×

জাতীয়

আমলাতন্ত্র নির্ভরতা ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২০, ১১:৩৮ এএম

আমলাতন্ত্র নির্ভরতা ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান

আমলাতন্ত্র নির্ভরতা কোনোভাবেই একটি দেশের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনতে পারে না। যদিও আমলাদের ওপর এই নির্ভরতা কতখানি পরিকল্পিত জানি না। করোনাকালে রাজনীতিবিদদের জনবিচ্ছিন্নতা আরো স্পষ্ট হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে কিছু জনপ্রতিনিধি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, এর প্রমাণও পাওয়া গেছে। কিন্তু এর মানে এই নয়, সব রাজনীতিবিদই দুর্নীতিবাজ। মৌলিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী- সবার মতামত নেয়া প্রয়োজন, বললেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। শুক্রবার (৫ জুন) ভোরের কাগজের সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে করোনা সংকটে সুশাসন, জবাবদিহিতা, তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিয়ে কথা বলেন এই বিশ্লেষক। করোনা সংকটে দেশের এই ক্রান্তিকালে জবাবদিহিতাহীন স্বেচ্ছাচারের একের পর এক উদাহরণ সৃষ্টি হচ্ছে। দুর্নীতি প্রতিরোধ ও আইনের শাসনের স্বার্থে এখনই এই প্রবণতার লাগাম টেনে ধরার জোরালো দাবি জানিয়েছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, এই ক্রান্তিকালীন মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে অনিয়ম ও সমন্বয়হীনতা অনেক ক্ষেত্রে প্রশ্ন তুলেছে- যা মোটেই কাম্য নয়। করোনা পরবর্তী সমাজ ও রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমি মনেপ্রাণে চাই, আমার চিন্তাটা ভুল প্রমাণিত হোক। কিন্তু ইতোমধ্যেই সুশাসনের প্রচুর ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। জনপ্রতিনিধি থেকে রাজনীতিবিদ, স্থানীয় পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায়- সর্বত্র সুশাসনের অভাব পরিলক্ষিত। যদিও পৃথিবীর সব জায়গাতেই দুর্যোগে সুশাসনের অবনতি ঘটে। কিন্তু আমাদের দেশে লক্ষণীয়, সরকারের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার প্রবণতা আরো বেড়েছে। তথ্যের নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে। করোনা পরবর্তী সময়ে এসব আরো বাড়বে। গণমাধ্যম যাতে বিনা বাধায় তার ভ‚মিকা পালন করতে পারে সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন টিআইবির নির্বাহী প্রধান। দেশের এই সংকট মুহূর্তেও গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্নভাবে বাধা, হয়রানি ও নির্যাতন চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ বা হয়রানি নয়, বরং দুর্নীতিকে নিয়ন্ত্রণ করুন। কোভিড-১৯ সংকট মোকাবিলায় ত্রাণ বিতরণে জনপ্রতিনিধি ও অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের একাংশের দুর্নীতির সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাংশের সংশ্লিষ্টতার সংবাদ সংগ্রহ ও প্রকাশে গণমাধ্যম কর্মীদের বিভিন্নভাবে বাধা, হয়রানি ও নির্যাতন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যথেচ্ছ অপপ্রয়োগের মাধ্যমে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নিবর্তনমূলক নজরদারি প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা, হুমকি-ধামকির মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত রাখা ও সাংবাদিকদের সেল্ফসেন্সরশিপে বাধ্য করার প্রয়াস চলছে। চলমান দুর্যোগের কার্যকর মোকাবিলার স্বার্থে এ আত্মঘাতী চর্চাগুলো অবিলম্বে বন্ধ করা প্রয়োজন। করোনা মানুষকে জীবন ও জীবিকার মাঝে এক দ্বন্দ্বে ফেলে দিয়েছে মন্তব্য করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিশ্বের অনেক দেশের অভিজ্ঞতা এবং অনেক বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনার সংক্রমণ কার্ভ (রেখা) নিচে নামলেও করোনাকে ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু আমাদের উল্টো হচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের মানুষ নিয়মকানুন মেনে চলবে, এটা অস্বাভাবিক মনে হচ্ছিল। কিন্তু একটা সময় দেখা গেল, মানুষ নিয়ম মানতে শুরু করেছে। কিন্তু যখনই মানুষের মধ্যে নিয়ম মেনে চলার প্রবণতা তৈরি হলো তখন আবার সব খুলে দেয়া হলো। এটি অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। এ ছাড়া মাঝে ভুলবার্তার কারণে সমস্যার সৃষ্টি হলো। পোশাক খাত চালু-বন্ধ রাখা নিয়ে নাটক করা হলো। একদিকে জীবন, অন্যদিকে জীবিকা। জীবিকাকে প্রাধান্য দেয়া হলো। সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন টিআইবির নির্বাহী প্রধান। ১০ মার্চ থেকে হোম অফিস করছেন তিনি। তবে বেড়েছে কাজের ব্যস্ততা। বললেন, করোনাকালে সবার মতোই ঝুঁকির মধ্যে আছি। তবে পুরোপুরি সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছি। ব্যক্তিগত ও পারিবারিকভাবে সুরক্ষায় থাকার চেষ্টা করছি। ২২ মার্চ থেকে পুরো অফিসই হোম অফিস করছে। আপাতত জনগণকে সম্পৃক্ত করার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। শুধু সুশাসন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিয়ে কার্যক্রম চলছে। তিনি বলেন, এটি কাজের মোক্ষম সময়। আমারও ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। স্বাভাবিক সময়ে অফিসে যেটুকু সময় দিতে হয় এখন তার চেয়ে অনেক বেশি সময় দিতে হচ্ছে। পড়াশোনা, গবেষণা, অফিসের কাজে সময় দ্রুত চলে যাচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App