×

সম্পাদকীয়

শ্রমিক ছাঁটাই কি সমাধানের পথ?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২০, ০৮:২৯ পিএম

করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত দেশের অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ ঘনীভ‚ত হচ্ছে। বিশেষ করে গার্মেন্টস শিল্পে এরই মধ্যে সংকট দেখা দিয়েছে। আমাদের এই শিল্প টিকে আছে ইউরোপ এবং আমেরিকার বাজারের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু সেসব দেশে করোনা ভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণের ফলে বহু পশ্চিমা ক্রেতা বাংলাদেশ থেকে তাদের অর্ডার বাতিল কিংবা স্থগিত করছেন। এ পর্যন্ত প্রায় সোয়া ৩০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ রপ্তানি আদেশ বাতিল বা স্থগিত হয়েছে। এমন অবস্থায় চলতি জুন মাস থেকেই শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। এ ঘোষণার পর শ্রমিকদের মাঝে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা তৈরি হবে এটাই স্বাভাবিক। দেশের গার্মেন্টস খাতে যদি শ্রমিক ছাঁটাই শুরু হয় তাহলে এ খাতের জন্য বড় অশনি সংকেত। দেশের অর্থনীতিতে চরম বিপর্যয় নেমে আসবে। শ্রমিকদের মধ্যেও অসন্তোষ দেখা দিবে। বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, জুন থেকে শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হবে। কারণ শতকরা ৫৫ শতাংশ ক্যাপাসিটিতে ফ্যাক্টরি চলছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে মালিকদের ছাঁটাই ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। এটা সত্য যে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে এখন ইউরোপ-আমেরিকা বিপর্যস্ত প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ এই ভাইরাস সংক্রমণে মারা যাচ্ছে। আক্রান্তের হারও বাড়ছে বেশ অবিশ্বাস্য গতিতে। এমন অবস্থায় সম্ভাব্য অর্থনৈতিক সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে আছে ইউরোপ আর আমেরিকা। স্বভাবতই এটি পুরো বিশ্বের মতো বাংলাদেশকেও প্রভাবিত করছে। সে লক্ষণ এরই মধ্যে বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে শ্রমিক ছাঁটাই ঘোষণার মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮৩ শতাংশ আসে গার্মেন্টস শিল্প থেকে। এই শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খাত। অনেক চড়াই-উৎরাই অতিক্রম করে গত কয়েক দশকের পথপরিক্রমায় দেশের তৈরি পোশাকশিল্প আজকের এ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। অনেক প্রতিক‚লতা এবং দেশি ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প এগিয়ে যাচ্ছে অগ্রগতির পথে। দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করতে পোশাক শিল্পের কোনো বিকল্প নেই। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিদেশ থেকে যে রেমিট্যান্স আসছে তার অন্যতম খাত হলো গার্মেন্টস শিল্প। প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিকের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক অর্থ আয় করছে। যে কোনো দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা নিঃসন্দেহে সে দেশের শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে পোশাক রপ্তানি থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বিজিএমইএ। এই লক্ষ্যমাত্রাকে অনেকে উচ্চাভিলাষী বললেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব ছিল। এই টার্গেট পূরণে এখনো সময় রয়েছে। প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের আন্তরিক ও বাস্তবভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন। করোনা ইস্যুকে কেন্দ্র করে শ্রমিক ছাঁটাই প্রসঙ্গ আসছে- এটি আগে বন্ধ করতে হবে। সরকার, বিজিএমইএসহ শ্রমিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে বসে বিকল্প উপায় বের করতে হবে। বিশেষ করে এ খাতের সরকারের ঘোষিত ৩ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের বাস্তবায়ন দ্রুত শুরু করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App