×

সাহিত্য

বুকের মধ্যে হাহাকার নিয়ে আছি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ জুন ২০২০, ১০:৩০ এএম

বুকের মধ্যে হাহাকার নিয়ে আছি

ফরহাদ খান

ফরহাদ খান। প্রাবন্ধিক-গবেষক। একজন বেতার ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব হিসেবেও তিনি সুপরিচিত। মূলত তার প্রধান পরিচয় তিনি একজন লেখক। ভাষা ও হরফসহ ব্যতিক্রমী বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি বেশ কিছু দামি গ্রন্থ উপহার দিয়েছেন। বাংলা একাডেমি ছোটদের অভিধানসহ বেশ কিছু বইয়ের সম্পাদনার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।

ফরহাদ খান ১৯৬৫ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত বেতারে সংবাদ অনুবাদ ও পাঠ করেছেন। ১৯৮৬ পর্যন্ত ঢাকা বেতারের ‘উত্তরণ’ ও ‘সংবাদ বিচিত্রা’র সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনে তিনি মাতৃভাষা নিয়ে ‘মোদের গরব মোদের আশা’, বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিয়ে ‘আবহমান বাংলা’ এবং ‘মাতৃভাষা’ অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছেন। বাংলা একাডেমির ভাষা-সাহিত্য, সংস্কৃতি ও পত্রিকা বিভাগের পরিচালক পদ থেকে অবসর শেষে মাঝে কাজ করেছেন জার্মানিতে, ডয়েটশে ভেলে রেডিয়োতে, বাংলা বিভাগের অন্যতম সম্পাদক হিসেবে। বর্তমানে তিনি লেখালেখি নিয়েই ডুবে আছেন।

করোনাকাল কেমন কাটছে ভোরের কাগজের এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সময়টা স্বস্তিতে কাটানোর মতো নয়। ছোটবেলায় বসন্ত দেখেছি। কিন্তু এখন করোনা যেন ঘাড়ের উপর এসে নিঃশ্বাস ফেলছে! এই বয়সে এসে এমন দুঃসময় পার করতে হবে ভাবতেই পারিনি। এতো অসহায় বোধ আর কখনো লাগেনি।

কি লিখছেন জানতে চাইলে এই গবেষক বলেন, চোখের সমস্যায় ভুগছি। তারপরও জীবনের টুকরো টুকরো স্মৃতিকথা লিখছি। ছোটবেলায় বই পড়া, উঠোনে উঠোনে বড় হওয়াগুলো লিখছি। তবে এক নাগাড়ে লিখতে পারছি না। পাঁচ মিনিট লিখলাম এর কিছুক্ষণ পর একটু রেস্ট নিলাম, এভাবেই লেখা এগিয়ে নিচ্ছি। এই মুহূূর্তে ছেলেবেলার সাইকেলের গল্প লিখছি। এছাড়া পুরনো দিনের গান শুনছি। যেহেতু হকারের যাতায়াত নিষিদ্ধ তাই খবরের কাগজ পড়তে পারছি না।

করোনার এই সময়টায় আপনার চেনা পৃথিবীটা বদল ঘটেছে বলে মনে করছেন? জবাবে ফরহাদ খান বলেন, একেবারেই সবকিছু সম্পূর্ণ বদলে গেছে। আমাদের যে মানবিক মূল্যবোধ সেসব ওলটপালট হয়ে গেছে। আমাদের যে সামাজিক মূল্যবোধ, আমরা যেটা দীর্ঘকাল ধরে দেখে আসছি সেগুলোরও বদল ঘটে গেছে। বলব ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে গেছে। পাশেই বন্ধুর বাড়ি সেখানে যাওয়া হয় না। একই শহরে আছে আমার মেয়ে। তাকে দেখতে যেতে পারছি না। বুকের মধ্যে হাহাকার নিয়ে আছি। করোনা সব কিছুকে আটকে দিয়েছে। জীবন সম্পর্কে আমাদের যে ধারণা সেটাও অনেকদিন ধরে পাল্টে গেছে। একটা ভাইরাসের কারণে এতো যে মৃত্যু হয় এর আগে আমার ধারণাই ছিল না। একাত্তর সালে কোথাও চলে

যেতে পারিনি। দেশেই ছিলাম। তখন একেবারে সাক্ষাৎ মৃত্যু, একেবারে যখন-তখন। তখনো কিন্তু মৃত্যুকে নিয়ে কোনো ভয় ছিল না। যে কোনো মুহূর্তে পাকিস্তানিরা এসে পরতে পারে, ওরা ব্রাশফায়ার করতে পারে, মারা যেতে পারি। কিন্তু এরকম মৃত্যু ভয়ে থাকা এটা কখনো ভাবতেই পারিনি। তাছাড়া এখন যেসব খবর দেখছি বাবাকে মাকে সন্তানকে কবরে গিয়ে শেষ দেখাটা দেখারও সুযোগ নেই। এসব দেখে আমার মনে হচ্ছে- পৃথিবীতে এরকম ঘটনা ঘটে গেল! আমরা কি এতোটাই ভোগ বিলাসি হয়ে গেছি! অদ্ভুত এই রোগটা আমাদের একেবারে মানবিক মূল্যবোধ এবং মনুষ্যত্বের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। কি করব বুঝে উঠতে পারছি না। এসব ভাবতে গিয়ে মাথাও কাজ করে না। শেষ বয়সে এসে এরকম দুঃসহ সময় পার করতে হবে এটা ভাবতেও পারিনি।

ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছে যে মৃত্যু তাকে আমরা পেছন ফিরে তাকানোর সমস্ত সাহস হারিয়ে ফেলেছি। করোনার এই অদৃশ্য মৃত্যুর ছায়া ঘুরে বেড়াচ্ছে চারিদিকে। নিজের চিন্তা করব, নাকি সন্তানের চিন্তা করব নাকি নাতি-নাতনির চিন্তা করব বুঝে উঠতে পারছি না। স্থবির এবং অবশ একটা মন নিয়ে বসে আছি। এতো অসহায় কখনো হইনি।

করোনার এই অভিঘাত থেকে বাংলাদেশ কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে মনে করেন কী না জানতে চাই এই লেখক বলেন, শুধু বাংলাদেশ কেন সারা পৃথিবীই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন তা দেখে মনে হচ্ছে- এখনো পর্যন্ত আমরা ঠিক পথেই এগুচ্ছি। আমরা তো কোরিয়া, জাপান কিংবা সিঙ্গাপুরও নই এসবের অযথা উদাহরণ টেনেও লাভ নেই। তবে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App