×

মুক্তচিন্তা

যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদ বিদ্বেষ ঘুচবে কবে?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২০, ০৩:২৫ পিএম

যুক্তরাষ্ট্রে শত শত বছর ধরে বর্ণবাদ নামের যে মহামারি চলছে, তা করোনা ভাইরাস মহামারির কাছে যেন কিছুই না; তা যেন আরো ভয়াবহ। কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ যেভাবে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে, তা নতুন কিছু নয়। এর আগেও বহুবার দেশটিতে এমন ঘটনা দেখা গেছে। জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র ১৩ দিন ধরে বিভিন্ন শহরে কারফিউ উপেক্ষা করে চলছে বিক্ষোভ। যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদের গোড়া অনেক গভীরে। শুধু পুলিশি নির্যাতনে তা সীমাবদ্ধ নেই। করোনা ভাইরাস মহামারির সময়ও এ বর্ণবাদ প্রকাশ্যে এসেছে। তার আগেও গায়ের রঙের জন্য হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে অনেক মানুষ। দেশটিতে কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে একটি বাস্তব বৈষম্যের চিত্র এটি। এক গবেষণায় জানা গেছে, ২০১৩ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের হাতে নিহত হয়েছে ৭ হাজার ৬৬৬ জন। এই হতভাগ্যদের মধ্যে আফ্রিকান-আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গই বেশি। যদিও যুক্তরাষ্ট্রে মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৩ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ। দেশটির ৫০টি অঙ্গরাজ্যেই তাদের বসতি রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, আফ্রিকান-আমেরিকানরা সব সময় পুলিশ কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় পর থেকেই তার লাগামহীন কথাবার্তা ও দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ দেশটিতে সাদা-কালোর বৈষম্য প্রকট করে তুলেছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ অর্জিত সুনাম ও ঐতিহ্য অম্লান হতে চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় নৈরাজ্য, লুটপাট ও সহিংস ঘটনা ঘটেছে। কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুও পর বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের এই উত্তাপ শুধু যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ইউরোপের দেশগুলো ও আফ্রিকার উল্লেখযোগ্য শহরগুলোতেও আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশি নিপীড়ন, বৈষম্য ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে চলমান বিক্ষোভকে একটি দীর্ঘমেয়াদি নাগরিক অধিকার আন্দোলনে পরিণত করতে কয়েকদিন ধরেই বলে আসছেন বিভিন্ন সংগঠন ও মানবাধিকারকর্মীরা। তারা যুক্তরাষ্ট্রের বৈষম্যমূলক বিচারব্যবস্থা সংস্কারেরও দাবি তুলেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদী শাসনের অবসান ঘটলেও আজো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদের অবসান ঘটেনি। নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং আকর্ষণীয় রাষ্ট্রনায়কদের একজন, যিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের অবসান ঘটিয়ে বহু বর্ণভিত্তিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। জাতিগত বিদ্বেষ বা বর্ণবাদ তথা বর্ণবৈষম্য এমন এক বিষাক্ত মতবাদ যা যুগে যুগে মানবসভ্যতা এবং মানব-ইতিহাসকে করেছে কলঙ্কিত। আধুনিক যুগও এই কলঙ্কজনক মতবাদের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে রেহাই পায়নি। লজ্জাজনক হলেও এটা এক জ্বলন্ত বাস্তবতা। এই সময়ে এসেও বর্ণবাদ, বৈষম্য কিংবা সহিংসতার দরুন মানুষের প্রাণ ঝরে যাবে, শান্তি বিনষ্ট হবে এটা কোনোভাবেই আশা করি না। ইতোমধ্যে জর্জের হত্যাকারী হিসেবে চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। আমরা আশা করব, এদের বিচারের মধ্য দিয়ে কৃষ্ণাঙ্গদের বঞ্চনার গল্প কিছুটা হলেও লাঘব হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App