×

মুক্তচিন্তা

নির্মম বাস্তবতার মুখোমুখি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২০, ০৮:০৫ পিএম

সবই ঠিক ছিল, প্রতিদিন পূর্ব দিগন্তে রক্তিম সূর্যের আভা দেখে পৃথিবীতে প্রাণ সঞ্চার হতো কর্মব্যস্ত মানুষের কর্মচাঞ্চল্যের মধ্য দিয়ে। ১ জানুয়ারিতে নতুন বর্ষকে বরণ করে বিশ্ববাসী প্রণয়ন করেছিল নতুন বর্ষের কর্মপরিকল্পনা। সেদিন হয়তো কেউ স্বপ্নেও চিন্তা করেননি এ বছর তাদের পরিকল্পনায় চলবে না জগৎ-সংসার, আর মাত্র কিছুদিনের মধ্যে আপন কক্ষপথে স্থির হয়ে যাবে পৃথিবী, চার দেয়ালের মাঝে আটকে যাবে তাদের জীবন, ছোট্ট একটি ঘরে বিজলির আলোয় মানুষ হয়তো দিন-রাত্রির পার্থক্যই বুঝতে পারবে না। সেই অসম্ভব কল্পনাই আজ সত্য, ছোট্ট এক অণুজীবের আঘাতে পৃথিবী সাক্ষী হলো এক নির্মম বাস্তবতার! সন্তানের চোখের সামনে হাসপাতাল থেকে দেবদূতের মতো আসা কিছু সেবক পিতার অসুস্থ দেহটিকে নিয়ে চলে যাচ্ছেন, স্বজনরা কেউ তার সঙ্গে যেতে পারছেন না। হাসপাতালে গিয়ে অসুস্থ মানুষটির শরীরে কোনো আপনজনই ভালোবাসার হাতটি রাখতে পারছেন না। কয়েকজন ব্রতী ডাক্তার-নার্স ছাড়া কেউই এসে অসুস্থ মানুষটির খোঁজ নিচ্ছেন না। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় থাকা তার প্রিয়জনরাই হয়তো এখন গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন, নতুবা তাদের মধ্যে কেউই-বা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, এখন তাকেও হয়তো বরণ করতে হবে এই নির্মম অসহায়ত্ব! অতঃপর যদি কেউ মারা যান, তার মৃতদেহটি গ্রহণ করতে কাউকে আসতে দেয়া হয় না। নির্দিষ্ট কবরস্থানে কিংবা সমাধিস্থলের দূরে অবস্থান করতে বলা হয় নিহতের দুয়েকজন পরিজনকে। তারপর নিহত ব্যক্তির দেহটি বিশেষ সুরক্ষার চাদরে মুড়ে আনা হয় সেখানে, কিন্তু কোনো আপনজনেরই অধিকার নেই তাকে শেষবারের মতো স্পর্শ করে দুই ফোঁটা অশ্রু বিসর্জন কিংবা তার ভালোবাসার মানুষটির বদনখানি একটু দেখার। অথচ এই মানুষগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতেই হয়তো ব্যক্তিটি সারাজীবন পরিশ্রম করে গিয়েছেন। তারপর মৃত ব্যক্তির সঙ্গে আসা চির অচেনা আপন মানুষগুলোই তার লাশ কবরে শোয়ায় কিংবা চিতায় উঠায়। এভাবেই শেষ হয় একটি অন্ত্যেষ্টি! ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে মৃত লাশের সারি; বাড়তে থাকে কবর অথবা লাশ পোড়া গন্ধে ভারী হয় পৃথিবীর নির্মল বায়ু। নির্মম বাস্তবতায় লেখা হয় একটি জীবনের শেষ গল্প। অপরদিকে এই স্থবির পৃথিবীতে বেঁচে থাকা মানুষগুলোকে করতে হয় আরেক জীবন সংগ্রাম। বিশেষ করে, দিনমজুর শ্রমজীবী মানুষগুলোকে বরণ করতে হয়েছে এক নির্মম জীবনযুদ্ধ। আয়-রোজগার বন্ধ এই মানুষগুলোর দিনে দু’মুঠো অন্নসংস্থানই এখন জীবনের তাৎপর্য। আজ তাই রুটি মরা এই মানুষগুলো বেঁচে থাকার সংগ্রামে একটু সাহায্যের আশায় শহর কিংবা গঞ্জের রাস্তার দুপাশে কিংবা সড়ক ডিভাইডারের মাঝে অসহায় দৃষ্টি মেলে বসে থাকেন। একদিকে অভাব অন্যদিকে সংকোচ। তবুও মা দুধের বাচ্চাকে কোলে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে একটু সাহায্যের আশায় রাস্তার পাশে বসে আছেন। ক্ষুধার তাড়নায় থাকা এই মানুষগুলোর কাছে রোগ-শোক আজ পরাজিত, তাই তো তারা আবার কাজে ফিরতে চায়, তারা ভরা পেটে শান্তিতে নয়ন মুদিতে চায়। অন্যদিকে গ্রামের কৃষকের মুখের হাসিটুকু আজ শূন্যে মিলিয়ে গিয়েছে। পণ্য বাজারে নিয়ে গিয়ে অশ্রুসজল হয় তার নিষ্কলুষ দুচোখ। তারপর আম্ফান ঝড় তাদের মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা দিয়েছে; আজ নেই তাদের মাথার ওপরের ছাদটুকু, খোলা আকাশের নিচে তারা অপলক চেয়ে থাকে শূন্যে, ওখান থেকেই হয়তো তাদের বাঁচার আশা আসবে। তাদের সোনার ফসলও হয়েছে ভ‚লুণ্ঠিত, বাঁধ ভেঙে প্লাবিত তাদের জীবন, সেখানে নাভিশ্বাস নিচ্ছে স্বপ্ন। এ যেন রূপকথাকেও হার মানানো এক হৃদয় বিদীর্ণ নির্মম বাস্তবতা! লেখক এবং সম্পাদক [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App