×

সারাদেশ

মানচিত্র থেকে মুছে যাচ্ছে ঢালচর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ জুন ২০২০, ০৯:৩০ পিএম

মানচিত্র থেকে মুছে যাচ্ছে ঢালচর

একদিন বিলীন হবে চরের এ মাটিও। ছবি: ছবি: এআর সোহেব চৌধুরী

মানচিত্র থেকে মুছে যাচ্ছে ঢালচর

এখনও মায়ার টান। ছবি: প্রতিনিধি

মানচিত্র থেকে মুছে যাচ্ছে ঢালচর

শূন্য ভিটা।

মানচিত্র থেকে মুছে যাচ্ছে ঢালচর

চরের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে শিকড়। ছবি: এআর সোহেব চৌধুরী

মানচিত্র থেকে মুছে যাচ্ছে ঢালচর

পানি আছে পানীয় জল নেই। ছবি: এআর সোহেব চৌধুরী

মানচিত্র থেকে ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ঢালচর। নদী ও সাগরবেষ্ঠিত ছোট্ট এ দ্বীপ জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে। চরফ্যাশন উপজেলায় ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে এর বিস্তার। প্রবল ভাঙনে বিধ্বস্ত ঢালচর ইউনিয়নটি প্রায় দুইশ বছর আগে মেঘনা আর বঙ্গপোসাগরের বুকে জেগে ওঠে। আর এখন চরটির মানচিত্র থেকে মুছে যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। এ চরের এক সময়ে মৎস আহরণের জন্য ব্যাপক নামডাক ছিল। আড়ৎ ও মাছের গদিগুলোয় ব্যাপক হাকডাক ছিল। তবে সময়ের পরিক্রমায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। শৈশব ও কৈশোরের স্মৃতি চিহ্নটুকুও বিলীন হয়ে যাচ্ছে বলে জানালেন জেলে নাসির মিয়া (৭২)। তিনি বলেন, শৈশবে দৌলতখান উপজেলার হাকিমুদ্দিন থেকে নদী ভেঙে বাবার সঙ্গে আসেন ঢালচরে। সেই থেকেই বাবার সাথে নদী ও সাগরে মৎস শিকার করেই কাটিয়ে দিয়েছেন ৬০ বছর। শেষ বয়সে এসে মেঘনা ও বঙ্গোপাসাগরের করালগ্রাসে সহায়সম্বল ও জমিজমা হারিয়ে এখন পথে বসে গিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, এক টুকরো ভূমি নেই যে বুড়ো বয়সে ছেলে সন্তান নিয়ে সেখানে বসবাস করবো। [caption id="attachment_225048" align="aligncenter" width="1280"] এখনও মায়ার টান। ছবি: ছবি: এআর সোহেব চৌধুরী[/caption] নদীর কিনারায় অবস্থিত চায়ের দোকানদার নুরুল ইসলাম ঝান্টু (৫০) বলেন, ৩৬ বছরে ১০ বার নদীর ভাঙনে আমার প্রায় ১৬০ শতাংশ জমি হারিয়ে এখন খুব অসহায়ভাবে জীবন যাপন করছি। আমার দুই ছেলে, বড় ছেলেকে ঢাকায় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াচ্ছি ছোট ছেলেটাও পড়ছে। তবে এখানকার প্রত্যেকটি মানুষ নদী ভাঙনে কর্মহীন হয়ে পড়েছে। আর তাই ঢালচর এখন দারিদ্রতায় হাহাকার করছে। দীর্ঘ দেড় যুগের বেশি সময় ধরে মেঘনার ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে এ অঞ্চল ত্যাগ করে অন্য কোনো জনপদে চলে যাচ্ছেন এখানকার অনেক পরিবার। অন্যত্র চলে যাওয়া এখন ধারাবাহিকতায় পৌঁছে গিয়েছে। তবে বেশিরভাগ নারীপুরুষ নতুন জেগে ওঠা চরসহ স্থানীয় তারুয়ার চরে গিয়ে আশ্রয় নিলেও সেখানকার বন বিভাগ তাদের জায়গা দিতে নারাজ। [caption id="attachment_225051" align="aligncenter" width="1280"] শূন্য ভিটা। ছবি: এআর সোহেব চৌধুরী[/caption] এদিকে গত একবছরের ধারাবাহিক ভাঙনে শতাধিক বাড়িঘরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও প্রায় হাজার হেক্টর জমির শ্বাসমূলীয় (ম্যানগ্রোভ) বনাঞ্চল ও ফসলাধি বিলীন হয়ে গেছে মেঘনা ও বঙ্গোপসাগরের ঘোলাটে জলের পেটে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সালাম হাওলাদার জানান, একানে প্রাথমিক বিদ্যায় থাকলেও নেই মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নেই কোনো খাল যাতে করে এ অঞ্চলের ৯৮ ভাগ জেলে বন্যা ও জলচ্ছ্বাসের সময় সাগর ও নদী থেকে খালে এসে নিরাপদে আশ্রয় নিতে পারে। [caption id="attachment_225052" align="aligncenter" width="1280"] চরের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে শিকড়। ছবি: এআর সোহেব চৌধুরী[/caption] এছাড়াও দীর্ঘদিনের ভাঙনে দিশেহারা মানুষ বিপর্যস্ত হয়ে হাজার হাজার একর জমি খালি পড়ে থাকা চর তারুয়া ও পূর্ব ঢালচরে এক টুকরো ভূমির জন্য চেষ্টা করছে। তবে চাষাবাদসহ বসতি স্থাপনের জন্য তারা পাচ্ছে না। সালাম হাওলাদার আরও বলেন, খালি থাকবে না এক শতাংশ জমিও- মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণা থাকলেও হাজার হাজার একর জমি পড়ে আছে এসব চরে। তবুও জনস্বার্থে চাষবাস করার অনুমতি মিলছে না উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের। অথচ গত এক বছরে ঢালচরবাসীর প্রায় ৫০ একর জমি ও দুই শতাধিক বাড়িঘর এবং বনাঞ্চলসহ ব্যাপক ফসল বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। বর্তমানে মাত্র ১২শ ১২ একর ৫২ শতাংশ জমি নিয়ে এ ঢালচরটি অনবরত ভাঙনের মুখে রয়েছে। [caption id="attachment_225053" align="aligncenter" width="1280"] পানি আছে পানীয় জল নেই। ছবি: এআর সোহেব চৌধুরী[/caption] উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন জানান, ঢালচর ইউনিয়নে ভাঙন কবলিত মানুষের জন্য ভূমি বরাদ্দের বিষয়টি নিয়ে কাজ চলমান। চরতারুয়া ও পূর্ব ঢালচরের বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App