×

জাতীয়

লকডাউনে ঈদযাত্রায় মৃত্যুর মিছিল বিরল ঘটনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২০, ০৫:৪৭ পিএম

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে কার্যত লকডাউনের সময় গণপরিবহন বন্ধ থাকা অবস্থায় বিদায়ী পবিত্র ঈদুল ফিতরে যাতায়াতে দেশের সড়ক-মহাসড়কে ১৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬৮ জন নিহত এবং ২৮৩ জন আহত হয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে মোট ১৫৬টি দুর্ঘটনায় ১৮৫ জন নিহত ও ২৮৩ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। দেশের ইতিহাসে যা বিরল বলে মন্তব্য করেছে সংগঠনটি।

শুক্রবার (৫ জুন) সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ঈদের আগে-পরে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন-২০২০ প্রকাশকালে এই তথ্য তুলে ধরেন।

সংগঠনটির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল প্রতিবেদনটি তৈরি করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবছর ঈদ কেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশংকাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সংগঠনটি ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানীর বিষয়টি দীর্ঘদিন যাবত পর্যবেক্ষণ করে আসছে।

বিশ্বব্যাপী মহামারী নোভেল করোনাভাইরাসের কারণে এবছর গণপরিহন বন্ধ থাকায় ঈদযাত্রা ব্যাক্তিগত পরিবহনে সীমিত থাকলেও ঈদের আগে-পরে সড়ক দুর্ঘটনা ছিল অতীতের তুলনায় বেশী। বিগত ১৯ জুন থেকে ৩১ জুন পর্যন্ত বিগত ১৩ দিনে ১৪৯ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬৮ জন নিহত ২৮৩ জন আহত হয়েছে। উল্লেখিত সময়ে রেলপথে ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষে ১ টি ঘটনায় কোন হতাহত হয়নি। একই সময়ে নৌ-পথে ৬ টি ছোট-বড় বিচ্ছিন্ন দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত ও ৪৫ জন নিখোঁজের খবর পাওয়া গেছে।

এই সময় সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৫ মে, এইদিনে ২০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত ও ৪৮ জন আহত হয়। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয় ২৪ মে, এইদিনে ৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত ও ২ আহত হয়। এই সময় একদিনে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত হয় গত ১৯ মে এইদিনে ১৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত ৫৪ জন আহত হয়।

এইসময় একদিনে সর্বোচ্চ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে ঈদের দিন ২৫ মে, এই দিনে ১৬ টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত ও ২৪ জন আহত হয়।

এই সময় সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ৪৫ জন চালক, ৩৩ জন নারী, ২৮ জন পথচারী, ২৭ জন পরিবহন শ্রমিক, ২৪ জন শিশু, ১৯ জন শিক্ষার্থী, ৫ জন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ৩ জন শিক্ষক, ৩ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ০৩ জন সাংবাদিক এবং ১ জন প্রকৌশলীর পরিচয় মিলেছে।

এর মধ্যে নিহত হয়েছে ৩ জন পুলিশ সদস্য, ১৮ জন নারী, ১২ জন শিশু, ১৪ জন শিক্ষার্থী, ৩ জন শিক্ষক, ৩২ জন চালক, ৭জন পরিবহন শ্রমিক, ১ জন প্রকৌশলী এবং ৩ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ছিল।

এই সময়ে এক ঘটনায় অধিক প্রাণহানির ঘটনার মধ্যে উল্লেখ্য, গাইবান্ধার পলাশবাড়িতে যাত্রীবাহী ট্রাক খাদে পরে ১৩ জন নিহত ও ১০ জন আহত হয়। সিরাজগঞ্জ সদরেও যাত্রীবাহী ট্রাক উল্টে ৪ জন নিহত ও ৭ জন আহত হয়। রাজধানীর কল্যাণপুরে কার-অটোরিক্সা-কার ত্রিমুখী সংঘর্ষে ৪ জন নিহত ও ১২ জন আহত হয়। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যরা বহুল প্রচারিত ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় দৈনিক, আঞ্চলিক দৈনিক ও অনলাইন দৈনিক এ প্রকাশিত সংবাদ মনিটরিং করে এ প্রতিবেদন তৈরি করে।

সংগঠিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট যানবাহনের ৩৫.৭৪ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২৮.৯৮ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-লরি, ১২.০৭ শতাংশ কার-মাইক্রো-জিপ, ৮.২১ শতাংশ অটোরিক্সা, ৭.৭২ শতাংশ ব্যাটারী রিক্সা-ইজিবাইক-ভ্যান-সাইকেল, ৬.২৮ শতাংশ নছিমন-করিমন-ট্রাক্টর-লেগুনা-মাহিন্দ্রা ও ০.৯৭ শতাংশ বাস এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।

সংগঠিত দুর্ঘটনার ২৪.১৬ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৩৮.২৫ শতাংশ পথচারীকে গাড়ী চাপা দেয়ার ঘটনা, ২৭.৫১ শতাংশ নিয়ন্ত্রন হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনায়, ৯.৪০ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারনে ও ০.৬৮ শতাংশ রেল-যানবাহন সংঘর্ষ দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে।

এই সময় দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩০.২০ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৪৭.৬৫ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ১৮.১২ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়। এছাড়াও সারাদেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ২.৬৮ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ০.৬৭ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ০.৬৭ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়।

প্রতিবেদন প্রকাশকালে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সাধারণ ছুটি বা লকডাউনে দেশে গণপরিবহন বন্ধ ছিল, ৯০ শতাংশ যাত্রীর যাতায়াত বন্ধ থাকলেও সেই তুলনায় এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে। এখন ব্যক্তিগত যানবাহনের চালকদের প্রশিক্ষণ প্রদানের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া জরুরী হয়ে পড়েছে। ছোট যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ও গণপরিবহনকে বিকশিত করা এখন সময়ের দাবীতে পরিণত হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনাকেও মহামারীর মতো গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবী জানাচ্ছি।

এসময় উপস্থিত ছিলেন বুয়েটের সহকারি অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ, ড্রাইভার্স ট্রেনিং সেন্টারের চেয়ারম্যান নুর নবী শিমু, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি, তাওহীদুল হক লিটন, যাত্রী কল্যাণ সমিতির যুগ্ম মহাসচিব এম মনিরুল হক, পাথওয়ের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ শাহিন, যাত্রী কল্যাণ সমিতির আমজাদ হোসেন, মোস্তানসিরুল হক চৌধুরী, জিয়া প্রমুখ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App