×

মুক্তচিন্তা

বিপর্যস্ত ক্ষুদ্র চিংড়ি চাষিদের সমস্যা নিরসনে বিশেষ সহায়তার জন্য যৌথ আবেদন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ জুন ২০২০, ০৮:৩৫ পিএম

বাংলাদেশে চিংড়ি খাত বিশেষ করে উপক‚লীয় এলাকার ২,৫৮,৬৮১ হেক্টর পুকুর ও ঘেরে চিংড়ি চাষ দেশজ উন্নয়ন, কর্মসংস্থান এবং রপ্তানি আয়যোগ্য পণ্য উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রেখে আসছে। উল্লেখ্য, চিংড়ি উৎপাদনে বাংলাদেশে হ্যাচারিগুলো এবং মাঠপর্যায়ে চিংড়ি চাষিরা তাদের স্ব-স্ব ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে আসছেন। চলমান কোভিড-১৯ মহামারি এবং সাম্প্রতিক আম্ফানের ফলে চিংড়ি খাত যে গুরুতর সমস্যায় নিপতিত হয়েছে তা পর্যালোচনা করার লক্ষ্যে গত ২ জুন বাংলাদেশ শ্রিম্প এন্ড ফিশ ফাউন্ডেশনের (বিএসএফএফ) কার্যনির্বাহী বোর্ডের একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ বোর্ডসভায় অন্যান্য বিষয় ছাড়াও শ্রিম্প হ্যাচারি এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (সেব) ও বাংলাদেশ অ্যাকুয়া প্রোডাক্টস কোম্পানিজ এসোসিয়েশন (বাপকা) থেকে চিংড়ি খাতের সমস্যাবলি সমাধানে সুপারিশকৃত বিষয়াবলিও আলোচনা করা হয়। চলমান কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ঢাকার বাইরে ব্যাংকিং কার্যক্রম স্থবির হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে চিংড়ি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে যায়। দীর্ঘ জাতীয় সাধারণ ছুটির প্রেক্ষাপটে চিংড়ি খাতে হ্যাচারি ও মাঠপর্যায়ের চিংড়ি খামারে প্রকট শ্রমিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় হ্যাচারি ও খামারিরা শ্রমিকদের বেতন দিতে গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। এখনো এ সমস্যা অব্যাহত রয়েছে। চিংড়ি খাতের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ আমদানি ও বিপণন গুরুতরভাবে ব্যাহত হয়েছে। হ্যাচারি মালিক ও মাঠপর্যায়ের চিংড়ি চাষিরা বিশেষ করে ক্ষুদ্র চিংড়ি চাষিরা অর্থাভাবে প্রয়োজনীয় চিংড়ি উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণগুলো ক্রয় করতে পারছেন না। আমদানি স্বল্পতা হেতু আমদানিকৃত উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণগুলোর দামও অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। আমদানি প্রক্রিয়ার জটিলতার জন্যও অনেক ক্ষেত্রে ত্বরিত আমদানিও সম্ভব হচ্ছে না, বিশেষ করে বিকল্প উৎস থেকে এ উপকরণগুলো আমদানি করার প্রয়োজন হলে সমস্যা আরো প্রকট অনুভ‚ত হচ্ছে। কোভিড-১৯ মহামারি ছাড়াও সাম্প্রতিক সাইক্লোন আম্ফানের ফলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চিংড়ি ঘেরগুলো অপূরণীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, প্লাবিত হওয়া ছাড়াও এ ঘেরগুলোর এক বিরাট অংশের পানি সরবরাহের পয়ঃপ্রণালি এবং সুরক্ষা বাঁধ ও খামারের প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো ও ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। খামারিদের নিজেদের পক্ষে এই ক্ষতিপূরণ করা সম্ভবপর নয়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মোট ২,৫৮,৬৮১ হেক্টর চিংড়ি চাষ এলাকায় যেসব চাষি চিংড়ি চাষে লিপ্ত তাদের শতকরা প্রায় ৮৫ ভাগই ক্ষুদ্র চাষি এবং এই ক্ষুদ্র চাষিরাই দেশের চিংড়ির মোট উৎপাদন ও রপ্তানির সিংহভাগ সরবরাহ করে থাকেন। এই ক্ষুদ্র চিংড়ি চাষিদের পক্ষে ব্যাংকিং খাত থেকে প্রচলিত ঋণপ্রাপ্তি সম্ভবপর নয় বিধায় তারা চিংড়ি চাষের প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন চিংড়ি পোনা, খাদ্য ও অন্যান্য উপকরণ বাজার থেকে ক্রয়ের সামর্থ্য নেয়। বর্ণিত অবস্থায় চিংড়ি উৎপাদন ও রপ্তানি পুনরায় সচল করার লক্ষ্যে বিএসএফএফ এক্সিকিউটিভ বোর্ড, সেব ও বাপকা কর্তৃক নিম্নলিখিত সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে সরকারকে ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সনির্বন্ধ আবেদন জানাচ্ছি : ১. ক্ষুদ্র চিংড়ি চাষিদের উৎপাদন চলমান রাখার লক্ষ্যে চিংড়ি পোনা, খাদ্য ও প্রয়োজনীয় উপকরণ ক্রয়ের জন্য ও আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত খামারগুলোর অবকাঠামো নির্মাণের জন্য বিশেষ আর্থিক সহায়তা প্রদান অত্যন্ত জরুরি। ২. চলমান কোভিড মহামারি এবং সাইক্লোন আম্ফানের কারণে যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে ওঠার জন্য এবং হ্যাচারি ও খামার পর্যায়ে সুলভমূল্যে উপকরণপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ খাতে আমদানিকৃত উপকরণগুলো কমপক্ষে আগামী দুই বছরের জন্য বিনাশুল্কে আমদানি করার সুযোগ প্রদানের বিষয়টি সরকার বিবেচনা করতে পারে (আমদানিযোগ্য পণ্যের তালিকা সারণি)। ৩. আমদানি পর্যায়ে সুপারিশকৃত শুল্ক রেয়াতের সুবিধা যাতে প্রকৃত ব্যবহারকারী এবং ক্ষুদ্র চাষিদের কাছে পৌঁছানো হয় সেই লক্ষ্যে মৎস্য অধিদপ্তর, সেব এবং বাপকার সমন্বিত আলোচনাক্রমে আমদানিকৃত উপকরণগুলোর সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করতে পারেন। ৪. বিনাশুল্ক সুবিধার আওতায় আমদানিকৃত পণ্যের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য খামার পর্যায়ে নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সমন্বয়ে একটি মৎস্য উপকরণ বাজারমূল্য পর্যবেক্ষণ কমিটি করার বিষয়টি সরকার বিবেচনা করতে পারে। ৫. চিংড়ি খাদ্যে আমিষের জোগান দেয়া হয় উন্নতমানের ফিশমিল থেকে, কিন্তু চিংড়ি খাদ্য শুল্কায়ন ও ছাড়করণের সময় মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক প্রদত্ত অনাপত্তিপত্রে উল্লিখিত শর্তাদির অতিরিক্ত শর্তাদি যেমন মিট এন্ড বোন মিলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শর্তাদি (যথা উৎস যাচাইয়ে ডিএনএ পরীক্ষা প্রচলন) আরোপ ও তা প্রতিপালনে বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করায় চিংড়িখাদ্য ছাড় করার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হচ্ছে, আমদানিকারকের অনাবশ্যক ব্যয় বৃদ্ধি হচ্ছে, খামারে সময়মতো উপকরণপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না এবং ফলস্বরূপ চিংড়ি/মাছের উৎপাদন ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং উৎপাদন ও রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। ৬. সম্প্রতি সাইক্লোন আম্ফানের কারণে চিংড়ি খামারগুলো প্লাবিত হওয়ার ফলে সৃষ্ট ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত সুরক্ষা বেড়িবাঁধ, পয়ঃপ্রণালি এবং ক্ষতিগ্রস্ত পুকুর/ঘেরগুলোর পুনর্বাসনের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জরুরি ও সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে মৎস্য অধিদপ্তর ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলো এবং জেলা প্রশাসনের স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হচ্ছে। ধন্যবাদান্তে, মোহাম্মদ তারেক সরকার সভাপতি, বাংলাদেশ অ্যাকুয়া প্রোডাক্টস কোম্পানিজ এসোসিয়েশন আশেক উল্লাহ রফিক (সংসদ সদস্য) সভাপতি, শ্রিম্প হ্যাচারি এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ সৈয়দ মাহমুদুল হক চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ শ্রিম্প এন্ড ফিশ ফাউন্ডেশন

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App