×

জাতীয়

করোনাকালে বেড়েছে মাদকের বিকিকিনি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২০, ১০:৫৩ এএম

বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের মধ্যে মাদকের হাতবদল ও বিকিকিনি বেড়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় অন্যান্য অপরাধ প্রায় শূন্যের কোঠায় নামলেও বেড়েছে মাদকের মামলা। মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাও বেড়েছে। এই সময়ে মাদক উদ্ধার ও পাচারকারী গ্রেপ্তারের ঘটনা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইয়াবা ট্যাবলেট, হেরোইন, গাজা ও ফেনসিডিল যেন মিলছে হাত বাড়ালেই। ৩১ মে টেকনাফ বাহারছড়ার জঙ্গল থেকে এক লাখ পিস ইয়াবাসহ এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে র‌্যাব।

এরআগের সপ্তাহে সাভারে কুরিয়ার সার্ভিসে খাদ্যসামগ্রীর আড়ালে আনা দেড় কেজি ওজনের হেরোইনসহ এক দম্পতিকে আটক করেছে র‌্যাব। এমন খবর মিলছে নিত্যদিন। বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ কোভিড-১৯ রোগী শনাক্তের পর ছোঁয়াচে এই রোগের বিস্তার ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে অঘোষিত লকডাউনে ছিল দেশ। এসময় সীমান্ত কার্যত বন্ধ থাকে ৩০ মে পর্যন্ত। অফিস-আদালত-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গণপরিবহন বন্ধ করে এই সময়ে সবাইকে ঘরে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়। তবে ৩১ মে থেকে গণপরিবহণ চলা শুরু করেছে ১২ শর্তে। এর মধ্যে অন্য সব অপরাধ কমে যাওয়ার তথ্যথানা থেকে মিললেও মাদকের ক্ষেত্রে ঘটেছে উল্টো ঘটনা।

র‌্যাবের সদর দপ্তরের পরিচালক (ইন্টেলিজেন্স) সারওয়ার বিন কাশেম বলেছেন, এ বছরের ১ মার্চ থেকে ২৩ মে পর্যন্ত এক হাজার ৫৩৫ জন মাদককারবারি গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসময় উদ্ধার করা হয়েছে ৯ লাখ ৯৩ হাজার ৯১৩টি ইয়াবা বড়ি, ২৩ হাজার ৯৫৬ বোতল ফেনসিডিল, ১০ কেজি হেরোইন। তার আগে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে গ্রেপ্তার করা হয় ৯৮৬ মাদক কারবারিকে। আর উদ্ধার করা হয় ৪ লাখ ২৫ হাজার ৬৪২টি ইয়াবা বড়ি, ১৬ হাজার ৭৩২ বোতল ফেনসিডিল ও ১৪ কেজি ৮৩০ গ্রাম হেরোইন। সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, তুলনা করলে দেখা যায় বছরের প্রথম দুই মাসে যে কয়জন গ্রেপ্তার হয়েছেন, পরের দুই মাসে ছুটির সময়ে অনেক বেশি গ্রেপ্তার হয়েছে। আর উদ্ধার করাও হয়েছে বেশি ইয়াবা বড়ি। এরমধ্যে ১২ জন মাদক কারবারি ‘গুলি বিনিময়ে’ মারা যান। এই র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, এই সময়ে ‘জরুরি খাদ্য উৎপাদন কাজে নিয়োজিত’ স্টিকার সাঁটিয়ে অবৈধ অস্ত্র ও ইয়াবার চালান ঢাকা ও গাজীপুরে পাচারের সময় একটি চক্রের চারজনকে গ্রেপ্তারও করে র‌্যাব। ফাঁকা রাস্তায় মাদক কারবারিরা নানা কৌশল অবলম্বন করে মাদক সরবরাহ করতে চায়। তবে রাস্তা ফাঁকা থাকায় র‌্যাবের চলাচল করতে ও তাদের গ্রেপ্তার করাও সহজ হচ্ছে। তাই গ্রেপ্তারও হচ্ছে বেশি।

এদিকে বিজিবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মার্চ ও এপ্রিল মাসে ৮০ কোটি ২৭ লাখের বেশি টাকার চোরাচালান ও মাদকদ্রব্য জব্দ করে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। এর মধ্যে রয়েছে ১২ লাখ ৪৩ হাজার ৭০৩টি ইয়াবা বড়ি, ৬৩ হাজার ২৬৫ বোতল ফেনসিডিল। বিজিবি সীমান্ত দিয়ে মাদক পাচার ও অন্যান্য চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মার্চ ও মে মাসে ৫২৭ জনকে গ্রেপ্তার করে; জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে এই সংখ্যা ছিল ৫৭৫। সাধারণ ছুটিতে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান আগের মতোই রয়েছে কিনা- জানতে চাইলে বিজিবির টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ ফয়সল হাসান খান বলেন, অভিযান আগেই মতোই চলছে। বেশ কিছু বড় বড় চালানের মধ্যে ধরা হয়েছে। নাফ নদীতে রাতের বেলায় সাঁতার কেটে ইয়াবা আনার চেষ্টায় জড়িতরা আগের মতোই সক্রিয় বলে জানান তিনি। বিজিবি কর্মকর্তা বলেন, সীমান্ত এলাকায় বিভিন্ন মানুষের দেহ তল্লাশি করার ক্ষেত্রে একটু সমস্যা হচ্ছে। কারণ এই সময় নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হয়। তবে বিজিবি সদস্যরাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে তল্লাশি করছে। অন্য অপরাধ কমলেও মাদক কারবারি গ্রেপ্তারের ঘটনা নিয়মিতই ঘটেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন থানার পুলিশ কর্মকর্তারা। ঈদের দিনও মোহাম্মদপুর থানায় মাদকের মামলা হয়েছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, গত তিন মাসে বেশ কয়টি বড় বড় মাদকের চালান ধরা হয়েছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন মহানগরে মাদকের মামলা তেমন পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তবে গ্রামাঞ্চলে বিশেষ করে সীমান্ত জেলাগুলোতে মাদক বেশি পাওয়া যাচ্ছে এবং মামলাও হচ্ছে। এদিকে পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে ২৫ হাজার ৩০৭টি মাদক মামলা হয়েছে। পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক মো. সোহেল রানা বলেছেন, মাদকবিরোধী অভিযান সব সময় চালু রয়েছে। এটা একটি চলমান প্রক্রিয়া।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App