×

জাতীয়

ধোঁকা দিয়ে দেশ ছাড়েন মোরশেদ খান দম্পতি!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২০, ০৯:৫১ এএম

ধোঁকা দিয়ে দেশ ছাড়েন মোরশেদ খান দম্পতি!

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান

দেশত্যাগে আদালতের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা আড়াল করে তিন বছর আগের এক আদেশ দেখিয়ে চম্পট ব্যাংক হিসাব জব্দ থাকলেও চার্টার্ড বিমানের ভাড়া পরিশোধ কীভাবে?

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান ও তার স্ত্রী নাসরিন খানের দেশত্যাগে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও লন্ডন গমন নিয়ে তোলপাড় চলছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে ধোঁকা দিয়ে দেশ ছাড়েন এই ধনাঢ্য ব্যবসায়ী রাজনীতিক। দুটি মামলায় নিষেধাজ্ঞার আদেশ আঁড়াল করে অপর এক মামলায় তিন বছর আগের উচ্চ আদালতের পুরনো এক আদেশ দেখিয়ে তারা কীভাবে দেশ ছাড়লেন এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আবার মানিলন্ডারিং মামলার আসামি হওয়ায় এম মোরশেদ খানের সবধরনের ব্যাংক হিসাব জব্দ থাকায় তিনি কীভাবে কোটি টাকায় বিমান চার্টার্ড করলেন, ভাড়া পরিশোধ কীভাবে- সে রহস্যেরও সুরাহা হয়নি। তবে এ নিয়ে সংশ্লিষ্টরা খোলাসা করে কিছু না বলায় নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও মোরশেদ দম্পতি কীভাবে দেশত্যাগ করলেন তা খতিয়ে দেখতে দুদকের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে তদন্তের দাবি করা হয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, অনলাইনে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মোরশেদ খান ও তার নিকট আত্মীয় বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সোহেল এফ রহমান একই সঙ্গে ৬ সিটের পৃথক দুটি বিমান চার্টার্ড করেন জর্জিয়া থেকে। ২৮ মে বৃহস্পতিবার বিমানে উড়াল দেন মোরশেদ খান দম্পতি। পরদিন ২৯ মে শুক্রবার চার্টার্ড বিমানে লন্ডন যান সোহেল এফ রহমান দম্পতি। সোহেল এফ রহমান বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানের বড় ভাই। সালমান এফ রহমান সম্পর্কে এম মোরশেদ খানের বেয়াই। ঢাকা ও লন্ডনের একাধিক সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোরশেদ খানের বিমান চার্টার্ড করতে এক কোটি টাকার উপরে খরচ হয়েছে। তবে ঢাকা থেকে জর্জিয়া গিয়ে সেখান থেকে আরেকটি কানেকটিং ফ্লাইটে লন্ডনে গেছেন। সেখানে তিনি তার এক স্বজনের বাসায় উঠেছেন। সোহেল রহমান উঠেছেন তার মেয়ের বাসায়। দুটি বিমান চার্টার্ডের দুই কোটি টাকারও অধিক পরিমাণ টাকার লেনদেন লন্ডন থেকে তাদের এক নিকট আত্মীয়ের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে হয়েছে বলে জানা গেছে। এজন্য জর্জিয়া থেকে বিমান ঢাকায় আসা এবং যাওয়ার ভাড়াও তাদের মেটাতে হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুল ইসলাম বৃহস্পতিবার বলেছেন, এম মোরশেদ খান ও তার নিকট আত্মীয় বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সোহেল এফ রহমান একসঙ্গে দুটি বিমান চার্টার্ড করেন। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মালয়েশিয়া বেইজ কোম্পানির দুটি বিমান ভারত থেকে তারা চার্টার্ড করেন। প্রতিটি বিমান ছিল ৬ সিটের। যাত্রী ছাড়াও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কেবিন ক্রুরা তাতে বসেন। কত টাকায় কীভাবে বিমান চার্টার্ড করা হয়েছে তা জানা নেই উল্লেখ করে মফিদুল ইসলাম বলেন, একেক এয়ারলাইন্সের ভাড়া একেক রকম। চার্টার্ড করলে আসা যাওয়ার ভাড়া মেটাতে হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা শুধু বিমান উড্ডয়নের অনুমতি দিয়ে থাকেন। এর বেশি কিছু জানেন না।হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক উইং কমান্ডার তৌহিদ-উল-আহসান বলেছেন, তারা কোনো যাত্রীর নাম জানেন না। কোনো এয়ারলাইন্স কখন ছাড়ে তারা সেটা জানেন। সাবেক মন্ত্রী মোরশেদ খান সম্পর্কে তাদের কাছে কোনো ধরনের তথ্য নেই।

এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান দাবি করেছেন, একটি মামলায় ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট উচ্চ আদালত মোরশেদ খানের দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছিল। তবে ২০১৯ সালের ১০ জুন এবি ব্যাংকের ৩৮৩ কোটি টাকা মানিলন্ডারিং মামলা এবং চলতি বছরের ২৬ মে আরেকটি মানিলন্ডারিং মামলায় বিচারিক আদালত তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ২৬ মে ওই মামলার আদেশে মোরশেদ খান, তার স্ত্রী ও পুত্রের দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত। দুদকের এসব মামলার আদেশের বিপরীতে উচ্চ আদালতের কোনো নির্দেশনা নেই। নিষেধাজ্ঞার আদেশের কপি ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে দেয়া আছে। এ অবস্থায় তারা দুজন কীভাবে বিমান চার্টার্ড করে দেশত্যাগ করলেন তা তদন্তের দাবি জানান দুদকের এই আইনজীবী। অন্যদিকে পুলিশের ইমিগ্রেশন শাখার বিশেষ সুপার শাহারিয়ার আলম দাবি করেছেন, মোরশেদ খান ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগের ব্যাপারে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। ছোট একটি বিমান চার্টার্ড করে তারা দুজন লন্ডন গিয়েছেন। এর বেশি তথ্য তার কাছে নেই বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, মোরশেদ খান বাংলাদেশের প্রথম মোবাইল অপারেটর সিটিসেলের অন্যতম মালিক এবং এবি ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকদের মধ্যে একজন ছিলেন। সিটিসেলের নামে এবি ব্যাংক থেকে অনিয়মের মাধ্যমে ৩৮৩ কোটি ২২ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের মামলায় গত বছর ১০ জুন মোরশেদ খানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তার সব ধরনের ব্যাংক হিসাব জব্দ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে তিনি হংকংয়ের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে প্রায় ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৬২ হাজার মার্কিন ডলার এবং ১ কোটি ৩৬ লাখ ৪৫ হাজার হংকং ডলার পাচার করেছেন। কিন্তু এ ঘটনায় ২০১৩ সালে মামলা হলেও নানা আইনি জটিলতায় তদন্তই শেষ করা যায়নি। সবশেষ গত বছর সেপ্টেম্ব^রে হংকং স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক জানায়, ১৫ অক্টোবরের মধ্যে মোরশেদ খান ও তার ছেলে ফয়সাল মোরশেদের ১৬ কোটি টাকা ও প্রায় ১৭ লাখ শেয়ার আর রাখা সম্ভব নয়। গত বছরের ১৮ নভেম্বর বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের হিসাব জব্দ রাখতে বিচারিক আদালতের দেয়া আদেশ বহাল রাখেন। এ ছাড়া দেশের সবকটি ব্যাংকে তাদের হিসাবও জব্দ রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App