×

সারাদেশ

কবরস্থানে স্বার্থের তালা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২০, ০৫:৫৬ পিএম

কবরস্থানে স্বার্থের তালা

কবরস্থানে তালা

স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে একটি কবরস্থানে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। গত দুদিন ধরে ওই কবরস্থানটিতে তালা ঝুলছে। এ ঘটনায় এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। দৌলতপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের মশাউড়া গোবরগাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। শুক্রবার (৫ জুন) রাতের অন্ধকারে ওই গ্রামে অবস্থিত কবরস্থানের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয় সেখানকার একটি কুচক্রি মহল।

জানা গেছে, গোরস্থান কমিটির সভাপতি স্থানীয় এমজি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওহিদুল হকের পিতা আজাহার আলী নিজের ২ বিঘা জমি দান করে ৪১ বছর আগে কবরস্থানটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি মারা যাওয়ার পরে ২০০৮ সালে ছেলে ওহিদুল হক সভাপতি হন। তিনি সভাপতি হওয়ার পর কবরস্থানটিকে একটি আধুনিক কবরস্থানে রূপান্তর করেন। তার এক ভাই এলজিইডির কর্মকর্তা হওয়ায় তার মাধ্যমে কবরস্থানের পরিবেশ উন্নয়নের জন্য ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ এনে গেট ও ভেতরের রাস্তা তৈরি করেন তিনি।

এলাকাবাসী জানান, গত ২৫ মে ঈদের নামাজ শেষে হঠাৎ করে একটি সাদা কাগজে তাদের কাছ থেকে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়া হয়। এলাকার হামিদুল ইসলাম, জান মাহমুদ মাস্টার ও নাসির উদ্দিন যোগসাজশ করে কবরস্থানের উন্নয়নে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করার কথা বলে তারা এলাকাবাসীর স্বাক্ষর নেন। কিন্তু পরে উন্নয়নের আবেদনের পরিবর্তে সভাপতি ওহিদুল হকের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ বানিয়ে তার অপসারণ দাবি করে ওই গণস্বাক্ষরকে সংযুক্ত করে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে রোববার (৭ জুন) সেই অভিযোগ পাঠানো হয়।

সভাপতির বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করার বিষয়টি আগে জানলে কখনোই স্বাক্ষর করতেন না জানিয়ে এলাকাবাসী জানান, এ পর্যন্ত কবরস্থানের যতো উন্নয়ন হয়েছে এর সব অবদান বর্তমান সভাপতি ওহিদুল হক এবং তার পরিবারের। ওহিদুল হক সভাপতি হওয়ার পরে কোনো অনিয়ম তো দূরের কথা বরং কবরস্থানের উন্নয়নই অব্যাহত রেখেছেন তিনি।

এ বিষয়ে হামিদুল ইসলাম ও নাসির উদ্দিন জানান, এক-দেড়শ গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে মিটিং করে সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। সবার সিদ্ধান্ত মোতাবেক কবরস্থানে তালা লাগানো হয়েছে। একটি মিথ্যা অভিযোগ এনে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে রাতে এভাবে তালা লাগানোর কী প্রয়োজন ছিল- এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তারা।

সভাপতি ওহিদুল হক জানান, গোরস্থানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এখনো ১০ লাখ টাকার ওপরে আছে। এই টাকা নামে মাত্র কাজ দেখিয়ে আত্মসাতের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে অর্থ কমিটি। এ ছাড়া কমিটির অর্থ সম্পাদক বাদল বিশ্বাসের কাছে নগদ সাড়ে ৩ লাখ টাকা রয়েছে। ওই টাকা দিয়ে বাদল তামাকের ব্যবসা করেছেন। সভাপতি বলেন, এতে সম্মত না হওয়ার কারণেই একটি কুচক্রি মহলকে নিয়ে আমার বিরুদ্ধে নানা রকম ষড়যন্ত্র করা হয়। এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তারা মিথ্যা অভিযোগ করার পাশাপাশি কবরস্থানে তালা ঝুলিয়ে দেয়ার অমানবিক কাজটি করেন।

এ বিষয়ে অর্থ সম্পাদক বাদল বিশ্বাস বলেন, সভাপতি ওহিদুল হক আমার কাছে কোনো দিন অনৈতিক কোনো প্রস্তাব রাখেননি। আমি ক্যাশিয়ার হওয়ার পর হিসাব নিকাশেও কোনো গরমিল নাই। তিনি (সভাপতি) একজন ভালো মানুষ। তবে অর্থ কমিটির মাধ্যমে টাকা ব্যয় না হওয়ার কারণে কবরস্থানের কমিটি নিয়ে এ ধরনের ঝামেলা তৈরি হয়েছে। কবরস্থানের টাকা দিয়ে ব্যবসার করার কথা অস্বীকার করে বাদল বিশ্বাস বলেন, আমার কাছে ব্যবসা করার মতো টাকা নাই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার রোববার (৭ জুন) দুপুরে বলেন, একটি কবরস্থান নিয়ে জটিলতার কথা শুনেছি। তবে এখন পর্যন্ত এ সম্পর্কিত কোনো অভিযোগ জমা পড়েনি। অভিযোগ হাতে পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে এলাকাবাসীকে ধোঁকা দিয়ে মিথ্যা অজুহাতে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়ার পর কবরস্থানে তালা লাগিয়ে দেয়ার ঘটনায় এলাকাবাসীর মাঝে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। তারা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App