×

অর্থনীতি

দুর্দিনে পাশে না দাঁড়ালে কীসের শিল্পপতি?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২০, ০৬:৫৬ পিএম

দুর্দিনে পাশে না দাঁড়ালে কীসের শিল্পপতি?

অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ড. রুবানা হক জুন থেকে শ্রমিক ছাটাইয়ের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তার এমন আশঙ্কার মন্তব্যে দেশের বিভিন্ন মহলে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস)-এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। শিল্প মালিকদের প্রতি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেছেন, এমন দুর্দিনে শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াতে না পারলে তারা কিসের শক্তিশালী শিল্পপতি?

শুক্রবার (৫ জুন) তিনি তার ফেসবুক পেইজে বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি তার স্ট্যাটাসে তুলে ধরেন-

‘আমি জানতাম তৈরি পোশাক খাত এদেশের অর্থনীতির বড় শক্তি। আর সে খাতের উদ্যোক্তারা দেশের অর্থনীতির বড় ভরসার জায়গা। অথচ করোনা ভাইরাসের প্রভাবজনিত অর্থনৈতিক স্থবিরতা শুরু হতে না হতেই প্রথম সাহায্যের জন্য হাত পেতেছে অর্থনীতির এই শক্তিশালী খেলোয়াড়রাই। অর্ডার নাই এই অসহায়ত্ব দেখিয়ে শ্রমিকের বেতন দেয়ার জন্য সরকারের নিকট থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা মাত্র ২% service charge- এ পেয়ে তারপর ফ্যাক্টরি খোলার তোড়জোর শুরু হলো। এর মাঝে শ্রমিকদের নিয়ে নির্মম অনেক নাটক দেখেছে আমার মতো বোকা দর্শক।

গত ২৬ এপ্রিল থেকে আবার চলছে ফ্যাক্টরি। পোশাক কারখানার বেশিরভাগ শ্রমিক কাজ করে ৪ থেকে ৭নং গ্রেডে। ফলে গড়ে একজন শ্রমিকের মূল বেতন দাঁড়ায় মাসে ৮,৯০০ টাকার মতো। সরকারের প্রণোদনা পাওয়ার পরেও অনেক ফ্যাক্টরি ঠিকমতো বেতন দেয়নি, আবার ঘোষণা দিয়ে এপ্রিল মাসের বেতন ৬০% দেয়া হয়েছে। এখন বিজিএমইএ সভাপতি বলছেন জুন মাস থেকে শ্রমিক ছাঁটাই শুরু হবে, মালিকদের নাকি কিছুই করার নাই (সূত্র: ঢাকা ট্রিবিউন পত্রিকা)।

অর্থাৎ, মাত্র ২% সুদে শ্রমিকদের বেতন দেয়ার জন্য যতোটুকু অর্থ পাওয়া গেছে তা দেয়ার পর, এক পয়সাও নিজের পকেট থেকে খরচ করতে চান না তারা। এখন এই দুর্দিনে শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াতে না পারলে কিসের শক্তিশালী শিল্পপতি? অর্ডার যদি অর্ধেকও হয়ে যায় তারপরও এতো বছর ব্যবসা-বাণিজ্য করে শ্রমিকের কয়েক মাসের বেতন চালানোর মতো ক্ষমতা কি তৈরি হয়নি? না হয় নিজের সঞ্চয় থেকে কিছু খরচ হলো।

বিভিন্ন সময় যখনই নিম্নতম মজুরি বেড়েছে, বাড়িয়ে দেয়া দেয়া হয়েছে দৈনিক পোশাক তৈরির টার্গেট। শ্রমিকের ওপরে পড়েছে বাড়তি চাপ। শ্রমিক তার শরীরের সঞ্চিত শক্তি দিয়ে বাড়িয়েছে মালিকের লাভ আর সঞ্চয়। এখন না হয় কটা মাস কম অর্ডারের কাজ শ্রমিকরা একটু হেসে খেলে করলেন, একটু স্বস্তিতে কাজ করলেন। শ্রমিকদের কয়েক মাসের জন্য এইটুকু স্বস্তি দেয়ার ক্ষমতাও কি মালিকদের নেই? জাতির এই দুর্দিনে শ্রমিকদের পাশে যদি শিল্পপতিরা না দাঁড়ান তবে আমাদের জনগণের টাকায় কেন দেব ক্যাশ সাবসিডি, প্রণোদনা কিংবা রপ্তানি উন্নয়ন ফান্ডের টাকা? উন্নয়ন কার জন্য, যদি দুর্দিনে আপনারা কোনো কাজে না লাগলেন?’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App