন্দা মোকাবেলায় অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে ঘোষিত বাজেট সহায়ক হবে বলে মনে করি । পাশাপাশি, অর্থনৈতিক ক্ষতি যথাযথভাবে নিরুপণ করে প্রণোদনা প্যাকেজের পরিমাণ ও আওতা বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করছি। বর্তমান বাজেটে রাজস্ব ঘাটতি ও অর্থায়ন একটি চ্যালেঞ্জ। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে করোনা সংক্রমণ রোধ করা বাঞ্ছনীয়। যদিও এটি একটি ব্যয়বহুল বাজেট, এর মাধ্যমে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ব্যবসায়ীদের আর্থিক প্রণোদনা, সামাজিক নিরাপত্তা ব্যয় বৃদ্ধি ও জনগণকে করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি থেকে রক্ষায় যথেষ্ট বরাদ্দ থাকার কারণে এটি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক বাজেট হয়েছে বলে মনে করি। তবে এত বড় বাজেট বাস্তবায়ন অনেকটা চ্যালেঞ্জিং হবে, তাই রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ করছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App