×

সারাদেশ

আমফানের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের মানবেতর জীবনযাপন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ জুন ২০২০, ০৯:২৭ পিএম

আমফানের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের মানবেতর জীবনযাপন

দুর্গত মানুষ লোনা পানি মুক্ত হতে দিনরাত বাঁধ মেরামতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন

অতিতের সকল প্রাকৃতিক দূর্যোগকে হার মানিয়ে উপকূলবাসীকে সর্বহারা করে দিয়েছে আমফান। ২০ মে দিবাগত রাতে দক্ষিণ উপকূল জুড়ে আঘাত হানে ঘুর্ণিঝড় আমফান। এর প্রভাবে কপোতক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে, ভাসিয়ে দেয় খুলনার কয়রা উপজেলার ৪টা ইউনিয়ন। উপজেলার উত্তর বেদকাশী, দক্ষিণ বেদকাশী, কয়রা সদর ও মহারাজপুর ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মারাত্মকভাবে। লণ্ডভণ্ড হয়েছে জনপদ। বিধ্বস্ত হয়েছে অর্ধলক্ষাধিক ঘরবাড়ি। এলাকা বাসির সেচ্ছা-শ্রমের মাধ্যমে পর্যায় ক্রমে রিং বাঁধ নির্মাণ করে লোনা পানির হাত থেকে মুক্তি চেষ্টা করেও কপোতাক্ষের হিংস্র থাবা থেকে মুক্তি পায়নি উপকূলবাসী। ৪ ইউনিয়নের পানিবন্দি ২ লক্ষাধিক মানুুষ অনাহার অর্ধাহারে মানবেতর দিনাতিপাত করছে। বিশেষ করে উপজেলা সদর ইউনিয়নের হরিণখোলা ঘাটাখালির বিদ্ধস্ত বাধ দিয়ে কপোতাক্ষের জোয়ারের পানিতে উপজেলা সদরের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট,অফিস-আদালত বাজারসহ সবকিছু পানির নিচে তলিয়ে যায়।নোনা পানির তোড়ে সড়ক গুলির অধিকাংশ স্থানে ১০ থেকে ২০ ফিট পর্যন্ত গভীর হয়েছে। বসতবাড়ি পরিনত হয়েছে ধ্বংসস্তুপে। সরকারি-বেসরকারি ত্রান সামগ্রী বলতে যা দেওয়া হয়েছে তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। তবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ উপজেলা সদর ইউনিয়নের হরিনখোলা ঘাটাখালী, বৃহত্তর ২ নং কয়রা, ১নং কয়রা, গোবরা, মদিনাবাদ, মাঝের আইট, পায়রাতলার আইট গ্রামের দূর্গত মানুষ প্রয়োজনে এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি যেতে হলে সাঁতরানো ছাড়া কোন উপায় নাই। পানির তোড়ে কবর থেকে লাশ উঠে আসছে। স্যানিটেশন ব্যবস্থা একেবারেই নেই। মানুষ যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ করায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। বিশেষ করে মহিলারা রয়েছে চরম বিপাকে। খাবার পানির তীব্র সংকট। সহস্রাধিক নলকূপ অকেজো হয়ে গেছে। ঘরের আসবাবপত্র, গরু ছাগল নিয়ে উঁচু জায়গায় টং করে ও সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছে তারা। সাইক্লোন সেন্টারে আসবাবপত্র গৃহপালিত প্রাণী ও অধিক মানুষের গাদাগাদিতে তাদের জীবন যাপন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। আমফানের পর ১৯ দিন ধরে হাজার হাজার দুর্গত মানুষ লোনা পানি মুক্ত হতে দিনরাত বাধ মেরামতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ১২ সদস্যেরএকটি টিম দুর্গত এলাকায় পৌঁছেছেন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি খুলনার ডেপুটি ইউথচীপ মোস্তাকিম বিল্লাহ মুহিত জানান, তারা আগামী ২/১ দিনের মধ্যে দূর্গত এলাকায় স্যানিটেশন ও ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করবেন। স্থানীয় সাংসদ নৌকা ট্রলার কখনো কখনো পায়ে হেঁটে দুর্গত মানুষের খোঁজখবর নিচ্ছেন, এবং বাঁধের কাজে প্রতিনিয়ত তদারকি করছেন। এ অঞ্চলে টেকসই বাঁধ নির্মাণের ব্যাপারে জানতে চাইলে খুলনা ৬ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আখতারুজ্জামান বাবু ভোরের কাগজকে বলেন, উপকূলীয় এ অঞ্চলে টেকসই বাঁধ নির্মাণে ইতিমধ্যে একনেকে সাড়ে ৩শ কোটি টাকা পাস হয়েছে। আগামী অক্টোবর নভেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শরু হবে যা ২০২৩ সাল নাগাদ শেষ হবে, সুপেয় পানির নিশ্চিতকরণসহ দুর্গত এলাকার সকল রাস্তাঘাট দ্রুত ঠিক করা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App