×

অপরাধ

২৬ বাংলাদেশির ১৪ জনকে পাঠান আকবর-বাদশাহ-সুজন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২০, ০৪:০৪ পিএম

লিবিয়ায় নৃশংস ঘটনার শিকার ১৪ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার আকবর আলী, বাদশাহ মিয়া ও সুজনের মাধ্যমে গেছেন। সাতজনকে আকবর, চারজনকে বাদশাহ মিয়া ও বাকি তিনজনকে পাঠান সুজন। গ্রেপ্তারকৃত তিনজনই বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশি হত্যা ও মানব পাচার ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন। সোমবার (৮ জুন) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডিএমপি মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।

ডিএমপি গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান বাতেন বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গত রবিবার অভিযান চালিয়ে ডিবি উত্তর, পশ্চিম ও পূর্ব বিভাগের একাধিক টিম তাদেরকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন বাদশা মিয়া, জাহাঙ্গীর মিয়া, আকবর আলী, সুজন, নাজমুল হাসান ও লিয়াকত শেখ ওরফে লিপু। সে সময় তাদের কাছ থেকে ৪টি পাসপোর্ট, ২টি মোবাইল ফোন ও টাকার হিসাব সম্মলিত ২টি নোট বুক উদ্ধার করা হয়।

তিনি আরো বলেন, ২৮ মে লিবিয়া ট্র্যাজেডির পরে সার্বিক বিষয়ে ছায়া তদন্ত করে ডিবি পুলিশ।

যেহেতু ভিকটিমদেরকে ভারত, দুবাই, মিশর হয়ে লিবিয়াতে পাচার করার পরিকল্পনা, প্রক্রিয়া করা ও ক্ষেত্রবিশেষে ঢাকা বিমানবন্দরকে ব্যবহার করা হতো সেহেতু মাদারীপুর জেলা, কিশোরগঞ্জ জেলা, পল্টন থানা এবং তেজগাঁও থানায় করা মামলাগুলোর ছায়া তদন্ত করতে থাকি আমারা।

এছাড়া গত ৪ ও ৫ জুন পল্টন থানায় দুটি মামলা করেন বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ থেকে লিবিয়াতে পাচারকৃত ভিকটিমদের আত্মীয়-স্বজন। এ মামলা দুটির দায়িত্ব পেয়ে মূল তদন্ত করতে থাকে ডিবি।

ভিকটিমদের আত্মীয়-স্বজনদের প্রদত্ত তথ্য, গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের প্রদত্ত তথ্য, প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে গত রাতে ঢাকা মহানগরী ও আশপাশের এলাকায় ডিবির একাধিক টিম অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে। এদের মধ্যে নিহত মাদারীপুরের ৭ জনকে বাংলাদেশ থেকে লিবিয়াতে ভাই আমির হোসেনের কাছে পাচার করেছিল গ্রেপ্তার আকবর।

অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, গ্রেপ্তার বাদশা মিয়া গত ১৩ বছর ধরে লিবিয়াতে অবস্থান করছে। সেখানকার বেনগাজী ও জোয়ারা শহরে তার নিজস্ব ক্যাম্প আছে। সমগ্র বাংলাদেশ থেকে তিনি নিয়মিত লিবিয়াতে মানব পাচার করে আসছিলেন, অন্য দালালদেরকেও পাচারকৃত বাংলাদেশিদেরকে তার ক্যাম্পে আটক রাখে। এছাড়াও ইতালীতে সমুদ্রপথে মানুষ পাঠানোর ব্যাবস্থাও করেন তিনি। মাদারীপুরের নিহতদের মধ্যে ৪ জনকে তার ক্যাম্পে আটক রেখে ত্রিপোলীতে পাচার করার এক পর্যায়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। এছাড়াও গ্রেপ্তার জাহাঙ্গির আলম মাদারীপুরের অধিবাসী।

উচ্চশিক্ষিত এ পাচারকারী ঢাকাতে অবস্থান করে নিজস্ব কায়দায় বেনগাজিতে মানব পাচার ছাড়াও স্থানীয় অন্যান্য দালালদের কাছ থেকে প্রাপ্ত পাসপোর্টগুলো স্ক্যান করে সফট কপি দুবাই ও লিবিয়াতে প্রেরণ করে টুরিস্ট ভিসা, অন অ্যারাইভাল মোয়াফাকা সংগ্রহ করে, বেনগাজিস্থ ক্যাম্পে নির্ধারণ করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত সুজন অপরাধ স্বীকার করে জানায় যে ২৮ মে লিবিয়ায় ঘটনাস্থলে ইছার উদ্দিন (২৫), বিজয় (২০) ও মো. সজল (২৬) ছিল এবং তিনজনই তার মাধ্যমে লিবিয়া পৌছায়। মো. সজল (২৬) আহত হয়ে লিবিয়ায় এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে কিন্তু নিখোঁজ মো. বিজয় (২২) ও ইছার উদ্দিনের (২৫) কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।

গ্রেপ্তারকৃতদের পল্টন থানা ও তেজগাঁও থানায় মানব পাচার ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে ।

প্রসঙ্গত গত ২৮ মে লিবিয়ার মিসদাহ উপ-শহরের মরুভ’মিতে ২৬ জন বাংলাদেদেশি গুলি করে হত্যা করা হয়। মারাত্বক ভাবে আহত করা হয় আরো ১১ জনকে। এ ঘটনার পরই পুলিশ প্রধান আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ পহেলা জুন এক ভিডিও কনফারেন্সে সকল ইউনিট প্রধান ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।সেখানে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, কোনো বাংলাদেশিকে এভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে, তার জীবন নিয়ে খেলার দুঃসাহস কোনো মানুষ দেখাতে না পারে। যারা এ কাজ করেছে দেশে ও বিদেশে যেখানেই লুকিয়ে থাকুক না কেনো- এদের প্রত্যেককে খুঁজে বের করা হবে স্বজনদেরকে যারা ভাই বোন পিতা মাতা হারা করেছে তাদের কোনো ক্ষমা নেই। তাদের কান্নার দাগ শুকানোর আগেই, এই অপরাধী চক্রকে খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক আইনী পদক্ষেপ নেয়ার কঠোর নির্দেশ দেন আইজিপি। অত্যন্ত কঠোর নির্দেশে উর্ধতন কর্মকর্তাদের তিনি ইঙ্গিত করে বলেন , এদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার পর আমি দ্বিতীয়বার তোমাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলবো, এর আগে নয়। এরপরেই তাৎক্ষণিকভাবে র‌্যাব, ডিএম‌পি, সিআইডি, পিবিআইসহ বাংলাদেশ পুলিশের মাঠ পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট সকল ইউনিট একযোগে অভিযানে নামে। এরই মধ্যে এ বিষয়ে ৭ জুন পর্যন্ত মোট ২২টি মামলা রুজু করা হয়েছে। এর আগে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে বাংলা‌দেশ পু‌লি‌শের বি‌ভিন্ন ইউ‌নিট।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App