×

সম্পাদকীয়

যমুনার ভাঙন ঠেকাবে কে?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ জুন ২০২০, ০৮:৫২ পিএম

দেশে প্রতি বছরই বিস্তীর্ণ এলাকা নদীভাঙনের শিকার হয়। বছরে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়। আর ঘরবাড়ি, ফসলের জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায় অসংখ্য মানুষ। এবারো জুন মাস থেকেই একাধিক জেলায় নদীভাঙন শুরু হওয়ার খবর গণমাধ্যমে আসছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পর্যবেক্ষণ মতে, দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর প্রায় ৩শ ভাঙনপ্রবণ এলাকা স্পষ্ট রয়েছে। এই মুহূর্তে সরকার ও সংবাদমাধ্যমের মনোযোগ যদিও শরীয়তপুরের নড়িয়া এলাকায় পদ্মার ভাঙনের দিকে বেশি, অন্যান্য ভাঙন এলাকাও সেখানকার জন্য সমান উদ্বেগের। কয়েক দশক ধরেই সিরাজগঞ্জ সবচেয়ে বেশি ভাঙনপ্রবণ এলাকা। গতকাল ভোরের কাগজের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্ষা মৌসুম আসার আগেই সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। পানির প্রবল স্রোতে সদর উপজেলার শিমলা স্পারের মাটির তৈরি স্যাংকে ধস নামে। এতে প্রায় ২৫ মিটার মাটির তৈরি বাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। তীব্র ভাঙনের ফলে যমুনাগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে চৌহালীর ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে ৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ খাস পুকুরিয়া ও বাগুটিয়া ইউনিয়নের অন্তত পাঁচটি গ্রাম। ভাঙনরোধে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। ভাঙনরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ইতোমধ্যে ভাঙনের মুখে বিলীন হয়ে গেছে চোরমারা, ঝুমকাইল, তারাকান্দি, বারাবাড়ি, টেংলাহাটা, দোয়েল, বাঘগাড়ী, পাটাগ্রাম, পূর্ব খুকশিয়া, খাস খুকশিয়া, প্রজারপাড়া, বেতগাতী, চর সিংড়াবাড়ি, ভুরুঙ্গী, কান্তনগর, শুভগাছাসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম। চৌহালী ও কাজিপুরে গত এক সপ্তাহে শতাধিক বাড়ি যমুনাগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে রাত কাটছে এসব এলাকার কয়েকটি গ্রামের মানুষের। এক গবেষণা রিপোর্ট বলছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমি নদীতে হারিয়ে যাচ্ছে। গত চার দশকে বাংলাদেশের প্রধান তিনটি নদীতে দেড় লাখ হেক্টর জমি হারিয়ে গেছে। আর চর জেগে উঠেছে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমি। সেই হিসাবে বাংলাদেশ নদীতে ১ লাখ হেক্টর জমি হারিয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এড়ানোর উপায় নেই। আমাদের দেশের মানুষ বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে বেঁচে আছে। আমরা দেখি, প্রতি বছরই বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ হয় ভাঙন রোধে। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত কত টাকা পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার নামে ব্যয় হয়েছে, সেই হিসাব পাওয়া কঠিন। সেই অর্থ কতটা কাজে আসে, সেটা আরেকটি প্রশ্ন। কারণ ভাঙন রোধে নদীতীরে যেসব প্রকৌশল স্থাপনা তৈরি করা হয়, সেগুলোর গুণগত মান, কৌশল নিয়েও প্রশ্নের শেষ নেই। সিরাজগঞ্জের মতো জনপদকে ভাঙনের কবল থেকে রক্ষার জন্য ইতোমধ্যে শত শত কোটি টাকা খরচ করলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি কি দেখা যায়? নদীভাঙন রোধে আমাদের সামর্থ্য এ যাবৎকাল খুব একটা প্রমাণিত হয়নি বলেই প্রতীয়মান। কাজের চেয়ে প্রতিশ্রুতি আর দুর্নীতিই বেশি হয়েছে। আমরা চাই, যমুনা নদীসহ দেশের অন্যান্য নদীতে সৃষ্ট ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া হোক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App